‘তারা স্নায়ু যুদ্ধের মধ্যে আর যেতে চাইবে না’

, যুক্তিতর্ক

আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-09 21:06:51

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতার সঙ্গে সারা বিশ্ব পরিচিত উল্লেখ করে বিশিষ্ট নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশীদ বলেছেন, বিশ্বের অর্ধেক জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রগুলো যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যরা যারা এটিকে নিয়ে খেলতে চাচ্ছে তারা এই প্রতিযোগিতা বা স্নায়ু যুদ্ধের মধ্যে আর যেতে চাইবেন না।

বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন জ্ঞাপনের মাঝেই সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নেতিবাচক বিবৃতি প্রদান করে তাদের অবস্থান জানিয়েছে।
নির্বাচনোত্তর বিশ্বের বিভাজিত এই অভিনন্দন ও নেতিবাচক বিবৃতিসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সামগ্রিক বিষয়ে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত গত ৭ তারিখের অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দু’টি দেশ ও বিশ্বসংস্থার দূতের প্রতিক্রিয়া প্রায় কাছাকাছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশীদ : নিঃসন্দেহে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এটি দৃশ্যমান। এই দৃশ্যমান বিষয় যেসব দেশ তাদের চশমা লাগিয়ে দেখছে, তারা দেখতে পাচ্ছে না। আমরা দেখছি, তারাই দেখতে পাচ্ছে না যারা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন নিয়ে অতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। অতি আগ্রহ প্রকাশ করে তারা যে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি, স্যাংশন, ভিসানীতি ইত্যাদির মাধ্যমে যে একটি পরিবেশ তৈরি করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল তারা এক পক্ষকে ধমকাচ্ছে আরেক পক্ষকে উৎসাহিত করছে। এই পক্ষপাতদুষ্ট কৌশল স্বভাবতই ব্যর্থ হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল দেখে। যে পক্ষগুলো নির্বাচনে অতিআগ্রহ প্রকাশ করে নির্বাচনের ফলাফলকে পক্ষপাতদুষ্ট করার অভিপ্রায় নিয়ে তারাই আবার এই ফলাফল দেখে তাদের অবস্থান সরাসরি পাল্টে ফেলবে সেটি তো আশা করার কোন কারণ নেই।

বার্তা২৪.কম: এই নির্বাচনের ফলাফল ও সার্বিক নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশীদ : যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, আমরা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বা দেশিয় অবজারভারসহ আমরাও যেটি পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে নিঃসন্দেহে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পেরেছে। ইচ্ছামতো ভোট দিতে পেরেছে, তার ফলাফল আমরা দেখেছি। আরও একটি বিষয় হলো যে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল যেটি আমরা বলছি সেই ফলাফলে একটি বৈচিত্র রয়েছে, একটি ব্যতিক্রমধর্মিতা আছে। সেই ব্যতিক্রমধর্মিতাই আভাস দেয় যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেই এটি তৈরি হয়েছে। একটি নমুনা হচ্ছে, প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৬ গুণ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। অন্যটি হচ্ছে ভোটাররা সব রকমের ভীতি-শীতের তীব্রতা সবকিছু উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে গেছেন এবং সহিংসতার মাত্রা শূন্যের কোটায় বলা যায়; কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া। এই ভোটারদের মাঝেই আবার ভোট বর্জনের হুমকিও কাজ করেছে। এর ফলে সরকারি দলের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকেই হারতে হয়েছে। এই হারার যে একটি দৃশ্যমান সত্যতা সেটি হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে সেটিরই প্রকাশ। অন্য দলেও প্রার্থীরাও জিতে এসেছে, জাতীয় পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে এসেছে। এই যে বৈচিত্রপূর্ণ ফলাফল এটিই প্রমাণ করে যে এই ফলাফল জনগণের ভোটের উপর নির্ভর করেই হয়েছে। এখন যদি কেউ এটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে চায় সেটি তাদের নিজেদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি এই বিরোধিতা থাকবে না। কারণ আগে তারা যে কৌশল নিয়েছে তা যখন ব্যর্থতার পর্যায়ে গেছে, ভূ-রাজনৈতিকভাবে আপনি যদি দেখেন বিশ্বের অর্ধেক জনগণের রাষ্ট্রগুলো সমর্থন দিয়ে দিয়েছে।

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশের নির্বাচনে সমর্থন দেওয়া না দেওয়া নিয়ে বিশ্ব কি বিভাজিত হয়ে পড়েছে?

মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশীদ : বিশ্বের অর্ধেক জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রগুলো যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে, তখন অন্যরা যারা এটিকে নিয়ে খেলতে চাচ্ছে তারা এই প্রতিযোগিতা বা স্নায়ু যুদ্ধের মধ্যে আর যেতে চাইবেন না। সেক্ষেত্রে তারা হয়তো আসল ফলাফলকেই স্বাগত জানাবেন। এনিয়ে দুশ্চিন্তার খুব একটা কারণ নেই। নির্বাচনের আগেই শঙ্কা ছড়ানো হয়েছিল নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। বলা হচ্ছিল নির্বাচন হলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোও এই বার্তা দিয়ে আসছিল। সেই বার্তাগুলি কিন্তু বিদেশি নির্ভর বার্তা। নিজেদের বার্তা নয়। সেখান থেকে বাংলাদেশের জনগণ খুব শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছে। এই সব দেশ যে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করবে বাংলাদেশ তা প্রত্যাশাও করছে না, সেটি হল বড় কথা। বাংলাদেশ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে বলেছে জনগণ যে ফলাফল গ্রহণ করবে সেটিই হচ্ছে বড় কথা। সেজন্য বৈদেশিক সমর্থনকে বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই স্বাগত জানায়, তবে তাদের ওপর নির্ভর করতে চায় না।

বার্তা২৪.কম: নির্বাচনের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পর্যবেক্ষণ ছিল এরকম যে যারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ব্যাহত করবে তারাও স্যাংশনের আওতায় আসবেন। কিন্তু নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য যে সব নাশকতার ঘটনা ঘটলো বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে। তাহলে তাদের বিষয়ে কি যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের ঘোষণা থেকে সরে এসেছে?

মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশীদ : যুক্তরাষ্ট্র সরে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণাটি কোন পক্ষকে প্রভাবিত করার জন্য দিয়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতার সঙ্গে সারা বিশ্ব পরিচিত, শুধু বাংলাদেশ নয়। স্বভাবতই তারা আন্তরিকভাবে তাদের নীতি নির্মোহভাবে প্রয়োগ করে এটি মনে করার কোন কারণ নেই। তারা বলেছে, ভোট যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ওপর স্যাংশন দিবে। কিন্তু আমরা দেখছি যারা ঘোষণা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করছে তাদের ওপর স্যাংশন দিতে যুক্তরাষ্ট্র কোন পদক্ষেপ নেয়নি, তার মানে এটি হচ্ছে তাদের নীতির দ্বিচারিতার একটি বড় উদাহরণ। সে কারণে তাদের কাছে এটি প্রত্যাশা করা বাতুলতা। একটি দেশের রাজনৈতিক শক্তি নির্ভর করে দেশের জনগণের সমর্থনের উপরে। আমার মনে হয় এই নির্বাচন সুস্পষ্টভাবে ম্যান্ডেট দিয়ে দিয়েছে জনগণ কোন পক্ষে আছে। সেটিই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের শক্তির মূল উৎস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর