‘খেলা শেষ’: কীসের ইঙ্গিত, কেন ইঙ্গিত

, যুক্তিতর্ক

কবির য়াহমদ | 2024-01-09 18:45:35

 

‘খেলা হবে, খেলা হবে’; রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কবছর ধরে বাংলাদেশের আলোচিত বাক্য। নারায়ণগঞ্জের শামিম ওসমান থেকে শুরু হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকে এই সংক্ষিপ্ত বাক্যের বহুল চর্চা আমরা দেখেছি। দেশ-সীমা অতিক্রম করে এই বাক্যের ব্যবহার আমরা দেখেছি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনেও। এই বাক্য-সংক্ষেপে খেলাধুলার মত আনন্দদায়ক প্রপঞ্চের ইঙ্গিত কিংবা উপস্থিতি ছিল না, ছিল কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত। ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক; অনেক ক্ষেত্রে ভয় জাগানিয়া।

নির্বাচনের ‘খেলা’ এরিমধ্যে শেষ। আন্দোলনের খেলা চলমান। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৯৯টি আসনের নির্বাচন। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে ময়মনসিংহ-৩ আসনের একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল হওয়ায় স্থগিত রয়েছে ওই আসনের নির্বাচন। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন আগেই বাতিল করা হয়েছিল। এরই মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২২টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী, জাতীয় পার্টি (জাপা) ১১ আসনে এবং জাসদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে; আর ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। বিএনপি না নিলেও দলটির অনেক নেতা তৃণমূল বিএনপি নামের একটি দলের প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির অনেক নেতা অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রতীকে। দলগুলোর একজনও বিজয়ী হননি, উপরন্তু দলের প্রায় সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ দলগুলোর কয়েকজন আবার ১০০ ভোটেরও কম পেয়েছেন বলে খবর। অথচ এই দলগুলোকে নিয়ে ছিল ব্যাপক আগ্রহ, আলোচনা।

কিংস পার্টির সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী বীর বিক্রম। যুদ্ধাহত এ মুক্তিযোদ্ধা প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছেন। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। ছয়জনের লড়াইয়ে তিনি হন তৃতীয়। বিজয়ী বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ পান ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ঈগল প্রতীক নিয়ে ৩৯ হাজার ৪৮৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। আর সোনালী আঁশ প্রতীকের শমসের মুবিন চৌধুরী ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল) ৫ হাজার ৫৭৯ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার) ৬২২ ভোট, এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান (ছড়ি) ১৬৯ ভোট পেয়েছেন। নাহিদ ও সরওয়ার ছাড়া এই আসনে বাকি সকলের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

এই আসন নিয়ে ছিল ব্যাপক আগ্রহ। আগ্রহের কারণ দুই হেভিওয়েট শমসের মুবিন চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন। উন্নয়ন-বঞ্চনা, এলাকাবাসীর সঙ্গে দূরত্ব, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, করোনা-বন্যার সময়ে একবারও এলাকায় না আসার কারণে নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রতি মানুষের ছিল ব্যাপক ক্ষোভ। সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের গোপাগঞ্জ-বিয়ানীবাজার অংশের বেহাল দশায় নাহিদ ছিলেন কোণঠাসা এবং নাগরিক ক্ষোভের মুখে। বন্যায়-করোনায় এলাকায় সার্বক্ষণিক থাকার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের পক্ষে মানুষের সমর্থনের পাশাপাশি, তার সঙ্গে আবার ছিল আওয়ামী লীগের একাংশ। অপরদিকে শেষ মুহূর্তে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশই শমসের মুবিন চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নামায় নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলেও ভোটের ফলাফলে তার প্রকাশ হয়নি। বড় ব্যবধানেই জিতেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

প্রচারণার বেশিরভাগ সময় পিছিয়ে থাকা নুরুল ইসলাম নাহিদ একেবারে অন্তিম সময়ে এসে বাজিমাত করেছেন। নির্বাচনে জিতেনইনি কেবল, তিনি নির্বাচনের আগে ৫ তারিখ দুপুরে ফেসবুকে ‘খেলা শেষ, The game is over। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের জনসভার জনস্রোত প্রমাণ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। জিতবে আবার নৌকা।’ লিখে আলোচনার খোরাক হয়েছেন। কী কারণে, কীসের ভিত্তিতে ‘খেলা শেষ’ বলে মন্তব্য করলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ—এ প্রশ্ন ঘুরছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ চর্চা যখন দেশজুড়ে তখনো কিন্তু একবারও নুরুল ইসলাম নাহিদ এইধরনের মন্তব্য করেননি। মন্তব্য করেছেন এমন এক সময়ে যখন নির্বাচনের বাকি কয়েক ঘণ্টা এবং নিজের জনপ্রিয়তা প্রশ্নের মুখে।

নির্বাচনের দিন সিলেট-৬ এলাকায় ছিলাম। এই সংসদীয় আসনের কোথাও লাইন ধরে ভোটারদের উপস্থিতির ব্যাপক তথ্যও নেই। বিক্ষিপ্ত ভোটার উপস্থিতি সত্ত্বেও দেখা গেল লাখের বেশি কাস্টিং ভোট! এবং অধিকাংশ কেন্দ্রেই দিনশেষে বিজয়ী নুরুল ইসলাম নাহিদ। হতে পারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি তার ভোট সংখ্যায় অনুদিত। তবে প্রশ্ন থাকে দিনভর খাঁ খাঁ ভোটকেন্দ্র কিন্তু দিনশেষে ভোটের আধিক্য। কীভাবে সম্ভব? এরসঙ্গে কি কোন যোগ আছে  ‘খেলা শেষ, The game is over’—এ প্রশ্নটাই ঘুরছে পুরো নির্বাচনি এলাকায়।

নির্বাচনের দিন অনেকগুলো ভোটকেন্দ্রে যাওয়া হয়েছে আমার। আমার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে রয়েছে সাতটি ভোটকেন্দ্র। তন্মধ্যে ঢাকাউত্তর মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ১ ও ২ ভোটকেন্দ্র, হাজি ওয়াসিদ আলী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রায়খাইল খলাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে অনেকটাই শৃঙ্খলা দেখেছি। এর বাইরে বাকি তিনটি ব্রাহ্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লুৎফুর-নেহার মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল ভোটকেন্দ্রের বিশৃঙ্খলা নজিরবিহীন। এসব কেন্দ্রে বাইরের স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে ঢুকেছে আর বেরিয়েছে। কেউ কেউ আবার ভোটকেন্দ্রে বসাও ছিল অনেকটা সময়। ভোট গণনার সময়েও আনঅথোরাইজড লোকদের অংশগ্রহণও দেখেছি।

ভোটারসংখ্যার দিক থেকে ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ভোটকেন্দ্রে লুৎফুর-নেহার মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। ৩ হাজার ৩৬৪ ভোটারের এই কেন্দ্রে সারাদিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা প্রত্যেকেই ছিল আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য। তারা দিনভর ভোটকেন্দ্রে আসা মুষ্টিমেয় ভোটারকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ভোট গণনার সময়েও ছিল উপস্থিত। ওই কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে নিবৃত্ত করেননি। ভোটের দিন সকালে আমি প্রিজাইডিং অফিসারকে তার কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কথা জানালে তিনি একবার ওখান গিয়ে অনাহুত আগন্তুকদের সরিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অস্বীকার করে দাবি করেন, বাইরের কেউ ভোটকেন্দ্রে নাই। তিনি ব্যালট বাক্সের পাশে বসা লোকজনকেও সরিয়ে দিয়েছেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে এসব অস্বীকারও করেছেন। এই কেন্দ্রে ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জিতেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

ব্রাহ্মণগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রতিটি নির্বাচনের সময়ে থাকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায়। আলীনগর গ্রামের প্রভাবশালী একটি চক্র প্রতিবারই কেন্দ্র দখল করে বসে। এবার দখলের ঘটনা না ঘটলেও ওই গ্রামের অনেকেই বারবার কেন্দ্রে ঢুকেছে আর বেরিয়েছে। কেন্দ্রে আসা মুষ্টিমেয় ভোটারকে তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিতে প্ররোচিত করেছে। একজন ভোট না দেওয়ায় তাকে মারধর করেছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি  জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। চারখাই পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আলীনগর ইউপি বিট পুলিশ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হলেও তার দায়িত্বশীল ভূমিকা ছিল না। প্রিজাইডিং অফিসার বারবার পোলিং এজেন্টদের স্ব স্ব স্থানে বসে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছেন। ভোটার নন এমন লোকদের কেন্দ্রে ঢুকতে নিষেধ করেছেন। চেষ্টা করেছেন নিয়ন্ত্রণে রাখার। ওই কেন্দ্রেও জিতেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সুরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। এর আগে-পরে বারবার এই কেন্দ্রে বারবার উত্তেজনা ছড়ালেও বড়ধরনের কিছু ঘটেনি। ভোটপর্বও সমাপ্ত হয়েছে ভালোভাবেই। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের পক্ষে দুপক্ষই শক্তিশালী থাকায় পরিবেশে ভারসাম্য ছিল।

এরবাইরে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখানে ছয় প্রার্থী থাকলেও অধিকাংশেরই পোলিং এজেন্ট ছিল না। নৌকা ও ঈগল প্রতীকের এজেন্ট থাকলেও বাকিদের ছিল অনিয়মিত; কোথাও সোনালী আঁশ, আবার কোথাও লাঙ্গল। বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের অনেক কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত ঈগলের এজেন্ট থাকতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠেছে। শক্তির ভারসাম্য না থাকায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সুবিধা করতে পারেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও এনিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরী। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন নির্বাচনের পরের দিন ফেসবুকে লিখেছেন—‘সিইসির বক্তব্য আর কাজের মিল পাইনি গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায়। সিলেট ৬’। এরবাইরে তিনি আর কোন মন্তব্য করেননি, মন্তব্য করেননি তৃণমূল বিএনপির শমসের মুবিন চৌধুরী।

সরওয়ার হোসেন সিইসির বক্তব্য আর কাজে মিল পাননি, এদিকে নির্বাচনের একদিন আগে ‘খেলা শেষ’ বলে ঘোষণা নুরুল ইসলাম নাহিদের; মন্তব্যগুলো কৌতূহলোদ্দীপক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ববাসীর সামনে বেকায়দায় পড়ে যাবে বলে কিছু বলবেন না সরওয়ার হোসেন, এমনটা বলছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা। তবে সিলেট-৬ আসনে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা আদতে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকেই। এই আসনের নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি হয়ত হবে না, তবে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাগ্রহ আর অনাস্থাই শক্তিশালী হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর