ঐক্যের ভুল সফর

, যুক্তিতর্ক

তুষার আবদুল্লাহ | 2023-08-29 12:19:35

ভুল বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া ঠিক হয়নি। এমন উপলব্ধি আমাদের সকলের জীবনের অভিজ্ঞতালিপিতে আছে। সফরে গেলে বন্ধু বা মানুষ চেনা যায় একথা কৈশোর বেলা থেকে শুনে আসছি। তারপরও কখনো কখনো ভুল মানুষের সঙ্গে সফরে বেরিয়ে পড়ি। মানুষটাকে বা মানুষদের পুরোপুরি না জেনেই। বন্ধু ভাবি। বন্ধুর ভনিতা থাকে ঐ পক্ষেরও। আবার কখনো জেনে বুঝেই হাতে হাত ধরে পথে নামি। পরে প্রতারিত হলে লজ্জা ঢাকতে গিয়ে বলি-তাকে আমার জানা ছিলো না। না বুঝেই হাতে হাত রেখেছিলাম। তওবা করছি অমন মানুষের সঙ্গে আর নয়।

ড.কামাল হোসেনের বেলাতে কোনটি ঘটেছিল? ঐক্যফ্রন্ট গড়তে যেয়ে যাদের সঙ্গে তার রাখি বন্ধন হয়েছিল, কেউ তার কাছে পুরাতন নন। সকলের রাজনৈতিক আমলনামা তার জানা। কেউ কেউ পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মীও ছিলেন। এই পুরাতন মানুষেরা কোন সূতোয় বাঁধা তাও তার অজানা থাকার কথা নয়। তারপরও তিনি তাদের সঙ্গে ভোট সফরে নেমেছিলেন।

সফর কাঙ্ক্ষিত ইষ্টিশনে পৌঁছতে পারেনি বলে অনেকের ধারনা। তবে ড. কামাল হোসেন নিজের মধ্যে যে ইষ্টিশন তৈরি করে রেখেছিলেন, সেটি কি এমন- ২০১৪ তে বাইরে থাকা বিএনপিকে ভোটে নিয়ে আসা। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক সম্বোধনের মোড়ক দেয়া। যদি তাই হয়, তাহলেতো তিনি ইষ্টিশনের দেখা পেয়েছেনই।

তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই ভোট সফর নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। মানে ড. কামাল হোসেন যাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে তাকে নাকি ঠিক মানাচ্ছিলনা। বিশেষ করে জামায়াতও ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ভোট করাই তিনি আরো সমালোচিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে ভোটের আগে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল কম হয়নি। ভোটের ভরাডুবি হওয়ার পর ড. কামাল হোসেন ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিচ্ছিলেন। শনিবার এসে তিনি অনেকটাই নিজেকে ঝেঁড়ে পরিচ্ছন্ন করে নিতে চাইলেন। বললেন-জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করা অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। তিনি বললেন-জামায়াতের সাথে রাজনীতি কখনো করিনি , ভবিষ্যতেও করবোনা। এবং জানালেন-আমি যখন ঐক্যে সম্মতি দিয়েছি তখন জামায়াতের কথা আমার জানা ছিলনা। এটা ঐক্যফ্রণ্ট গঠনে ভুল ছিল। ড.কামাল হোসেনের মতো জেষ্ঠ্য নাগরিক, আইনবীদ জানতেননা বিএনপির সঙ্গে জামায়াত লেপ্টে আছে। এমন জবানবন্দি ২০১৯র ভোটার বা সাধারণ নাগরিকেরা বিশ্বাস করবেন বলে বিশ্বাস হয় না।

তবে যে কথাটি আম জনতা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে বা তারা যা এতো দিন ভেবে আসছিল, তাই সত্য বলে প্রমাণ পেলো-ঐক্য ফ্রন্টের হোম ওয়ার্ক ভালো ছিলো না। তাদের মধ্যে বোঝাপড়ায় ঝামেলা ছিল। শুরু থেকেই তারা বলতে পারেননি ঐক্য ফ্রণ্ট জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী। এবং জামায়াত নিয়ে নিজেদের মধ্যেও অস্বস্তি ছিল। এমন অস্বস্তি স্রোতের নিচে বয়ে চলা মতবিরোধ নিয়ে ঐক্য গিঁট ধরে রাখা সম্ভব নয়। তারপরও তাদের সাধ হয়েছিল সফরে যাবে। সেই সফরের সাধ মিটিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। সেজন্য তিনি ঐক্যের শরিকদের কাছ থেকে বাহবা পেতেই পারেন।

২০১৪তে নিশ্চিত সফরের দাওয়াত ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে বিএনপি এবং তার ঘনিষ্ঠরা লজ্জা পাচ্ছিলেন এবার যাত্রা করতে, মুরব্বী বা অভিভাবক হিসেবে ড. কামাল হোসেন সেই লাজ ভাঙ্গিয়ে দিলেন। তবে এই সফর থেকেও যতোটুকু উপহার তারা কুড়িয়ে পেয়েছেন, তা নিয়ে সংসদে যাওয়া দরকার বিএনপি ও গণফোরামের। আগামী সফর, তা একটু দূরের হলেও প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে সংসদে তাদের উপস্থিতি।

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর