বন্যা: সিলেট-সুনামগঞ্জকে বাঁচান

, যুক্তিতর্ক

কবির য়াহমদ | 2023-08-31 16:25:28

 

ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেট। অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত সিলেট ও সুনামগঞ্জ। একদিকে চলছে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীগুলোতে বাড়ছে পানি। ইতোমধ্যেই সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। কেবল প্রাণ বাঁচাতে সবকিছু ছেড়ে ঘর ছাড়ছেন মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছে, কতখানি স্থান সঙ্কুলান হবে ওখানে এ শঙ্কাও বাড়ছে ক্রমশ।

পানিবন্দি মানুষদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়তে পারছেন না, আবার তাদের বেশিরভাগই ঘরেও থাকতে পারছেন না। ভয়ঙ্কর অবস্থা। ভয়াবহ মানবিক এক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর জন্যে। অনিশ্চয়তা বাড়ছে ক্রমশ যখন সরকারি তরফে এখনও নেই উল্লেখের মতো সহায়তা, উদ্ধার তৎপরতা।

অনেকের ধারণা ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা পরিস্থিতি অনেক জায়গায় ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালের পর এবারের দ্বিতীয় দফা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সিলেট নগরের একাধিক এলাকা এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার প্লাবিত হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের একাধিক এলাকা ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। জেলা দুটির নব্বই শতাংশ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। এই কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ‘কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করেছে। যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে এটা চলমান থাকলে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে পারে। কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করলে এই গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে।’ এই গ্রিড যদি বন্ধ হয় তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নব্বই শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে।

জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমগুলোতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির খবর তেমন একটা চোখে পড়ছে না। কেন্দ্র থেকে প্রান্তের যে দূরত্ব ও প্রান্তকে অবমূল্যায়ন এর মাধ্যমেই প্রকাশিত হতে বসেছে ফের। জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে বন্যার তথ্য গুরুত্ব না পেলে সরকার যেমন তৎপর হয় না, তেমনি দেশবাসীও জানতে পারে না প্রকৃত অবস্থা। আশ্চর্য এই নীরবতা অমানবিক বটে! প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর এই অবস্থার বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতির যে তথ্য আসছে তা ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

আগামী রোববার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার যে পরিস্থিতি তাতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবে? কেবল সিলেটেরই বিভিন্ন পর্যায়ের তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। সুনামগঞ্জের অবস্থাও একই। সিলেট যখন ভাসছে বানের জলে তখন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, ‘বন্যার পানিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের নয়টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। বন্যার এই চিত্র আমরা বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’ এদিকে, রাত পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। মানুষ প্রাণ বাঁচাবে, নাকি পরীক্ষা দেবে?

আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস তাতে সহসা বৃষ্টি থামছে না। ফলে কী অবস্থা হতে যাচ্ছে তা কেউ অনুমান করতে পারছে না। এমন অবস্থায় বন্যা দুর্গত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবি করি। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে প্রশাসনের সর্বাত্মক উদ্যোগের দাবি করি। উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা এখনই শুরু করা না হলে এই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর