শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বের ‘ক্যারিশমা’

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান | 2023-08-31 22:06:52

এক.

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৮টি (প্রাপ্ত আসন ২৯৮/৩০০) আসনে বিশাল জয় পেয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। একক দল হিসাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করেছে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। বলা যায় টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে শেখ হাসিনার ‘ক্যারিশম্যাটিক’ নেতৃত্ব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘস্বরূপ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মহাজোটের এই ঐতিহাসিক বিজয় উপহার দিয়েছেন।

দুই.

‘জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তির মঙ্গল বার্তা ও উন্নয়নের দীপশিখা’ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিশ্বশান্তি ও কল্যানকামীতা বিষয়ক চিন্তা-ভাবনা, ইতিবাচক ধারায় বিশ্বকে প্রভাবিত করা নীতি ও কাজ, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধানদের প্রভাবিত করার সক্ষমতা, প্রত্যক্ষভাবে গোটা পৃথিবী উপকৃত হয়েছে এমন একটি সুনির্দিষ্ট কাজ, এবং বিশ্বনেতা হিসেবে তার গৃহীত কৃতকর্মের দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাবের বিস্তৃতি কেমন’ এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন ‘সরকার ও রাজনীতি’ বিষয়ক উচ্চতর গবেষকের মতামতের ভিত্তিতে গবেষণা সংস্থা ‘পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স’ প্রকাশিত প্রতিবেদন (২০১৮) অনুযায়ী, প্রভাবশালী বিশ্বনেতার তালিকায় পঞ্চম এবং একই সংস্থার প্রতিবেদন-২০১৭ অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রের বাইরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্ষমতায় আসীন হবার পর ব্যক্তিগত সম্পদের বৃদ্ধি, গোপন সম্পদ আছে কিনা, সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এবং দেশের জনগণ তার সম্পর্কে কী ভাবেন’ এমন পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণপূর্বক বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সৎ সরকার প্রধান তালিকায় তৃতীয় বিবেচিত হন শেখ হাসিনা।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘টাইম ম্যাগাজিন’ প্রকাশিত প্রতিবেদন (২০১৮) অনুযায়ী, বর্ষসেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় নেতা (লিডার) ক্যাটাগরির তালিকায় ২৭ জনের মধ্যে ২১ নম্বরে এবং ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের একশ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ২৬ নম্বরে অবস্থান শেখ হাসিনার।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সাময়িকী ‘ফরচুন’ প্রকাশিত তথ্য (২০১৬) অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নেতৃত্বের প্রভাব, সাফল্য ও জনগণের জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা’—এই তিন গুণাবলীর বিবেচনায় তৈরি ৫০ জনের তালিকায় বিশ্বের দশম মহান নেতা বিবেচিত হন শেখ হাসিনা।

তিন.

ব্যক্তি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে যারা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করেছেন, একমাত্র তারাই জানেন তার দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, রাষ্ট্রনায়কোচিত মানসিক শক্তি, মেধা, বিচক্ষণতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সরলতা, সততা, আত্মপ্রত্যয়, রাজনৈতিক নের্তৃত্বে পাহাড়সম দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতা, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, সব শ্রেণির মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মী হৃদয়ের আকুলতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়চেতা দৃষ্টিভঙ্গি, কৌশলী নেতৃত্ব, ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি প্রভৃতি গুনে গুনান্বিত তিনি।

সময় পেলে মাঝে মাঝে পরিবারের সদস্যদেরকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ান। এমনকি সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে (১৬ জুলাই, ২০০৭ ভোররাতে) এবং খালেদা জিয়াকে (৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৭) গ্রেফতার করে সাবজেলে পাশাপাশি রাখা হলে তিনি বেগম জিয়াকেও রান্না করে খাওয়ান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও সততার প্রমাণ দিতে গিয়ে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ তার নাম ঠিক না হওয়া গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিতে লিখেছেন, শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পর, আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা নেতৃত্ব ও ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী সেনা গোয়েন্দাদের একটি দল তাকে (মঈন ইউ আহমেদ) জানান, ‘একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া সব রাজনীতিবিদকেই কেনা যায় (বাংলাইনসাইডার.কম, ৫ অক্টোবর, ২০১৭)।’

আর বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে পরম মমতা ও মানবতাবোধের উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় ও রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নেওয়ায় ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য পথিৃকৎ শেখ হাসিনাকে বর্ণনা করেছে, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময় নিয়ে দেখেছে শেখ হাসিনার মহানুভবতা, তার সরকারের সংবেদনশীলতা এবং বাঙালি জাতির মানবপ্রেম ও জীবনদর্শনকে। শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন ‘সবার উপরে মানুষ ও দেশ সত্য’ এবং ‘মানবতা বড় ধর্ম’।

চার.

উন্নয়ন-অগ্রগতির সাফল্য, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক গুরুত্বারোপ, সাধারণ মানুষের অন্ন-বস্ত্রের অধিকার ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতা নির্মূল, এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যের হার তাৎপর্যপূর্ণহারে কমানো, নারীর ক্ষমতায়ন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শিল্প ও কৃষিক্ষেত্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রভৃতি শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে করেছে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’র (একনেক) তথ্যমতে (২০১৮), মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ১৭৫১ মার্কিন ডলার এবং (২০১৭-১৮) অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ যা (২০১৬-১৭) অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং (২০১৫-১৬) অর্থবছরে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল। টানা তিনবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭-এর উপরে ধরে রাখা নি:সন্দেহে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে ইঙ্গিত করে।

পাঁচ.
পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা পানি চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত পরিবেশ আন্দোলন ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন ইস্যুতে বলিষ্ঠ কণ্ঠ ও নেতৃত্বে বিশ্বে অনবদ্য নজির স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা। ‘মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায়’ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সূচকে প্রথমবারের মতো তার সরকার ইতিবাচক যোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের যোগ্যতা অর্জনের মর্যাদা দিয়েছে (১৫ মার্চ, ২০১৮) ।

গত ১১ মে ২০১৮ ইডিটি, বাংলাদেশ সময় ১২ মে ২০১৮, ভোর ০২:১৪, বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং উৎক্ষেপনের ১০ দিন পর (২১ মে, ২০১৮) স্যাটেলাইটটি নিজস্ব অরবিট স্লট ১১৯.১ দ্রাঘিমাংশে পৌঁছে যায়। ইতিহাসে ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায়। শেখ হাসিনার হাত ধরেই দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভারত-মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিজয় এবং মহাকাশে বাংলাদেশের বিচরণ নি:সন্দেহে ঐতিহাসিক অর্জন।

ছয়.

শেখ হাসিনার সামনে ‘ক্যারিশম্যাটিক’ উন্নয়নের মাইলফলক স্থাপনের হাতছানি। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রুটে চার লেনের মহাসড়ক বাস্তবায়ন, সুন্দরবনের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্বলিত রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও মংলা বন্দরকে গতিশীল করা, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চালু ও গতিশীল করা, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল ও দোহাজারী থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ, দেশের প্রায় ৪৫৪৭টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ, সম্প্রতি অনুমোদিত (৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) শত বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্লান) বাস্তবায়ন এবং প্রায় ১৩ হাজার ৪৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নতুন সরকারের উপর যেখানে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৯৫/৯৬ লক্ষ মানুষ এ পর্যন্ত ৩৬/৩৭ কোটি বার বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে।

নৌকা, রিকশা, কিংবা ভ্যান গাড়িতে ভ্রমণের আকুতি ভরা মনে শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেন গ্রামগুলো উন্নয়নের আলোয় উদ্ভাসিত হবে শহরের মত। উড়াল সেতুতে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন বস্তির অসহায় মানুষগুলোর জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের।

তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে এখন শুধু তার দেবার পালা। কিন্তু প্রায়ই তার মুখে উচ্চারিত ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত’ এমন কথা দয়া করে আর না বলার জন্য করজোড় মিনতি রইল। মহান আল্লাহ তাকে কিংবদন্তির যে জীবন দান করেছেন, সে জীবন ব্যয় হোক দেশ-বিদেশের গরীব-দু:খী, অবহেলিত, নির্যাতিত ও অসহায় মানুষের বিপদের দিনে কাণ্ডারী হয়ে মুক্তিকামী মানুষের উন্নয়ন ও সেবায়।

মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান: পি.এইচ.ডি গবেষক, ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি, চীন এবং শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর