ঈদ যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়

, যুক্তিতর্ক

মাহমুদ আহমদ | 2023-09-01 05:24:34

ইতোমধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ ছুটছেন। প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে নাড়ির টানে যেতে পারিনি আপনজনদের সাথে ঈদ কাটাতে। ঈদ মানেই আনন্দ আর এই আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন পরিবারের সবাই একত্রে মিলিত হয়ে উদযাপন করার সুযোগ মেলে। এই আনন্দ আপনার আমার সবার ক্ষেত্রেই।

জীবিকার প্রয়োজনে ইট-কাঠের শহরে আবাস গড়লেও আমাদের সবার মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও অর্থাৎ নিজ গ্রামে। যেখানে রয়েছে মানুষের নাড়ির টান। বাড়ি বহুদূর হলেও ঈদের মধ্যে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হতে চায় সবাই। খুশিকে আরো পরিপূর্ণ করতে এবং আপনজনকে দেখার আকাঙ্খা মেটাতে পথের কষ্ট নিয়ে ভাবে না কেউ। যেভাবেই হোক ঈদে বাড়ি পেঁৗছানো চাই!

ঈদের আগে টিকিট পাওয়াটা যেন সোনার হরিণ পাওয়া। অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রেও দেখা যায় এক মিনিটের মধ্যেই যেন সব টিকিটি গায়েব হয়ে যায়। স্টেশনে সারারাত অপেক্ষা করে টিকিট সংগ্রহের যে কষ্ট তা আপনজনের সাথে মিলিত হতে পেরে ক্ষণিকের মধ্যেই সেই কষ্টের কথা মানুষ ভুলে যায়।

ঈদের সময় টিকিট না পাওয়ার অভিজ্ঞতা মনে হয় সবারই কমবেশি রয়েছে। বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে টিকিট কালোবাজারিরা স্টেশন কেন্দ্রিক বেপরোয়া হয়ে উঠে। যাত্রীদের কাজ থেকে আদায় করে নেয় অতিরিক্ত অর্থ। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, প্রতিটি জেলায় রেলের টিকিটের ক্ষেত্রে কালোবাজারি চক্র সব সময় সক্রিয় থাকে, এদের হাত থেকে সাধারণ জনগণ কি কখনও মুক্তি পাবে না?

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছি। আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি। এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছি বলে আমরা গর্ববোধ করি। খুব কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখি দেশের সুনামকে নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রমহল সক্রিয় থাকে। আমরা কি আমাদের বুকের রক্ত এজন্যই বিলিয়ে দিয়েছিলাম যেন এসব কালোবাজারি আর অসৎ চক্রের হাতে জিম্মি থাকি? না, এটা কোন ভাবেই চলতে দেয়া যেতে পারে না। এসব অসৎ চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের সবার ঐক্যই পারে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সব ধরণের অসৎ চক্রের হাত থেকে মুক্ত করতে।

আমাদের পার্শ্ববতীর্ দেশ ভারতে বেশ কয়েকবার ভ্রমণ ও চিকিৎসা সেবার জন্য যাওয়া সুযোগ হয়। সে দেশে রেলে ভ্রমণ সত্যিই যে আনন্দদায়ক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কয়েক মাস পূর্বেই রেলের টিকিট অগ্রিম করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক ভ্রমণকারীর নাম, সিট নম্বর, বয়স সব কিছুই টিকেটে উল্লেখ থাকে, শুধু তাই নয় স্টেশনে এবং যেই বগিতে আপনার সিট সেই বগির বাইরেও নামের তালিকা ঝুলানো থাকে। টিকিট ছাড়া যাত্রিরা ভ্রমণ করছেন এ বিষয়টি কখনই আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। এছাড়া টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারিদের কোন সুযোগ নেই বললেই চলে, কেননা প্রত্যেকটি টিকেটে পরিচয় উল্লেখ থাকে।

বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত, এত বড় দেশ, তারা যদি তাদের টিকিটকে কালোবাজারিদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারছি না। বিভিন্ন সময় টিকিট কালোবাজারিদের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয় কিন্তু তাদের দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তির সংবাদ আমরা পাইনা। ঈদ যাত্রা আনন্দময় করতে হলে টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। যারা ঈদ করতে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন তারা যখন আবার কর্মস্থলে ফিরে আসবেন তখন দেখা যাবে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে কালোবাজারিদের কাছ থেকে। এদের হাত থেকে কি সাধারণ মানুষ কোন দিনই মুক্তি পাবেনা?

তবে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, আমাদের বর্তমান রেলপথমন্ত্রী রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে তিনি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন বলে আমার ধারনা। কেননা একটি কথা তিনি বরাবরই বলে থাকেন যে, ‘মানুষ যেন স্বস্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারে, সেটিই আমার মূল লক্ষ্য।’ এ লক্ষ্যে তিনি কাজও করে যাচ্ছেন।

আমরা রেলওয়ের কতৃর্পক্ষের সবিনয় দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাই, রেলের টিকিট কালোবাজারিদের হাত থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করুন, যাতে দেশের মানুষ শান্তিতে রেল ভ্রমণ করতে পারে এবং স্বস্তির সাথে বিভিন্ন উৎসবগুলো উপভোগ করতে পারে।

অনেক সময় তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথেঘাটেই যেন কোন দুর্ঘটনায় পড়তে না হয় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ঈদ যাত্রা হোক সবার নিরাপদ ও আনন্দময়।

সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার অগ্রিম শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর