অরিত্রির পক্ষ ও অরিত্রির বিপক্ষ

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:47:50

অন্যসব ঘটনার মতো ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনায় আমরা বাঙালি অতি দ্রুতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। একপক্ষ শিক্ষকদের মুণ্ডুপাত করছেন। আরেকপক্ষ শিক্ষার্থীদের মুণ্ডুপাত করছেন। এমনও দেখেছি এক অভিভাবক বলেছেন, তাদের দেয়া টাকায় শিক্ষকের সংসার চলে । অতএব, শিক্ষক কেন তার সন্তানকে শাসাবেন ?

অন্য যে অংশটি নকলের অভিযোগে ছাত্রীর মুণ্ডুপাত করছে সে অংশটি অপেক্ষাকৃত কমবয়সী এবং পরলোকগত অরিত্রির স্কুলে সিনিয়র বোন। ফেসবুক আছে বলে  আমরা বিচিত্র মানুষের সহস্র চিন্তার বৈচিত্র দেখতে পাচ্ছি।

একজন ছাত্রী নকল করবে এটা অসাধারণ ঘটনা নয়। নকল করা একটি ভুল আচরণ।  এটা যত্নে বোঝাতে হবে। একজন মানুষ যদি জন্ম থেকেই সকল নীতি নৈতিকতা শিখে আসতো তবে স্কুল কেন? স্কুলের কাজ হচ্ছে একজন শিশুর ভুল আচরণ থেকে উন্নত আচরণে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু স্কুল সংশোধনাগার নয়। কিছু শিক্ষক এটা বোঝে, কিছুজন বোঝেনা।

বলছি না, ভিকারুননিসার নূন স্কুলে অভিযুক্ত শিক্ষকগণ কেউ চেয়েছেন অরিত্রি মরে যাক। কিন্তু তাদের আচরণ অশুদ্ধ ও অপরিমিত ছিল। দীর্ঘ চাকরিজনিত ক্লান্তি থেকে কেউ অসংগত আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলেন? অভিভাবকগণ তাদের সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ।

শিক্ষকদের চাকরিজনিত অবসাদ নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রে কোন গবেষণা হয় না। আমার মনে হয় প্রতিবছর বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে শিক্ষকদের বিষয়ে মতামত চাওয়া উচিৎ। তাদের ভালো, মন্দ, সুখের কিংবা ভীতির অভিজ্ঞতাগুলো জানা দরকার। তারাই মূল্যায়ন করুক তাদের শিক্ষক।

অরিত্রিরা সেই সুযোগ পেলে হয়তো স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পারতো কোন শিক্ষককে একটু হাওয়া বদলের সুযোগ দেয়া উচিত।

একটি নির্বাক ভিডিও এসেছে গণমাধ্যমে। অরিত্রির মা এবং বাবা স্কুল প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলছেন। ভিডিওর শেষদিকে মনে হলো তারা বেরিয়ে যেতে গিয়েও বের হচ্ছেন না। তারা বারবার ফিরে আসছেন। প্রিন্সিপাল কী বলছিলেন বোঝা যাচ্ছিল না। অনুমান করাও ঠিক হবে না। তবে অরিত্রির বাবা যে বারবার ফিরে আসছিলেন এবং দাঁড়িয়েছিলেন একটা আকুতি ধরা পড়ছিল।

ছোট্ট মেয়েটি ভীষণ আহত হয়েছে। তার জন্য মা-বাবা অসম্মানিত হয়েছেন। সব শিশুর নিকট  বাবা-মা অত্যন্ত সম্মানের। অরিত্রি মনোপীড়ার থেকে আত্মহনন এর পথ বেছে নেয়। একটি শিশুর মানসিক চাপ নেয়ার ক্ষমতা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বোঝেন নি। সন্তানের সামনে অভিভাবকের সাথে আন্তরিক আচরণ করেন নি । এই কজনের দোষে অনেকে শিক্ষকদের ঢালাও গালমন্দ করছেন।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি আছে কিন্তু কিছু শিক্ষক এবং স্কুল অনেক উন্নত মন ধারণ করেন ! তাদের মানসিকতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিলে দেশের পুরো ব্যবস্থাই পাল্টে যায়!

সম্প্রতি এক ভদ্র লোক একটি গল্প বললেন। তার বাচ্চার স্কুল থেকে ডেকে পাঠিয়ে বলা হয়েছে বাচ্চাকে বকাঝকা না করতে। তাঁর বাচ্চাকে ক্লাসে পড়া শিখতে বলা হলে বাচ্চা উত্তর দিয়েছিল, "মিস, আমি শিখতে পারবো না"।

মিস জিজ্ঞেস করল, কেন পারবেনা?

- আমার মাথায় বুদ্ধি কম।

- কে বলেছে বুদ্ধি কম?

- আম্মু বলেছে বুদ্ধি কম!

ওর মা প্রায় এ কথায় সে কথায় বলেন, মাথায় এত কম বুদ্ধি হলে হবে? শিশুটি বিশ্বাস করতে শুরু করেছে তার বুদ্ধি কম।

স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ালেখা দূরে রেখে তার বুদ্ধি পর্যাপ্ত আছে তা বোঝাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল।  শিক্ষক তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে প্রতিদিন নানা কর্মকাণ্ড করছেন। 

এটাই তো শিক্ষকতা!

# মনোয়ার রুবেল

ইমেইল: monowarrubel@gmail.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর