ফাইয়াজুল হকের লেখায় গ্রেনেড হামলায় আহত আ.লীগ নেতাদের দিল্লি চিকিৎসার স্মৃতি

, যুক্তিতর্ক

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:47:42

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ফাইয়াজুল হক রাজুকে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ১১ সিনিয়র নেতাকে দিল্লি চিকিৎসার দেখাশুনা করার দায়িত্ব তাকে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি ১/১১ প্রেক্ষাপটে রাজপথে রাজুর ভূমিকা আওয়ামী লীগের সর্বমহলে প্রশংসিত। দিল্লিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ও তৎকালিন ঘটনা প্রভাব নিয়ে ফেসবুকে একটি লেখা শেয়ার করেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল।


'আজকে একটা ছোট পুরাতন তথ্য শেয়ার করলাম।

২০০৪ সালের ভয়াবহতম একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রায় এগারো জন সিনিয়র নেতা যথাক্রমে; সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদের, জেনারেল তারিক সিদ্দিক, বাহাউদ্দিন নাসিম,মুকুল বোস,এনামুল হক শামীম সহ অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বের সাথে আমাকে ভারতের নয়া দিল্লি তে সকলের দেখভাল করার জন্য আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

অধিকাংশ নেতাদের তখন খুবই জটিল শারিরীক অবস্থা। আমি এর আগে জীবনে কখনও একসাথে এত মানুষ কে অসহ্য বেদনা তাড়িত হতে দেখি নাই। গ্রেনেড হামলার পর তাই সবাই ছিলেন ক্র্রিটিক্যালি ইনজুরড। এই অবস্থায়, সবাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রায়ের বাজারের সিকদার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। জয়নুল হক সিকদার চাচা অনেক বড় অবদান অনস্বীকার্যভাবেই রেখেছেন সেই কঠিন রাজনৈতিক সময়ে।

যাইহোক, সকল প্রকার প্রস্তুতির পর বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে আমাদের দিল্লির পথে যাত্রা হয় ২৪শে আগস্ট। ঢাকা বিমান বন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে প্রায় শতাধিক নেতা ও কর্মীদের আগমন ঘটে ছিল। সকলের মুখে উৎকন্ঠা ছিল সংগত কারণেই।

ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের বিশেষ সহায়তায় আহত সকলের জন্য এপোলো হসপিটাল দিল্লি তে সকলের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। প্রখ্যাত শৈল্য চিকিৎসক ডা: সাকসেনার নেতৃত্বে একদল চৌকষ চিকিৎসক সকলের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিদিনের জন্য নার্সদের টীম ছিল। বিশেষত উল্লেখ্য যে খাবারের জন্য অতিরিক্ত নজর দেওয়া ছিল। সবাই আমার অভিমত জানতে চাইতো যে, এত নির্মম হত্যাকান্ডের প্রয়াস কি ভাবে সম্ভব!

আমি প্রথম কয়েকদিন পাশেই একটি ভাল হোটেলে থেকেই হসপিটালে যেতাম ও প্রতিটি রুম ভিসিট করে দুপুর থেকে ধানমন্ডির সুধা সদনে একটি এক পৃষ্ঠার আপডেট ফ্যাক্সের মাধ্যমে সরাসরি নেত্রীর কাছে পাঠাতাম আপডেট। তখন কোন ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না। আমার জন্য তাই কম্পিউটার ব্যবহার করে টাইপ করতে হোত। শুনেছিলাম পরে যে সবাই সুধা সদনে আগ্রহ নিয়েই আপডেট পড়তেন।

এর ভিতর ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাঁর ব্লিডিং হোত অধিকাংশ সময়েই। তিনি সারাদিন কাতরাতেন। এর ভিতর হঠাৎই একদিন সকালে একত্রে নাস্তা করার সময়ে তিনি আমাকে বললেন সম্ভব হলে হোটেল ছেড়ে তাঁর ভিআইপি রুমে শেয়ার করার জন্য। দিল্লির সেইসব দিন (প্রায় একমাস) আমার আড্ডা ও গল্পে কাটত রাজ্জাক চাচি, মিসেস সুরঞ্জিত ও আব্দুর রাজ্জাক চাচার সাথে।

মহিলা নেত্রী (পরে এমপি) নাসিমা আপার পা হাঁটুর পর অর্ধেক কেটে ফেলে দিতে হয়েছিল। তাঁর পোস্ট আপারেশন আর্তনাদ এখনও কানে ভাসে। একদিন হঠাৎ আগমন করলেন তৎকালীন ভারতের ডিফেন্স মিনিস্টার শ্রী প্রনব মুখার্জির। তিনি সিনিয়র সকল নেতার রুমে ভিজিট করলেন। আমার দায়িত্ব ছিল সকলের পরিচয় তাকে অবগত করার। একমাত্র আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক নজরে পড়ে। অন্যদের তিনি অত কাছ থেকে চিনতেন না। পরবর্তীতে তিনিও হলেন ভারতের মহামান্য রাস্ট্রপতি।

আমার কাছে টাকা ছিল যথেষ্ট, তবে দেশে ফেরার আগে ওবায়দুল কাদের ভাই একদিন অনেকটাই জোর করে হাতে তিনশত ডলার দিলেন। আহারে, তখন টাকার মান ছিল ভালই। আমি শপিং মল থেকে অনেক কিছুই ঢাকার জন্য কিনলাম। আর কিনলাম দুটো ব্লাক ফুল স্লীভ শার্ট। একটা আমার সাইজের আর অপরটা কাদের ভাইয়ের জন্য মিডিয়াম সাইজের। উনি ভীষণ রকম খুশি হয়েছিলেন। বুঝলাম, কাদের ভাইয়ের তখন ডার্ক ব্লাক এর উপর আকর্ষণ ছিল - আমার একান্ত অনুমান। যাইহোক, ঢাকা আসার পর অনেক সময়েই মন সেই দিল্লি তে পরে ছিল। হসপিটাল, ওষুধ, ডাক্তার, নার্স, ফ্যাক্সে সেন্টার আর গ্রাউন্ড ফ্লোরের খাবার সব স্টল।'

উল্লেখ্য, ফাইয়াজুল হক রাজু'র দাদা শেরে বাংলা ছিলেন উপমহাদেশ জুড়ে। আর বাবা একে ফায়জুল হক ছিলেন বরিশাল ২ আসনের চার বারের এমপি ও মন্ত্রী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী শেরে বাংলার নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর