মাংস কেনা হলো না আমার!

, যুক্তিতর্ক

আনিসুর বুলবুল | 2023-08-30 11:10:33

মাংসের দোকানে ঝুলিয়ে রাখা শিনার একটি পিস দেখিয়ে বলি, আমাকে এখান থেকে দুই কেজি মাংস দেন। দোকানদার পরিচিত, তিনি শিনার পিসটি ওজন দিয়ে বলেন, স্যার তিন কেজির মতো আছে পুরোটাই নিয়ে যান। বলি, দিয়ে দেন।

ঢাকা ক্যান্ট গার্লস পাবলিক স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরছি। ফেরার পথে মেয়ের রং-পেন্সিল ও কিছু সবজি কেনার জন্য মাটিকাটা বাজারে ঢোকা। ঢুকতেই মেয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, বাবা গরুর মাংস নাও। বাবার মতো মেয়েরও পছন্দ গরুর মাংস। শুধু গরুর মাংস নয়, বাবার মতো ইলিশ - চিংড়িও মেয়ের পছন্দ। বাবার পুরোটাই কপি হচ্ছে দিন দিন!

দোকানদারের মাংস কাটা শেষ। মাপ দিয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে বলেন, স্যার নেন। সাড়ে তিন কেজির একটু বেশি হইছে। আমি মাংসের ব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করি। বলি, কতো দেবো? দোকানদার বলেন, আড়াই হাজার হইছে। আপনি দুই হাজার চারশো টাকা দেন। আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, এতো টাকা? কতো টাকা কেজি? দোকান দার বলেন, আজকে সাতশো টাকা।

গরুর মাংসের দাম যে এতো বেড়েছে ভাবতেও পারিনি। আমার ধারণা ছিলো পাঁচশো কিংবা ছয়শো টাকা কেজি হবে হয়তো! আমার মানি ব্যাগে এতো টাকা নেই। মেয়ের রং-পেন্সিল ও কিছু সবজিও নিতে হবে। দোকানদারকে বলি, এক কেজি দেন ভাই। দোকানদার নাছোরবান্দা। বলেন, টাকা পরে দিয়েন। নিয়ে যান।

এখন নিলে তো পরে আবার টাকা দিতেই হবে। মাস শেষে যে টাকা বেতন পাই। তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়া দিতে। বাকি টাকা থেকে নেট বিল, ডিশ বিল, নিজের যাতায়াত, মেয়ের স্কুলের টিউশন ফি, প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে যা থাকে তা থেকে মাসের বাজার সদাই করতেই শেষ হয়ে যায়।

বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও এই দোকান থেকেই ২৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনেছি। এখন সেই মাংস কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।

৭০০ টাকা রাজধানীর রিকশাচালক কিংবা হকারদের দুই দিনের আয়ের সমান। গরুর মাংস অনেক আগেই তাদের নাগালছাড়া হয়েছে।

আজকে নাগালছাড়া হতে হচ্ছে সীমিত আয়ের এই আমাকে। মাংস নিতে না পারায় মেয়ের সামনে লজ্জায় পড়ে যাই। সাত-পাঁচ বুঝ দিয়ে রং-পেন্সিল আর সবজি কিনে বাসার দিকে হাটা দিই।

বাজারের যে অব্স্থা সীমিত আয়ের পরিবারগুলোরও এখন আর নিত্যদিন গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। অনেক পরিবারে এখন গরুর মাংস কেনা হয় কেবল অতিথি এলে। ভবিষ্যতে হয়তো অতিথি এলেও তাদের পক্ষে গরুর মাংস কেনা কঠিন হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর মাংসের এখনকার দাম তো কমবেই না, বরং বাড়তে পারে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে গরুর মাংসের জাতীয় গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৫৯ টাকা। পরের দুই বছর তা কেজিপ্রতি ২৬৩ ও ২৭০ টাকা ছিল। দাম লাফ দেয় ২০১৫ সালে, ওই বছর গড় দাম দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ৩৪৪ টাকায়। এর পর আর কমেনি শুধু বেড়েই চলছে।

অথচ দেশে প্রতিবছর বাড়ছে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়ার উৎপাদন। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় চার লাখ পশু উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার গরু। চাহিদার তুলনায় মাংস উদ্বৃত্ত ১০ লাখ মেট্রিক টন। তার পরও গরুর মাংসের দাম বাড়ছে।

(কয়েক বছর আগের লেখাটিতে সামসময়িক দরটি শুধু বসিয়ে দেওয়া হয়েছে!)

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

এ সম্পর্কিত আরও খবর