মিয়ানমার সংঘাতে সতর্ক নানা দেশ, বাংলাদেশ কোন পথ ধরে চলবে?

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ | 2024-02-19 22:50:35

বাংলাদেশের সীমান্তের পাশে মিয়ানমারে যে সশস্ত্র সংঘাত চলছে, তা আসলে জাতিগত আধিপত্য ও ক্ষমতা বিস্তারের লড়াই। বিভিন্ন জাতিসত্তা জোটবদ্ধ হয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সরকারকে সামরিক দিক থেকে পর্যুদস্ত করে চলেছে। জোরালো লড়াই হচ্ছে বাংলাদেশের লাগোয়া মিয়ানমারের সাবেক আরাকান বা বর্তমান রাখাইন প্রদেশে। যে প্রদেশের বাসিন্দা হলো রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠী।

রাখাইনরা বর্তমান লড়াইয়ে অংশ নিলেও রোহিঙ্গারা আগেই স্বদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলে মিয়ানমারের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে 'না ঘর কা, না ঘাট কা' অবস্থায় রয়েছে রোহিঙ্গারা। তাছাড়া, মিয়ানমার সংঘাতে সতর্ক নানা দেশ। এমন পটভূমিতে বাংলাদেশ কোন পথ ধরে এগিয়ে চলবে, তা নির্ধারণ করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আবার আশ্রয়ের প্রস্তাবে বাংলাদেশের না বললেও সীমান্তের ১৯ পয়েন্টে প্রায় ৯০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। এদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আগেই গুলিবিদ্ধ একজনসহ পাঁচ রোহিঙ্গা টেকনাফে আসেন। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের মুখে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা নিজেদের আদি নিবাস ছেড়ে রাজ্যের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় আসা কয়েক শ’ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। বরং রাখাইনে জাতিসংঘের সক্রিয়তার বিষয়ে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ।

গেল সপ্তাহে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আর সেখানেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ওপারের গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতির কোনো উন্নতিও হচ্ছে না। বরং সংঘাতের ফলে নতুন করে তৈরি হওয়া শরণার্থী সংকট বাংলাদেশ এবং ভারতের জন্য যে নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে তা আগামী দিনে আরও গভীর হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো লক্ষণও প্রতীয়মান হচ্ছে না। মিয়ানমার সংঘাতে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে এগিয়ে আসার তাগিদ দিলেও অন্য কোনো বৃহৎ বা আঞ্চলিক শক্তি এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। মিয়ানমার সংঘাতে লিপ্ত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে চীন ও আমেরিকার সংযোগের ব্যাপারে নানা তথ্য প্রকাশ পেলেও বড় দেশ দুটি এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ইস্যুতে নিজের সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে চলছে। বরং মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতের ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সংকট ক্রমেই দীর্ঘায়িত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনে 'ভারত ও বাংলাদেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে' বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

এমনই পটভূমিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তার ঢাকা সফর নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবজারভেশন থাকলেও বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত যুদ্ধে রূপ নেয়া, সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা, ফের রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা তথা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে আচমকা উদ্বেগ তৈরির প্রেক্ষাপটে ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সিরিজ সফরে আগ্রহী মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সফরগুলো শুরু করতে চায় ওয়াশিংটন। তবে কোনো মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার সহসাই ঢাকা সফর করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, রাখাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মাইন হামলার মাধ্যমে তাংগুপ শহরের কাছে অবস্থিত মা ই সেতু ধ্বংস করে দেয় জান্তা বাহিনী। পরের দিন আরও দুটি সেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়। মা ই সেতু ধ্বংস করতে যে মাইন ব্যবহার করা হয়; সেটি বিস্ফোরিত হয়ে স্থানীয় একটি স্কুলসহ আরও কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি সেনারা রাখাইনের রাজধানী সিত্তেতে প্রবেশের মিন চং (আকা) আহ মিয়ান্ত কায়ুন সেতু ধ্বংস করে দেয়। যা সিত্তে-ইয়াঙ্গুন মহাসড়কের কাছে অবস্থিত। তবে নিজেদের রক্ষায় জান্তা বাহিনী যেসব সেতু ধ্বংস করেছে সেগুলো সাধারণ মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে বিদ্রোহী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।

গত বছরের অক্টোবরে আরাকান আর্মিসহ তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড জোট গঠন করে। এরপর মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত হামলা চালানো শুরু করে তারা। ওই হামলায় টিকতে না পেরে অনেক স্থান ছেড়ে চলে গেছে জান্তা বাহিনী।

মিয়ানমারের তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধে হারছে জান্তা বাহিনী। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ব্রাহারহুড অ্যালায়েন্স একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে তারা জানিয়েছে, জান্তা বাহিনী একের পর এক সেনা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।

বিদ্রোহীদের এ জোট আরও দাবি করেছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছোট ও বড় ক্যাম্পের সেনারা বিদ্রোহীদের কাছে খুব দ্রুতই আত্মসমর্পণ করবে। যেসব ক্যাম্পের সেনারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি; তাদের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির (এএ) যোদ্ধারা হামলা অব্যাহত রেখেছে। আর নানামুখী হামলার মাঝখান বিপন্ন রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে নতুন করে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে।

কয়েক পর্যায়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সরকারিভাবে ১২ লাখ বলা হলেও জন্মহার বৃদ্ধি ও গোপনে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সংখ্যাটি ১৫ লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুযায়ী মনে করা হয়। মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতের কারণে তা আরও বেড়ে যেতে পারে। তদুপরি, এটি এমন একটি সংকট যেখানে আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা তথা আমাদের সীমান্তের পাশে সংঘাতজনিত অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি আশঙ্কাও জড়িত। কারণ, মিয়ানমারে সংকট এখন চরম পর্যায়ে। দেশটির কেন্দ্রস্থল ছাড়িয়ে গৃহযুদ্ধের ছাপ সর্বত্র। সশস্ত্র লড়াইয়ের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। বিশেষ করে, মিয়ানমারে প্রচণ্ড গৃহযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় চলে এসেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সংঘাতকবলিত বিশ্ব মানচিত্রে মিয়ানমার একটি স্পর্শকাতর দেশ। নিরাপত্তার ঝুঁকি ও স্থিতিশীলতার সংকটে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে মিয়ানমারকে গণ্য করা হয়। মিয়ানমারের সংকট ও সংঘাত দেশটির পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ডের জন্যেও বিপদের কারণ হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্তৃত্ব বজায়ের স্বার্থে মিয়ানমারের বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী।

নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশকে সব সময়ই মিয়ানমার বিষয়ে থাকতে হয় সতর্ক। সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহে মিয়ানমারের তীব্র গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা, প্রাণহানি, বোমা ও গোলাবর্ষণের পাশাপাশি সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের অনুপ্রবেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের জন্য।

বিশেষত, মিয়ানমারের সমস্যা যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য মারাত্মক বিপদের বার্তাবহ, তারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে অঘোষিত এক সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। মার্কিন কর্তারাও মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে করতে তৈরি হচ্ছেন।

অতএব, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে সৃষ্ট চরম সংঘাতের ফলে বাংলাদেশকেও প্রস্তুত থাকা দরকার। বিশেষ করে, সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করা জরুরি, যাতে সে দেশের সংঘাত বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে না পারে এবং পরাজিত সেনা, বিদ্রোহী বা নাগরিকদের ঢল এদেশে আসতে না পারে। আগে থেকেই মিয়ানমার থেকে বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই চাপ আরও বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হবে।

যদিও বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তথাপি এতটুকুই যথেষ্ট কিনা, তা বাংলাদেশকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। বাংলাদেশ কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী সর্বোচ্চ করলেও অস্থিতিশীল ও ভঙ্গুর মিয়ানমার এমন একটি দেশ, যারা কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে অনুসরণ করার মতো সক্ষম অবস্থানে আছে কিনা সন্দেহ। কারণ, সামরিক স্বৈরাচার, জাতি-নিধন, সংঘাত, গৃহযুদ্ধ, মাদক ব্যবসা, মানবপাচার ও অস্ত্রের চোরাচালান দেশটির সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে শিথিল করে দিয়েছে। যে দেশ নিজের বহুবিধ সমস্যায় ডুবন্ত এবং যার ক্ষমতা কাঠামো বহুধাবিভক্ত, তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সংকট সমাধানের প্রকৃত দিশা পাওয়া অসম্ভব।

ফলে মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশকে নিজের সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। কূটনৈতিক পন্থা ছাড়াও বিকল্প সমাধানসূত্র ধরে অগ্রসরের চেষ্টাও করতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাত দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে বাংলাদেশের জন্যেও নতুন নতুন বিপদ তৈরি হতে পারে।

বেসামরিক অভিমুখে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলো, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশসমূহ এবং আন্তর্জাতিক শক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ, মিয়ানমারের সংঘাত বাংলাদেশ বা একক কোনও দেশের নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ফলে সমস্যাটি দ্বিপক্ষীয় নয়, বহুপক্ষীয়। যাকে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেইজিং, নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন এবং জাতিসংঘের সঙ্গে দেন-দরবারে লিপ্ত হলে বাংলাদেশকে একাই মিয়ানমারের দিক থেকে আগত যাবতীয় চাপ সামলাতে হবে না।

সামরিক অভিমুখেও সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে বাংলাদেশকে। সামরিক বাহিনীকে সদাপ্রস্তুত রেখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে চেষ্টা করতে হবে যেন মিয়ানমারের বিবাদের কারণে আমাদের সীমান্তে সংঘাত-পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মিয়ানমার সেনা ও বিদ্রোহীরা যখন বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেখবে, তখন এদিক থেকে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হবে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র দল আরাকান আর্মিসহ অন্য ফ্যাক্টরগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনকে স্থিতিশীল করা বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। এতে সীমান্ত উত্তেজনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ মসৃণ হবে।

সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের পরিস্থিতিগুলো বাংলাদেশের নীতি প্রণেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক কৌশলী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ-গবেষকদের গভীর মনোযোগের আওতায় থাকা অপরিহার্য। সেখানকার চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং বিবদমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ও পর্যবেক্ষণমূলক ধারণা বাংলাদেশকে কার্যকর পন্থা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে পথ দেখাতে পারবে।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে একটা যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এসব কথা বলেন।

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর