ধ্রুবতারা তুমি, দুঃসময়ের বিশ্বস্ত সাথী

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 13:29:40

থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি থেকে শনিবার (৫ জানুয়ারি) তিনি উড়ে আসছেন প্রিয় বাংলাদেশে। রবিবার (৬ জানুয়ারি) কর্মভূমি ঢাকা, পিত্রভূমি কিশোরগঞ্জ আর জন্মভূমি ময়মনসিংহ হয়ে বনানীর কবরগাহে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি পিতা-মাতার পাশে।

চিরজীবন তিনি যেভাবে মিশে ছিলেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে, মরণেও তিনি মিশে থাকবেন লক্ষ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রিয় স্বদেশের শ্যামল মাটির আলিঙ্গনে। বাংলাদেশের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক পরম্পরায় তিনি থেকে যাবেন ইতিহাসের রূপালি নদীতে। মেঘ ও ছায়া হয়ে রৌদ্র ও বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বলবেন, ‘আমি বাংলার কথা বলি, আমি বাংলার গান গাই।’

তিনি থাকবেন ধ্রুবতারা হয়ে, যিনি এসেছিলেন ধুমকেতুর মতো। বাংলার রাজনৈতিক সঙ্কট ও সন্ধিক্ষণে তিনি এসেছিলেন রক্ত ও ঐতিহ্যের টানে। তিনি আসতে বাধ্য হয়েছিলেন ঐতিহাসিক নিয়তির নির্দেশে। যেমন এসেছিলেন তাঁর পিতা, জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও রাজনীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারীদের সঙ্গে আপোস না করে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনিও বিশ্বস্ততার ঐতিহ্য-লালিত রাজনৈতিক সরণিতে গ্রিক পুরাণের ট্র্যাজিক চরিত্রের মতো চলেছেন।

পিতার ঐতিহ্য অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বের প্রতি নিরঙ্কুশ থেকেছেন জীবনের সর্বক্ষণ। দল ও নেত্রীর বিপদে ও সঙ্কটে সামনে এগিয়ে গেছেন সবার আগে। দলের ভেতরের স্বার্থগোষ্ঠী ও বাইরের প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতার লোভ ও বৈষয়িক চিন্তাকে জলাঞ্জলী দিয়ে দলের মতাদর্শিক বিজয়ের জন্য তৎপর থেকেছেন সারাটি জীবন।

মুক্তিযুক্তের রক্তাক্ত রণাঙ্গন থেকে উত্থান ঘটেছিল তাঁর। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চৈতন্যে পুষ্ট হয়েছিল তাঁর শৈশব-কৈশোর-জীবন। ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদমুক্ত ভাবাদর্শে নিজেকে গড়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জাতীয় যুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শিক কাণ্ডারী হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিকে প্রসারিত করেছেন সমগ্র বাংলাদেশে।

রাজনৈতিক জীবনে শতভাগ সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। আদর্শিক রাজনীতির এই সেনাপতি রাজনীতিকে চিন্তা ও চেতনার ক্ষেত্র বলে বিশ্বাস করতেন। অর্থ, সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম করেন নি কখনোই। শক্তি, দম্ভ, দাপটের উগ্র রাজনীতি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে নি। তাঁকে ছুঁতে পারে নি দুর্নীতির কলঙ্ক-কালিমা।

বরং তিনি প্রবলভাবে স্পর্শ করেছেন বাঙালির হৃদয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিটি বাঙালির অন্তরে স্থান পেয়েছেন তিনি। তিনি হয়ে আছেন আদর্শিক, ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের নয়নের মণি। বিশ্বস্ততা ও সততার প্রতীক হয়ে আছেন তিনি। নীতি ও আদর্শের অবিচল পর্বত হয়ে তিনি আছেন। আছেন বিপদ, সঙ্কট ও দুঃসময়ে নেত্রীর পরীক্ষিত সাথী ও দলের বিশ্বস্ত সৈনিক হয়ে।

বাংলাদেশের রাজনীতির চরম সন্ধিক্ষণ ও সঙ্কটে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে ধ্রুবতারা হয়ে আছেন তিনি। ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তি, স্ত্রী বিয়োগের বেদনা নিয়েও তিনি গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রের মতো সকল ধরনের ত্যাগের পরেও জাতির মতাদর্শিক বিজয় ও অর্জনের আনন্দে তৃপ্ত। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সারিতে এক, অনন্য ও অতুলনীয় তিনি।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (১৯৫২-২০১৯) তিনি, একক ও একজনই। বার বার আসে না এমন কেউ। জীবনের লেনদেন মিটিয়েও ফিরে আসছেন তিনি নিজস্ব মৃত্তিকায়। নদী বিধৌত বাংলাদেশের সংগ্রামশীল জাতিসত্ত্বার দুঃসময়ের সাথী হয়ে তিনি যে ত্যাগ ও বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা কোনোদিন মুছে যাবে না। বাঙালি জাতি যত দিন থাকবে, থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পিতা সৈয়দ নজরুলের আত্মত্যাগের পথকে প্রশস্ত করে তিনিও থাকবেন বাংলার ইতিহাসের অন্তর্মূলে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর