প্রসঙ্গ নির্বাচন: প্রার্থীদের কাছে ১৬ কোটি ভোক্তার খোলা চিঠি

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

এস এম নাজের হোসাইন | 2023-08-28 18:37:33

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের অংশগ্রহণের ঘোষণায় সাধারণ জনগনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা  প্রচার-প্রচারণায় বেশ মনোযোগী। ভোটারদের দরজায় দরজায় ভোট প্রার্থনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকল প্রার্থীরা জনগণের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নির্বাচনী অঙ্গীকারনামা বা মেনোফেস্টো প্রণয়নের কাজ চলছে।

এ অবস্থায় দেশের ১৬টি কোটি অসহায় ভোক্তাদের দাবি তুলে ধরার জন্য আমার এ প্রয়াস। আশা করছি সম্মানিত প্রার্থী ও তাদের নীতি নির্ধারকরা আমাদের মনবেদনার কথাগুলো শুনবেন এবং তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে আমাদের কথাগুলোর প্রতিফলন ঘটাবেন।

এটা সবাই স্বীকার করে থাকেন যে, দেশের ১৬ কোটি মানুষই ভোক্তা। যারা ব্যবসায়ী, সেবা প্রদানকারী তারা একটি পণ্য বা সেবার জন্য সরবরাহকারী হলেও অন্য সব পণ্য বা সেবার গ্রাহক। তারপরও ভোক্তা হিসেবে সাধারণ জনগণের কোনো অধিকার ক্ষুণ্ন, প্রতারিত বা হয়ারনির সম্মুখীন হলে বা তাদের মন-বেদনা জানানোর সুযোগ নেই।

যদিও বর্তমান সরকার ভোক্তা সংরক্ষন আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছেন। আশার কথা সরকারের এ ধরনের অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও অনেকগুলোরই কার্যকারিতা নেই। যেমন, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১। যা অদ্যবদি আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি এই আইনের বিধিমালাও প্রণীত হয়নি। আইনটি কোন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।

একজন নাগরিক হিসেবে প্রতিনিয়ত আমরা যে সমস্যাগুলিরসম্মুখীন হই তা হলো ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য, পণ্য, শাক-শবজি, ফলমুল, মাছ, মাংশ ইত্যাদির অভাব। সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ণ করেছে। আইনে স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা বলা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে সবত্রই যেন ভেজালের স্বর্গ রাজ্য। জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের যেভাবে নজরদারি করা দরকার ছিল তা পুরোপুরি অনুপস্থিত। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় স্যানিটারী ইন্সেপেক্টদের নগরীর খাদ্য-পণ্যের দোকানগুলি পরিদর্শন করার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে তা হচ্ছে না। এমনকি পশু জবাই করার পূর্বে ভেটেরিনারি সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার বিধান থাকলেও কোনো বাজারে তা দেখা যায় না। হয়তো ভেটেরিনারি সার্জন আছে কি না সেটাই বড় প্রশ্ন?

অন্যদিকে নগরীর বাজারগুলি নোংরা, অস্বাস্থ্যকর ও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। যার কারণে রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে হরদম। বাজারের স্লাটার হাউজগুলির পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতা একেবারেই নেই বললেই চলে। এছাড়াও যত্রতত্র ফুটপাত ও রাস্তায় খাবারের দোকান, হোটেলগুলি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার বিক্রি না করে খাদ্যের নামে বিষ বিক্রি করছে। যার কারণে নানা মারাত্মক রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েই চলেছে।

নগর জীবনে একটি বড় সমস্যা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারী করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। জেলা প্রশাসন ও সিটিকর্পোরেশন অনেক সময় নিরব থাকেন।

জেলা  ও উপজেলা পর্যায়ে বাজারগুলিতে নজরদারির পরিমাণ খুবই নগণ্য। স্থানীয় সরকারগুলির ধারণা দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ। সেকারণে বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের তদারকি করতে তারা আগ্রহী নয়। ফলে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাই বাজারগুলিতে নিয়মিত ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার দর মনিটরিং, বাজারে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা, আইন শৃংখলা রক্ষায় জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারগুলি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে বাজার কমিটি, সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর, পুলিশ, চেম্বার, ক্যাব প্রতিনিধি, সাংবাদিক প্রতিনিধি সমন্বয়ে বাজার ভিত্তিক মনিটরিং কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণরকাজ হলো ময়লা আবর্জনা অপসরাণ ও পরিস্কার পরিছন্ন রাখা। কিন্তু এটি কোনো সময় যথাযথভাবে হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। কারণ পুরো নগরকে অনেক সময় মনে হয় ডাস্টবিনের মতো। সকালে রাস্তার পার্শ্বের ডাস্টবিনগুলির ময়লা পরিস্কারের বিধান থাকলেও অনেক সময় দুপুর গড়িয়ে তা সন্ধ্যাও হয়ে যায়। আর ময়লার গন্ধে রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চলা-ফেরা করাও কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে নগরীতে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলির সমন্বয়হীনতার কারণে এক একটি সংস্থা এক একবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলা-বালির যন্ত্রণায় ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখনও পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশনগুলির সক্ষমতা অর্জিত হয়নি। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নালা থেকে বর্জ্যগুলি তুলে রাস্তায় স্তুপ করে রাখে। আর একটি পক্ষ এসে এগুলো অপসারণ করতে অনেক সময় নিয়ে থাকে। ফলে ময়লাগুলি যেখান থেকে উত্তোলন করা হয় সেখানেই পুনরায় চলে যায়।

জলাবদ্ধতা শহর এলাকার জন্য একটি বৃহৎ সমস্যা হিসাবে আর্বিভুত হয়েছে। নালা নর্দমাগুলি ঠিকমতো পরিস্কার না করা ও অবৈধভাবে দখল হয়ে যাবার কারণে পানি নিস্কাষণের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে যায়। নালার উপর দোকান, অবৈধ স্থাপনা, নালা-নর্দমগুলি ঠিকমতো পরিস্কার না করার কারণে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা জলজট রূপে পরিণত হয়। আবার নগরীতে বাড়ী ঘর তৈরীতে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ না রেখে বাড়ি  তৈরি অনুমোদনও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে যানজট এখন মানবসৃষ্ঠ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে বিরোধী দলের ডাকা হরতালেও ভয়াবহ যানজট সৃষ্ঠি হচ্ছে। যানজটের জন্য যত্র তত্র পাকিং, গণপরিবহনের সংখ্যা কম, গণপরিবহনগুলির অব্যবস্থাপনা, নগরে যাত্রী পরিবহণে ট্রেনের অনুপস্থিতি, আবাসিক ও বানিজ্যিক ভবনগুলিতে পার্কি সুবিধা না থাকা, লক্কর যক্কর বাস ও গণপরিবহন গুলির আধুনিকায়ন না হওয়া, ট্রাফিক বিভাগে সমম্বয় না থাকা, পর্যাপ্ত বাস স্ট্যান্ড না থাকা অন্যতম। যার কারনে সাধারন নাগরিকদের কোটি কোটি শ্রম ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে।

নগর জীবনে বাড়িভাড়া মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠির জীবন যাপনে একটি বড় সমস্যা। কিন্তু বাড়ির মালিকরা তাদের ইচ্ছা মতো বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ জনগণের জীবন যাপনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন থাকলেও কোনো বাড়ির মালিক এই আইন মানতে নারাজ। সরকার বা সিটি কর্পোরেশন এই আইন প্রয়োগেও তেমন আগ্রহী নয়। যার কারণে বাড়ি ভাড়া নগর জীবনে আর একটি বিড়ম্বনার নাম।

মানুষ গ্রাম থেকে শহুরমুখী হয় দুটি কারণে একটি কর্মসংস্থান অন্যটি শিক্ষা। চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করলেও নগরে খাদ্য পণ্য ভেজালের মতো ব্যাঙের ছাড়ার মতো গজিয়ে উঠছে নানা প্রকারের সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান, যাদের অধিকাংশেই বানিজ্যিক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতারণার সাথে জড়িত। এ জন্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনলায়ের নজরদারির অনুপস্থিতির কারণে এ ভোগান্তির মাত্রা দিনকে দিনে বাড়ছে। তাই এখানে সরকার আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে। আবার নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গুনগত মান নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসনকে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মানসস্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।

দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলির বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নৈরাজ্য। সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী বাড়ি, দোকান ও স্থাপনার মালিকদের বিশাল অংকের হোল্ডিং ট্যাক্সের নোটিশ দিয়ে পরবর্তীতে তাদের সাথে আপোশ রফার প্রস্তাব দেন। যার কারণে বিশাল অংকের নোটিশ প্রদান করা হলেও সিটি কর্পোরেশনের কাছে ট্যাক্সের টাকা না গিয়ে এর সিংগ ভাগই রাজস্ব বিভাগের কিছু কর্মকর্তার পকেটে চলে যাচ্ছে। যার কারনে রাজস্ব বিভাগের প্রতিটি চাকুরীই লোভনীয় হয়ে আছে। এ অবস্থায় নগরীর সকল বাড়ী, স্থাপনার তালিকা হালনাগাদ ও ডাটাবেস করা, ভোগান্তি নিরসনে ত্রিপাক্ষিক গণশুনানীর আয়োজন করা যেতে পারে।

পৃথিবীর সবকটি নগরীতে যথেষ্ঠ পায়ে হাটার পথ যা ওয়াকওয়ে থাকলেও বাংলাদেশে তার বিপরীত। সকাল বিকাল বা প্রয়োজনে নাগরিকরা যদি হাটতে পারে তাহলে ডায়াবেটিসসহ নানারোগ থেকে বাঁচা সহজ হতো। আমাদের ফুটপাতগুলি হকারসদের দখলে, যদি কোনো অংশ খালি থাকে তাহলে সেটা রিকসা, ট্যাক্সির স্ট্যান্ড হিসাবে ব্যববহার করা হচ্ছে অথবা দোকান দিয়ে দখল হয়ে আছে। রাস্তা বা মার্কেটগুলির সামনে এভাবে হকার্সদের বসিয়ে পুরো নগরীর সৌন্দয্য বিগ্নিত হচ্ছে। মেয়র ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য হকাসদের উচ্ছেদ, রিকসা বা গ্যারেজ উচ্চেদে আগ্রহী নয়। আর এ সুযোগে একটি মহল দৈনিক চাঁদা আদায়ের বিশাল ফাঁদ তৈরী করে থাকেন। যার কারনে ফুটপাতে জনগনের হাঁটা অকল্পনীয়। ফুটপাত ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের টাকা উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ারে পরিনত হচ্ছে। যা নগরীর সুস্থ, সুন্দর পরিবেশকে বিনষ্ঠ করলেও কেউ সেখানে ভ্রুক্ষেপ করছে না।

আর একটি বড় সমস্যা হলো নগরীতে সেবাদানকারী সংস্থায় ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নাই। আমাদের দেশে আমরা প্রায়শ লক্ষ্য করে থাকি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আদলে সেবা সংস্থাগুলিতে ভোক্তা প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত হয়ে থাকে। সরকারি সেবাদানকারী সংস্থা বিশেষ করে গ্যাস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, রাজউক, সিডিএ, রেল, বিআরটিএ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সংস্থাগুলিতে মনোনিত প্রতিনিধি গ্রাহক স্বার্থ বা জনস্বার্থ রক্ষার চেয়ে নিজের আখের গোছানোই মুখ্য হয়ে উঠে। কারণ এ সমস্ত সেবা সংস্থা গুলোতে বোর্ড মেম্বার, চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেতে কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে বলে বাজারে প্রচলিত আছে। আবার ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নিতে বা পোস্টিং পেতেও বিশাল অংকের টাকা গুনতে হচ্ছে। যা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। যার কারনেই যারাই চাকুরীতে যোগদেন বা ব্যবস্থাপনা বোর্ডে নিয়োগ পান তারা প্রথমে এসেই লগ্নিকৃত অর্থ সুদে আসলে উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠে। যার খেসারত দিতে হয় সাধারন ভোক্তাদের।

দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আর একটি জটিল সমস্যা হলো শাসন ব্যবস্থায় সমাজের সকল শ্রেনী ও পেশার প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নাই। যদিও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মালিক সকল জনগণ বলা হলেও বর্তমানে শাসন ব্যবস্থায় সমাজের সকল পর্যায়ের নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত। শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধি নির্বাচন বা ভোট দেয়া ছাড়া আর কোনো ভুমিকা নেই। যদিও ইতিপূর্বে সে ভোটাধিকারও ছিল না। এখন ভোট নেবার পর জনপ্রতিনিধিরা আর জনগণের তোয়াক্কা করে না। কথায় কথায় তারা বলেন আমরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত। এটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। এ জন্য সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক চর্চা আবশ্যক। এই সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়টি রাজনীতিতে অনুপস্থিতির কারণে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম, অবজ্ঞা ও সমাজের সকল শ্রেণি  পেশার মানুষের মতামত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনায়। যেখানে অনেকগুলি খাতে শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই নীতি নির্ধারণ করে থাকেন, আবার অনেক জায়গায় সরকারি কর্মকর্তা ও ঐ সেক্টরের ব্যবসায়ীরা মিলে নীতি নির্ধারণ করে থাকেন। অথচ এখানে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বা যাদের জন্য এই সেবা সার্ভিস তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। তবে অনেক জায়গায় এসমস্ত পদগুলিও সমাজের উপরতলার লোকজন দখল করে নেন। নীতিনির্ধরক মহল চিন্তাও করে না, যার জন্য এই সেবা বা বিধান তাদের কোনো মতামতের প্রতিফলন দরকার আছে কি না। বৃটিশ আমলের ঘুনে ধরা আমলাতন্ত্রের সংস্কার বৃটিশরা করতে পারলেও বাংলাদেশ তা এখনো পারে নি। যার কারণে সেবাদানকারী সংস্থা ও নাগরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিটিতে এখনও সেই বৃটিশদের নির্দেশিত পথেই হাটছে। যার কারণে ভোক্তা ও নাগরিক সংশ্লিষ্ট কমিটি ও সেবাদানকারী সংস্থায় এখনও সত্যিকারের ভোক্তা প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়নি। যদিও কোনো জায়গায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে সেখানে সভাপতি কর্তৃক মনোনিত বলে আরো খাটো করা হচ্ছে।

 

তাই এখন সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করার। বিশেষ করে সরকারি সেবাদানকারী সংস্থাগুলির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক জবাবদিহিতাকে নাগরিক তদারকি ও পরীবিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। নাগরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়োজিত জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নাগরিক সংগঠনগুলিকে সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি নাগরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কমিটি ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দান এবং এ সমস্ত নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্দি করতে হবে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাড়িভাড়া, হোর্ল্ডিং ট্যাক্স, গণপরিবহন, নগর ব্যবস্থাপনা, শিল্প ও বানিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে নাগরিক ভোগান্তি নিরসনে গ্রাহক, সেবাদানকারী সংস্থা ও ভোক্তা প্রতিনিধি, প্রশাসনের সমন্বয়ে ত্রিপাক্ষিক গণশুনাণীর ব্যবস্থা করার সুস্পষ্ঠ নির্বাচনী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দানকারীকে জয়যুক্ত করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এস এম নাজের হোসাইন: ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর