প্রিয় বাংলাদেশ আর আমার ভাবনা

, যুক্তিতর্ক

শরীফুল আলম, নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | 2023-08-31 13:22:31

প্রায় চার বৎসর পর খুব সংক্ষিপ্ত সফর শেষে বাংলাদেশ ঘুরে এলাম। বাংলাদেশে যে আসলেই দৃশ্যমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। বাংলাদেশকে এখন ডেভেলপমেন্ট মডেলও বলা যেতে পারে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, ডিজিটাল ভিলেজ , রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র , পেনশন ভাতা, আশ্রায়ন প্রকল্প এসবি এখন দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প। বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ী অমত্যসেন সম্ভবত তাই তিনি বলেছেন "কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মত সাফল্য বাংলাদেশের আছে"।

বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় সাফল্যে আমি সত্যি বিস্মিত হয়েছি। ভূমি সংক্রান্ত আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজ থাকায় এই সেক্টরে ভূমির মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান কম্পিউটারাজেশান, ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ জমির খারিজ, পর্চা, খাজনা  এই সব কার্যক্রম অনলাইন হওয়ায় এই সেক্টর দুর্নীতি মুক্ত হবে বলেই বিশ্বাস ।

অতি সংক্ষিপ্ত সফরে অনেকগুলো জেলায় আমি তাঁদের আমন্ত্রণে কিম্বা আমার ব্যক্তিগত কাজে আমাকে যেতে হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদী ঠিক আগের মতই আছে। এই জেলার হোমিওপ্যাথিক কলেজটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সংগ্রহশালা, যাদুঘর, সিলভার প্যালেস, রাম গোপালপুর জমিদার বাড়ী, বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। এই জেলার কুমির খামার, গারো পাহাড় দেখার আমার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু সময়াভাবে তা দেখা হয়ে উঠেনি। জেলার জামতলায় এক খালাম্মার আথিতেয়তায় আমি পুরোপুরি মুগ্ধ হয়েছি। চৈতির আন্তরিকতার কোন কমতি ছিলনা। শহরের খুব কাছাকাছি পনঘাগড়া চরখাই গিয়েছি। এখানে নির্মিত বিনোদনের একমাত্র পার্ক যা মির্জা পার্ক (প্রিয়কুঞ্জ ) নামেই খ্যাত।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক , জাতিস্বত্বার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা সাথে আমি

অবকাঠামোগত তেমন কিছুই চোখে পড়ার মত নয়, তবে এর কলেবর আরো বাড়ানোর সুযোগ এখানে রয়েছে। যত্রছত্র ময়লা, মাত্রা অতিরিক্ত প্রবেশ মুল্যের সাথে সেবার মান খুবই নগণ্য বলে মনে হয়েছে। 

নরসিংদী জেলার বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতি যাদুঘর দেখেছি, গিরিশ চন্দ্র সেনের ভিটা, জমিদার লক্ষণ সাহার বাড়ী, শাহ ইরানি মাজার আমার খুব ভাল লেগেছে।

ঢাকার খুব কাছের জেলা মানিকগঞ্জ, সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য দেখতে হলে এই জেলায় আপনাকে আসতেই হবে। ঝিটকার খেজুরের রস (এখন সিজন নয় বলে খেতে পারিনি), তালের রস, আখের রস জগত বিখ্যাত, না খেলে আপনি মিস করবেন। গালায় পুলিশ অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ সাহেবের বাংলোয় যে দুঘণ্টা ছিলাম মনে হয়েছে বেহেস্তখানা, কি নেই এখানে? এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি সকল প্রকার আধুনিক সুব্যবস্থা তৈরী করে রেখেছেন। এই অঞ্চলের মধু অনন্য গুনে সুসাধু। হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা খুবই দৃষ্টিনন্দন একটি জায়গা।

হ্যাঁ যা বলছিলাম সংক্ষিপ্ত সফরে এবারের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে।

কিছু সাংষ্কৃতিক বিচ্ছুরণ বাদে সব কিছুই আমার কাছে মনে হয়েছে দেশ এখন  রাইট ট্রেকেই চলছে। সমাজ বিকাশে প্রগতি খুব দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার বাংলাদেশে হচ্ছে। সেই সাথে কিছু দুবৃত্তায়নও হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষাথিদের ব্যাকুলতা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে জীবিকাকেন্দ্রিক শিক্ষাই এর জন্য দায়ী। চিকিৎসা বিদ্যা কিম্বা প্রকৌশল বিদ্যায় যারা চাঞ্জ পাচ্ছেননা তাঁরাই কম্পিউটার সাইন্স এবং এম , বি , এর পিছনে ছুটছেন। পেশাজীবীদের মধ্যে এক ধরণের অসহিষ্ণুতা  এবং অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়।

অনেক গুলো এজেন্ডার মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতিস্বত্তার কবি আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষের সাথে দেখা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পড়াশুনা করার পরেও বাংলার প্রতি তাঁর বিস্ময় জ্ঞানে আমার মত অনেকেই বিস্মিত হবেন। দরিয়া পাড়ের (কক্সবাজার) এই মানুষটি অনেক দেশী/বিদেশি আন্তর্জাতিক পুরুস্কারে সিক্ত হয়েছেন, তিনি পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক। তাঁর সাথে দীর্ঘদিন পর আমার দেখা হওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ  তাঁর কাছে।

কুমিল্লায় আমার বাপের আদিবাড়ী। এখানেও এসেছি এবার। কুমিল্লার বাটিক কাপড়ের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা এখনো তাঁরা ধরে রেখেছেন। এই  ঐতিহ্যের নতুন সংযোজনে আমি মুগ্ধ। ময়নামতি পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় দর্শনার্থীরা আমার মতই হতাশ বলে মনে হয়েছে।

দেশে দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে এটা এখন দিনের মত সত্য আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্ভবনার এবং স্বপ্ন পূরনের মহা অঙ্গীকার। পৃথিবীর একটা স্বর্গ হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন সফট পাওয়ারের দেশ। যে ১১টি রাষ্ট্র ভবিষ্যৎতে শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ তাদের একটি। এত উন্নয়ন এত প্রবৃত্তির পরেও শিক্ষিত শ্রেণীর কর্মসংস্থান আশানুরূপ বাড়েনি। আগামীর দিন গুলো হবে প্রযুক্তি নির্ভর সুতরাং এই খাতে আরো বেশী গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি। আমাদের সীমিত সম্পদ তাই বিরাট এই জনগোষ্টিকে উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে। কৃষি এবং শিল্পখাতে ক্রম রূপান্তর খুব প্রয়োজন। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি, এই লক্ষ্যে একটা সিষ্টেমের মধ্যে সবাইকেই আসতে হবে এবং সবাইকে আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। আয় এবং সম্পদের বৈষম্য কমাতে হবে। একটা বিপুল জনগোষ্টিকে বাইপাস করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া মোটেও সম্ভব নয়।

শরীফুল আলম

১১ মে ২০২৩

নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর