ত্রাণ বিক্রির টাকায় রোহিঙ্গারা অপকর্মে জড়াচ্ছে

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

আলম শাইন | 2023-08-31 18:12:33

মিয়ানমার সামরিক জান্তা কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে গত এক বছরে দফায় দফায় প্রায় দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে (সংখ্যাটা কম বেশি হতে পারে)। তার আগেও চারধাপে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। প্রথমদিকে আসে ১৭৮৪ সালে। তখন রাজা ‘বোদাওপায়া’ আরাকান দখলে নিয়ে রাজধানী গঠন করে। দ্বিতীয়বার অনুপ্রবেশ করে জাপান কতৃর্ক বার্মা (মিয়ানমার) দখল হলে। তৃতীয় ধাপ আসে ১৯৭৮ সালে। তখন প্রায় ২ লাখের বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে (জেনারেল নে উইন অপারেশন কিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নথিবদ্ধ করার প্রাক্কালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে)। চতুর্থবার আসে ১৯৯১-৯২ সালে। তখন দ্য ষ্টেট ল’অ্যান্ড অর্ডার রেজিষ্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএলওআরসি) উত্তর রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সন্ত্রাসী দমনের উদ্যোগ নিয়ে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে দিলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এভাবে অনুপ্রবেশের ফলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় পনের লাখের উপরে। এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা। প্রথমত, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নিধন যজ্ঞের মহড়ার ফলে। দ্বিতীয়ত, অনিয়ন্ত্রিত জন্মহার। তৃতীয়ত, বাংলাদেশি দালাল এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্রচেষ্টায় পুশইনের মাধ্যমে প্রবেশ করানোর ফলে।

রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে নিজ দেশে নির্যাতিত হওয়ার ফলে প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যা করণীয় তা তিনি করেছেন। নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সামর্থ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন। কোনো ধরনের গাফিলতি করেননি এ পর্যন্ত। দেশ-বিদেশে প্রশংসিত ও হয়েছেন যার ফলে। কিন্তু রোহিঙ্গারা সেই মর্যদা দিতে ভুলে গেছে বোধহয়। ভুলে গেছে তারা নিজ দেশে নির্যাতিত;পরবাসীও। নিজেদেরকে রিফিউজি হিসেবে ভাবতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। বিষয়টা মাথায় নিতে পারছে না হয়তো তারা। অনুধাবন করতে পারলে হয়তোসংযত হতে পারত। প্রাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করে ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম লিখানোর চেষ্টা করতো না।

উল্লেখ্য রিফিউজি নিবন্ধন ভূক্তরা ভোটার তালিকায় স্থান না পাওয়ার কারণে স্বার্থান্বেষী মহলের ইঙ্গিতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্নগ্রামে বসবাস করছে। পরে সুযোগ বুঝে ভোটার তালিকায় নাম উঠানোর চেষ্টা করছে। এ ধরনের তথ্যচিত্রের খবর একবার আমরা প্রথম জানতেপারি ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে। সেই সময় পাবর্ত্য এলাকায় ১২টি উপজেলায় পালিয়ে বেড়ানো রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে ২০০৯ সালে তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় কমিশন। এতে করে প্রায় ৪৮ হাজার ৬৭৩ জন রোহিঙ্গাভোটার তালিকায় স্থান পাওয়ার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন নির্বাচন কমিশন। সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর এদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদও দেয় নির্বাচন কমিশন।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা শুধু বাংলাদেশের ভোটার হয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, তারা ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সেসব দেশে গিয়ে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে ধরা পড়ে বাংলাদেশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। উল্লেখ্য রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের কূট-কায়দা অবলম্বন করে এ দেশের পাসপোর্ট হাতিয়ে নিচ্ছে। এদেরকে সাহায্য করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই। অথচ দেশের একজন প্রকৃত নাগরিককে পাসপোর্ট পেতে হলে অনেক ধরনের কাঠখড়ি পোহাতে হচ্ছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নিতে গিয়ে নিরীহ জনসাধারণকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র দালালের শরণাপন্ন হলে এ ধরনের ঝুট ঝামেলা থেকে মুক্তি মেলে।

রোহিঙ্গারা শুধু ভোটার তালিকায় নাম উঠিয়ে কিংবা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশপাড়ি জমিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। তারা রীতিমতো এখন দেশের জন্য ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপদে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।জীবন-জীবিকার তাগিদে এরা বিভিন্ন এনজিও কিংবা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করছে। জড়িয়ে যাচ্ছে ডাকাতি, ছিনতাই, জালটাকাতৈরি, অবৈধ অস্ত্রবহন, বনজ সম্পদ লুটপাট, নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি বিক্রিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে। এ ছাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের কর্তৃত্ব নিয়েনিজেদের ভেতর সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এসব যারা করছে তাদের হিম্মতকে বাহাবা দিয়ে আশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় কিছু লোকেরা। এর মাধ্যমে ওদেরকে পরবর্তীতে যে কোনো কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। অপরদিকে নেতাগোছের রোহিঙ্গারা নিজেদের ক্যাম্পে যেমনি প্রভাব খাটাচ্ছে তেমনি ক্যাম্পের বাইরে এসেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এতসব অপকর্ম করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে শরণার্থী শিবিরে নাম রেজিষ্ট্রি করার বদৌলতে।যে সুবাদে পাচ্ছে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রীও। যা বিক্রি করে মোটের ওপর আনন্দে দিন কাটাচ্ছে তারা। টাকা পয়সা জমিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়িদিচ্ছে।

এ ছাড়াও ভূয়া আইডি কার্ড, রেশন কার্ড, নাগরিকত্ব সনদ বানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধোকা দিচ্ছে। মাস দুয়েক আগে এ ধরনের একটি সংবাদ খবরের কাগজের শিরোনামও হয়েছে, যা আমাদের নজর কেড়েছে। ফলে, এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সক্রিয় ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

আলম শাইন : কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর