নারীর সম্ভ্রম রক্ষার রাজনীতি

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

কণা ইসলাম, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 23:51:25

আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক নির্বাচনী বিজয়ের আনন্দ দেশ-বিদেশে বসবাসকারী আওয়ামী প্রেমী বাংলাদেশিদের হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে। সেই ছন্দের দোলা আকাশে বাতাসে বইতে আরম্ভ করতে না করতেই দুঃসংবাদ। এক মমতাময়ী মায়ের সন্মানহানির আহাজারির গ্লানিতে আনন্দের ছন্দপতন হল।

এই ধরনের গ্লানি প্রতিটি মানুষের জন্য বড় বেদনাদায়ক। নারীর উপর কিছু পশু প্রবৃত্তির পুরুষের অত্যাচার যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে  নানা স্থানে ঘটে আসছে। যুগে যুগেই নারী পাশবিকতার শিকার। শাস্তির বিধান থাকলেও পশুবৃত্তির পুরুষদের হাতে সম্ভ্রমহারা হচ্ছে নানা স্থানের কত শত নারী।

নারীর প্রতি সহিংসতা ও মানহানির ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটলেই আমার চোখের সামনে ইতিহাসের ৭১ সাল ভেসে আসে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালি নারীর সম্ভ্রমহানির সেই বিভৎস চিত্রগুলো কল্পনায় দেখতে পাই।

মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিষয় আমার মনকে খুব নাড়া দেয় আর সে রকম একটি ঘটনা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চার সন্তানের জননীর সম্ভ্রমহানির ঘটনাটি।২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হবার পর অনেকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছিল। আবার তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরাট বিজয়ের পরপরই। অবশ্যই ঘটনাটি দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।

প্রতিটি সভ্য মানুষের কাম্য এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন কখনও না হয়। গত দশ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন। তিনি নিজে একজন নারী। প্রধানমন্ত্রী হয়ে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে পদস্থ-উচ্চপদস্থ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বয়স্কভাতা ইত্যাদির মাধ্যমে নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তাঁর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে ধাপে ধাপে বাংলাদেশের সামনে উন্নয়নের দুয়ার খুলেছে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী সেই সুবিধার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। নানা ভাবে ঘরে বসে বসেও বিভিন্ন ধরনের অনলাইন বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে। নারী উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের সাফল্যের পথ ধরেই সম্ভব হয়েছে।

আসলে সমসময়ের বাংলাদেশে এটা নারী গণজাগরণ। প্রধানমন্ত্রী নিজে একজন নারী হিসাবে নারীদের নিয়ে তাঁর ভাবনা অনেক। সরকারের বিগত দিনগুলোতে তিনি তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। মানুষের ভালবাসাও তেমন পেয়েছেন। মাদার অফ হিউম্যানিটি, জননী ইত্যাদি বিশেষণে মানুষ তাদের সেই ভালবাসা ব্যক্ত করেছে।

কিন্তু সন্তানের অসন্মান যেমন একজন মাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করে,  তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা জননীর দৃষ্টি নিয়ে নারীদের এ ধরনের লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা করতে কঠোর পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করবেন। দেশ পরিচালনায় দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদির বিরুদ্ধে যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন জাতির কাছে, তেমনই আরো একটি প্রতিশ্রুতি হোক নারীর সম্ভ্রমহানিকারী নরপশুদের কঠোর হাতে দমন করা। এ ধরনের অপরাধের জন্য অপরাধি যে কেউই হোক, অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

সুবর্ণচরের নারী নির্যাতনের ঘটনায় আইন সুষ্ঠুভাবে চলছে দেখে আমরা আশাবাদী। অপরাধী দলের হলেও ছাড় পাচ্ছে না দেখে আমরা নিশ্চিত। আমরা বিশ্বাস করি, জননেত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে আইনের শাসন গতিশীল হবে। অপরাধী শাস্তি পাবে। নারী সমাজ নিরাপদ থাকবে। আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের নারীদের সন্মানহানিকর, লজ্জাজনক অন্যায়-অপরাধ কঠোর ভাবে দমন করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশেই নন, পুরো পৃথিবীর কাছে সম্মানজনক ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবেন।

বিভিন্ন নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নারীর সম্ভ্রমহানির যে ঘৃণ্য রাজনীতি এ যাবতকাল ধরে প্রচলিত রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার মূলোৎপাটন সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা প্রত্যাশা করি, তাঁর সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশে সূচিত হবে 

নারীর সম্ভ্রম রক্ষার রাজনীতি।

কণা ইসলাম, জার্মানি প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিশিষ্ট শিল্পী

এ সম্পর্কিত আরও খবর