'এমন করুণ অবস্থার মুখোমুখি কখনো হয়নি সিলেটের মানুষ'

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ | 2023-08-30 15:52:31

'ছবিটি আমার বাসার চারপাশের', সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে পাঠালেন লিটল ম্যাগাজিন 'বুনন' সম্পাদক, অধ্যাপক খালেদ উদ-দীন। বললেন, 'সিলেটে ভয়াবহ বন্যা। বিভাগের বেশিরভাগ অঞ্চল প্লাবিত। অসহায় মানুষের যেন কোথাও ঠাঁই নেই! এমন করুণ অবস্থার মুখোমুখি কখনও হয়নি সিলেট অঞ্চলের মানুষ। জীবন বাচানোই দায়।'

শুক্রবার (১৭ জুন) চিরাচরিত নিয়মে জুমার নামাজ আর ছুটি কাটানোর দিনে সিলেট থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ। মানুষের হাহাকার। বিপন্নতার ধ্বনি। বিলাপের বুকফাটা শব্দ।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সিলেটে হু হু করে পানি বাড়ছে। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকার টিনের চালের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। পুরো শহর জলমগ্ন। আস্ত একটি জনপদ এখন জলবন্দি।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে, সিলেটের আট উপজেলায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সাত ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা। শুক্রবার দুপুর থেকে তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ছাতক, দিরাই, দোয়ারাবাজারে সেনা সদস্যরা পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।

এর আগে, সিলেটের ১৭ পদাতিক ডিভিশনের হেডকোয়ার্টারে ব্রিফিং করেন ডিভিশন প্রধান মেজর জেনারেল হামিদুল হক। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রথমে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালাবে। এরপর খাদ্য সহায়তা দেবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হবে। পাশাপাশি কুমারগাঁও বিদ্যুৎ স্টেশন, সুনামগঞ্জের খাদ্য গুদামগুলো কীভাবে বন্যা থেকে রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে মাঠে থাকা সেনা সদস্যরা কাজ করবেন।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেটবাসী। খাদ্য সরবরাহ ও আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রায়-বিচ্ছিন্ন। বাজারে সরবরাহ অপ্রতুল। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাঁড়ানর জায়গাও নেই কোথাও কোথাও। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো অতি জরুরি বিষয়গুলোও হুমকির মুখে।

মিডিয়া ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে সিলেটের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির খবর। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা।

ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেও জেনেছি, পরিস্থিতি চরম অবনতিশীল। কারো কারো কণ্ঠে আতঙ্ক, এই বুঝি ঘরে পানি চলে এলো। ঘরের খাবারও ফুরিয়ে আসছে। চাপা হাহাকার বাড়ছে সিলেটে বন্যার ক্রমবর্ধমান পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

এমনিতেই বৃহত্তর সিলেট বন্যা উপদ্রুত এলাকা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ পাশের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার মতোই হাওর অধ্যুষিত। হাওরের অপরিকল্পিত নির্মাণ আর নানা অব্যবস্থার ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি বহনের ক্ষেত্র কমেছে। পানির সেই তোড়ে এখন খোদ সিলেট শহর ভাসছে।

প্রতিবছরই আশেপাশে বন্যা হলেও সিলেট শহর ছিল মোটামুটিভাবে বিপদমুক্ত। কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সিলেট শহরের প্রায়-পুরোটায় পানি নিচে তলিয়ে গেছে। প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছে, শহর ভাসিয়ে ঘরে ঘরে পানি চলে আসার বিপদ আগে কখনোই আসে নি সিলেটে। এমন চরম বিপদে পুরো শহর ও নাগরিকগণ আক্রান্ত ও বিপন্ন।

বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এমন বন্যা অকস্মাৎ চলে যাবে বলে মনে হয় না। পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হবে বলেই সবার আশঙ্কা। ফলে অতিদ্রুত সর্বোচ্চ শক্তিতে ত্রাণ, পুনর্বাসন ও উদ্ধার চালিয়ে যাওয়া জরুরি। আরো জরুরি বন্যার কারণ খুঁজে বের করে স্থায়ী নিরাপত্তা বিধানের জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নের পথে অগ্রসর হওয়া।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর