দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: গণতান্ত্রিক উত্তরণ নাকি অনিশ্চয়তা?

, যুক্তিতর্ক

ড.মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী | 2023-10-26 14:02:22

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এখন দিনক্ষণ গণনা শুরুর প্রাক্কালে। ২০২৪ সালের মধ্য জানুয়ারির একটি তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আলোচিত হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু এ নির্বাচন ঘিরে নানা আশঙ্কার কথা বলেছেন অনেকে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে নাকি অনিশ্চয়তার বিস্তার ঘটবে।

বাস্তবতা হলো এই যে, একদিকে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের নির্বাচনের প্রস্তুতি, অপরদিকে সম্মিলিত বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনীকালের সরকার প্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। এরই মাঝে আগামী ২৮শে অক্টোবর বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোটসমূহ ঢাকায় মহাসমাবেশের আয়োজন করছে। অপরদিকে সরকারী দল আওয়ামী লীগ একই দিন মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে সভাসমাবেশ করার অনুমতি লাভে ব্যর্থ জামাতে ইসলামী একই দিন শাপলা চত্ত্বতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের তিনটি প্রধান দলের পৃথক পৃথক মহাসমাবেশের ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। কারণ, ইতোমধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তার জামাতের মহাসমাবেশের অনুমতি না দেওয়া বক্তব্য ও কিছু গ্রেফতারের খবর পরিস্থিতিকে আরও উতপ্ত করে তুলেছে।

সরকার এবং বিরোধীদল তাদের ঘোষিত মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে বলে বক্তব্য-বিবৃতি দিলেও আকার ইঙ্গিতে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও প্রকাশ পাচ্ছে। বিএনপি যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও মহাসমাবেশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তায় বসে পরে কিনা এই ভয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধের হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করছে। দু'পক্ষের এই আপাত রণ প্রস্তুতি পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায় তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও সংঘাতের জোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

একথা সত্য যে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। কারণ, দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা বিচ্যুতি হতে হতে এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং দেশের সাধারণ জনগণ অনেকটাই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। অতীতে নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি লাইনচ্যুত হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের সচেতন জনগণের কাছে খারাপ উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয় তা উপর্যুক্ত দুইটি নির্বাচনের উদাহরণের মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে বিরোধী পক্ষ দাবি করছে। এমনও বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলোই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো (৫ম, ৭ম ও ৮ম) ছিল তুলনামূলক অবাধ ও সুষ্ঠু। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।

কিন্তু এ ব্যবস্থার ব্যানিফিশিয়ারি বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে বিরোধিতা করলে ১৯৯৪-৯৫ সালে অত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো সকল বিরোধীদল আন্দোলন-সংগ্রাম করে। পরিণতিতে ১৯৯৬ সালে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে পদত্যাগ করে। অবাক বিষয় হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আরেক ব্যানিফিশিয়ারি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার বাসনা নিয়ে ২০১১ সালে এ ব্যবস্থা বাতিল করে। বিরোধী দলগুলো মনে করে, সম্পূর্ণ একতরফাভাবে আওয়ামী লীগ সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপরে অনুষ্ঠিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে তুলেছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব এটি এখন আর ক্ষমতার বাইরের রাজনৈতিক দলগুলো বিশ্বাস করতে রাজি নয়। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না এ বিষয়ে বর্তমানে সরকারী দল ছাড়া বাংলাদেশের সকল ডান-বাম এবং ইসলামী দলসমূহ একমত।

ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে বিরোধী দলসমূহ যুগপৎ এবং পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। শাসকদল আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সকল জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একটি বিকল্প উপায়ের কথা বলছেন। সেটি বিভিন্ন নামের হলেও উদ্দেশ্য একটিই এবং সেটি হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার, জাতীয় সরকার, অন্তবর্তীকালীন সরকার বা তদারকি সরকার যে নামেই তারা বলছেন সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। জনসমর্থনের দিক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমিক ধারায় দশটি দলের অন্তত নয়টিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পক্ষে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামত ধারণ করে ।

কিছুদিন পূর্বেও অন্যতম প্রধান ইসলামী দল 'বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন' সরকার বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিল না। তারাও অতি সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। আগামী ৩রা নভেম্বর শাসনতন্ত্র আন্দোলন ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। জামাতে ইসলামীর পর শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে সবচেয়ে সুসংগঠিত ও জনসমর্থিত ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটও নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি দিচ্ছে। সরকার দেশকে ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে বাম জোট সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। আগ থেকেই জাসদ ও নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দল 'গণতন্ত্র মঞ্চ'-এর ব্যানারে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বর্তমান পদ্ধতির ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। অতিসম্প্রতি তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নতুন ফর্মুলা দিবে বলেও জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরীকদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে ২০১৮ সালের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যা পত্রপত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব, কার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যা ও জনসমর্থনের বিবেচনায় তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে।

নির্বাচন নানা পক্ষের বিপরীতধর্মী অবস্থান যখন সুস্পষ্ট, তখন এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অনেক গুরুত্বপুর্ণ। কারণ, জাতীয় জীবনের একটি যুগসন্ধিক্ষণে আমরা উপনীত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, রাশিয়া, এবং জাতিসংঘ এ নির্বাচনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, ও অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত সামরিক জোট 'কোয়াড'-এ যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করা, ড ইউনুস ইস্যুতে সরকারের নেতিবাচক পদক্ষেপসমূহ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজিতে বাংলাদেশের নিজস্ব অবস্থানের কারণে আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁর নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শিত হতে শুরু করে। উপর্যুক্ত কারণের পাশাপাশি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, বিশেষত র‍্যাব কর্তৃক বিচার বহির্ভূত খুন ও গুমের কারণেও মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরে। সরকারের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের পর থেকে প্রায় ৬০০টি বিচার বহির্ভূত খুন ও গুমের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এ ধরনের বিচার বহির্ভূত খুন ও গুমের গুরুতর অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাবের ৭ জন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার উপর আমেরিকা তার দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পূর্বে ২০২১ সালের ৯-১০ ডিসেম্বর জো বাইডেন গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করেন যাতে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানালেও বাদ পরে বাংলাদেশ। মূলত ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানর পেছনে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। এ বছর মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আরও অগ্রসর হয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরোধিতাকারীদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইতোমধ্যে অনেকের উপর ভিসা নীতি আরোপ করা হয়েছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে। আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে এরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছে যে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত নির্বাচন তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র চাওয়া হল, এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচন শুধু একদিনের বিষয় নয়, বরং নির্বাচন হচ্ছে সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধে সুযোগ দেওয়া। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দল তাদের রিপোর্ট প্রদানের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাজেটের অজুহাত দেখিয়ে পূর্ণ পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপরদিকে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে সুপারিশ করে। এ ক্ষেত্রে তারা সংলাপ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করে। নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছে। দেশের সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধির মতে দু'দলের কঠোর অবস্থার কারণে সংঘাত অনিবার্য। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তারা সংলাপকে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছেন। কিন্তু সংলাপকে এড়িয়ে বিবদমান দলগুলো পারস্পরিক শক্তির মহড়ায় অবতীর্ণ হয়ে পুরো পরিস্থিতিকেই উত্তেজক ও অনিশ্চিত করেছে।

ফলে অনুকূল পরিবেশের ঘাটতি দেখছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচনে যেনো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে সেধরণের পরিবেশ গঠন করা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, বাংলাদেশ সংকটময় দেশের তালিকায় রয়েছে। ক্রাইসিস গ্রুপের ধারণা আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে বিরোধীদলের দাবি মানবেনা। বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। তাই নির্বাচনের আগে সংঘর্ষ বাধতে পারে। আক্রান্ত হতে পারে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা। ক্রাইসিস গ্রুপের ধারণা, নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কায় বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন ও সহিংস হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচন পরবর্তী সময় খুবই বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে পারে। পরিণতিতে গণতন্ত্রর অবক্ষয় ও অরাজনৈতিক শক্তির হস্তক্ষেপের মত ঘটনাও ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এতো অনিশ্চয়তা ও ভীতি সত্ত্বেও আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধীদলের কেউ কেউ তাদের আন্দোলনকে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ' হিসেবেও বর্ণনা করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদগণও রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতাকে অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। অনেকের মতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গণতান্ত্রিক উত্তরায়নে কোনো বিকল্প নেই। তাই সামগ্রিকভাবে দেশ ও জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য শাসক ও বিরোধীদলকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। বিশেষত রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ভূমিকা রেখে দেশকে গভীর রাজনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারেন। এবং জনগণকে সংঘাতের শঙ্কা থেকে বাঁচাতে পারেন। জাতির এই সঙ্কুল পরিস্থিতিতে সঙ্কট মোচনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা নিয়ে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে, যার মাধ্যমে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কেটে গণতন্ত্রের গতিপথ ও উত্তরণ মসৃণ হবে এবং সম্ভাব্য রক্তপাত ও সংঘাতের চরম ভীতি থেকে জাতি মুক্তি পাবে। তা না হলে জাতির করুণ পরিণতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহি করতে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

ড.মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর