স্মার্ট বাংলাদেশ: স্বপ্ন-সত্যে ধাবমান সময়

, যুক্তিতর্ক

হায়দার মোহাম্মদ জিতু | 2024-03-16 20:11:59

শিল্পীরা ঘুমিয়ে পড়লে যেমন শয়তান সুযোগ নেয়, তেমনি সমাজ, রাজনীতিতে সততার শূন্যতায় অসুরেরা মাথা চাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন শূন্যতা দৃশ্যমান হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এই অশনি দূর হতে শুরু করে। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং ভাত ও ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় লড়াই শুরু করেন। উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিকতায় সেই বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল ব্যবস্থা থেকে স্মার্ট অবস্থার দিকে অগ্রসরমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে, যা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের প্রান্তিক থেকে শহুরে, সব ব্যবস্থার জনগোষ্ঠীর জীবনমানের সুষম উন্নয়ন ঘটছে। প্রাসঙ্গিক হিসেবে বলা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষ এবং একজন শহুরে মানুষ সমান প্রযুক্তিগত সুবিধা পাচ্ছেন। এর প্রমাণ ২০০৮ সালে যেখানে দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা চার কোটির কম ছিল ২০২৩ সালে এসে তা ১৮ কোটি ৮৬ লাখে পৌঁছেছে অর্থাৎ প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণেই গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে।

ই-গভর্নেন্স পোর্টাল এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে নাগরিকরা দ্রুত ও সুবিধাজনকভাবে সরকারি পরিষেবা, তথ্যসেবা পাচ্ছেন। বর্তমানে 'বিকাশ', 'রকেট', 'নগদ'-এর মতো ‘মোবাইল আর্থিক সেবা’র মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজতর হয়েছে এবং পরনির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামে বসেও উন্নত ব্যাংকিং সুবিধা ভোগ করা যাচ্ছে। এই সব কারণে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে আছে। তথ্য মতে, দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতি মাসে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে।

জন্মসনদ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে অনলাইনে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা, ডিজিটাল গভর্নেন্স উদ্যোগ সময়ক্ষেপণ কমিয়েছে এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে। স্কুলগুলোকে ডিজিটাল সরঞ্জাম সরবরাহ ও শিক্ষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করার মধ্য দিয়ে শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। হাইটেক পার্কসমূহে ২৩০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি পার্কে ২৮ হাজারের বেশি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদা বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩৫ হাজার ৩শ ১৫ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরো ৪৫ হাজারকে প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে জনবল রপ্তানির পথও তৈরি হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারীদের সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড রোগীর তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা দিচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ একটি স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার লক্ষ্যকে আরো পোক্ত করছে। একারণেই নগর পরিকল্পনা, পরিবহন এবং জনসাধারণের পরিষেবাগুলি সহজতর করার জন্য স্মার্ট শহর নির্মাণে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে৷ বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৬শ ২টি ডিজিটাল সেন্টার, ৮ হাজার ২শ ডিজিটাল ডাকঘরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য ৬শ ধরনের ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর বাইরে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ও আধুনিক ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদানের কাজও জোরেশোরে চলছে। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সহজেই যে কেউ এই সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারছেন। হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে জরুরি সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সেবা পাচ্ছে জনগণ।

আত্মবিশ্বাসের বিষয়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি ফ্রিল্যান্সার সরবরাহক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের আওতায় ১৫ বছরে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সাড়ে ৬ লাখ, সফটওয়্যার শিল্পে আইটি ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার শিল্পে ৩ লাখ, হার্ডওয়্যার শিল্পে ৫০ হাজার, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংখাতে (বিপিও) ৭০ হাজার, ই-কমার্সে ৩ লাখ এবং রাইড শেয়ারিং, ফিনটেক, এডুটেক, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে প্রায় ২০ লাখের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

নাট্যকার সিরাজুল ইসলাম সিরাজের নাট্য সাহিত্যের আঞ্চলিক সংলাপ, 'বোঝেন ঠিক-ই তয় একনা (একটু) নেটে (লেটে)। অর্থাৎ সবই বোঝা হয় কিন্তু একটু বিলম্বে। বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার উন্নয়ন অর্জনের দর্শনবিরোধীরা বুঝতে দেরি করে ফেলেছেন। এজন্যই জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী এবং আগুন সন্ত্রাসের বারংবার পরাজয় ঘটছে এবং বাঙালির স্বপ্ন-বিশ্বাস শেখ হাসিনা বারবার বিজয়ী হচ্ছেন।

বর্তমান সময় ‘ভবিষ্যত-ইতিহাসের’ সন্ধিক্ষণে পা রাখার প্রাথমিক ধাপ। বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা ইতিহাস, ঐতিহ্যের আলোকে ভূ-রাজনীতির খেলাকেও জয় করে চলেছেন। দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এটাই সত্য, সুন্দর এবং ভবিষ্যত বাস্তবতা!

লেখক: রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব, ইমেইল: haiderjitu.du@gmail.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর