শঙ্কা নয়, ভোট হোক উৎসবের

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

প্রভাষ আমিন | 2023-08-21 00:59:05

১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনের পর এই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একাদশ নির্বাচন তাই যেমন নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, তেমনি সরকারের জন্যও। দলীয় সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, এটা প্রমাণের বড় তাগিদ সবার। এবারের নির্বাচনটি তাই বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট।

বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই উৎসব। বাংলাদেশে যেন ঈদ লেগেছে। ঈদের ছুটির মতো মানুষ দলবেঁধে গ্রামের বাড়ি গেছে ভোট দিতে। এ এক অসাধারণ মন ভালো করে দেওয়া দৃশ্য। মানুষ নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বাড়ি যাচ্ছে।

তবে এই উৎসবমুখরতার আড়ালে একটা শঙ্কার চোরাস্রোতও আছে। কাল রাতে যখন ফিরছিলাম, দেখেছি রাস্তাঘাটে সুনসান নিরবতা, একটা থম ধরা ভাব। নির্বাচনের আগেরদিন কথা বলেছেন সব পক্ষই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন করতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ড. কামাল নিশ্চিত করেছেন, তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের কেন্দ্র পাহারা দিতে বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার কণ্ঠে শঙ্কা যেমন আছে, আছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারিও। এই হুঁশিয়ারি নিছক মুখের নয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ড মিলে ৭ লাখেরও বেশি কর্মী মাঠে ছিলো ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে কথা বলেছেন- সেনাপ্রধান, বিজিবি মহাপরিচালক, র্যাব মহাপরিচালক ও পুলিশ কমিশনার। সবাই ভোটারদের নিশ্চিন্ত করেছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ছিল।

সরকারি দল, বিরোধী দল, সিইসি, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কণ্ঠে অভিন্ন সুর, ভোটাররা সবাই যেন কেন্দ্রে আসে। নির্বাচনের আগের রাতে বেশকিছু অঘটন ঘটেছে, তবু ভোটারদের প্রতি আহবান, আপনারা ভয়-শঙ্কা ঝেড়ে ফেলে কেন্দ্রে আসুন। আপনারা যত বেশি কেন্দ্রে আসবেন, অপশক্তি তত গর্তে ঢুকবে।

তবে কেন্দ্রে যাওয়ার আগে কয়েকটা জিনিস মনে রাখবেন, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ভোটার স্লিপটি নিতে ভুলবেন না; যাতে আপনার নাম, কেন্দ্রের নাম এবং একটি সিরিয়াল নাম্বার দেয়া থাকবে।জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের সাথে ভোট দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ভোট দিতে যাওয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে সাথে রাখলে অসুবিধা নেই। ভোট কেন্দ্রে দাহ্য পদার্থ, আগ্নেয়াস্ত্র এবং ধারালো কোনো কিছু নিয়ে যাওয়া যাবে না। মোবাইল ফোন নিতে পারবেন, তবে ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোট দেয়ার সময় ফোনটি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে। ভোট কেন্দ্রে কিন্তু সেলফি তোলা বা চেক ইন দেয়া যাবে না। অবশ্য চাইলেও আপনি চেকইন দিতে পারবেন না, কারণ মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ। আপনি আপনার পছন্দমত পোষাক পড়ে ভোট দিতে যেতে পারবেন। তবে শীতের বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আর মুখ ঢাকা কোনো পোশাক পড়লে পরিচয় শনাক্ত করতে অন্তত একবারের জন্য পোলিং এজেন্টকে মুখ দেখাতে হকে পারে। ভোট উৎসব, তবে সেই উৎসবে শিশুদের সাথে নেয়া যাবে না। নিজের ভোট নিজেকেই দিতে হবে। তবে অন্তঃসত্তা নারী, অন্ধ, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ ভোটাররা সহায়তা করার জন্য তাদের সাথে একজনকে রাখতে পারবেন।

সব প্রস্তুত, এবার আপনার পালা। শঙ্কা দূরে ঠেলে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিন। আপনার ক্ষমতা প্রয়োগ করুন, আপনিই ঠিক করুন আপনার প্রতিনিধি। খালি একটাই অনুরোধ, আপনার মূল্যবান ভোট, বাংলাদেশের পক্ষে হোক।

সকালে ভোট দিয়ে অফিসের কাজ শুরু করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে বিশাল লাইনে দাড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছি। আমার বুড়ো আঙ্গুলে এখন গণতন্ত্রের অমোচনীয় গৌরব। আপনার আঙ্গুলেও লাগিয়ে নিন।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর