ভোটার হবো, কিন্তু ভোট দেয়ার সুযোগ পাবো তো?

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

প্রভাষ আমিন   | 2023-09-01 08:40:09

১ মার্চ পালিত হবে জাতীয় ভোটার দিবস। প্রথমবারের মত পালিত হতে যাওয়া জাতীয় ভোটার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য 'ভোটার হব, ভোট দেব'। নির্বাচন কমিশন সবাইকে ভোটার হতে এবং অন্যকে ভোটার হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার আহবান জানিয়েছে। কিন্তু জাতীয় ভোটার দিবসের আগের দিন ভোটের নামে যে প্রহসন হচ্ছে, তাতে মানুষ ভোটার হতে আগ্রহী হবেন বলে মনে হয় না। অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে যা হচ্ছে, তাকে প্রহসন বললে, 'প্রহসন' শব্দটি মাইন্ড করতে পারে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ভোটের চিত্র দেখতে গিয়ে বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর। তিনি খুব একটা ভুল বলেননি। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে ভোটারদের কী দায় পড়েছে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার নেই বললেই চলে। সকালে বাসা থেকে বেরোনোর সময় বাসার সামনের মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের কেন্দ্র হয়ে আসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ছবি বুকে লাগিয়ে কয়েকজন তরুণ ঘোরাফেরা করছেন। এছাড়া আর সব সুনসান নীরব। কেউ বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই, এটা ভোটকেন্দ্র। রিপোর্টাররাও একই রকম খবর দিলেন। সবই আছে, খালি কেন্দ্রে ভোটার নেই। ২/৩ ঘণ্টায়ও কোনো ভোটার আসেনি, এমন খবরও আছে।

এই ভরা বসন্তেও প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। সেই শীতের প্রভাব ভোট কেন্দ্রেও। কাল একটি লেখায় লিখেছিলাম, এটি স্মরণকালের সবচেয়ে নিরুত্তাপ নির্বাচন। এখন তার সাথে যোগ করছি, এটি সবচেয়ে কম ভাোটারের এবং সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনও। কিন্তু এতসব রেকর্ডের নির্বাচনটি দেখার জন্য ভোটাররা কেন্দ্রে আসেননি। বরং হঠাৎ পাওয়া ছুটিটি নগরবাসী উপভোগ করছেন প্রাণভরে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সবাইকে খিচুরি ও গরম চা খেয়ে ভোট কেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু তার আহবানে খুব বেশি লোক সাড়া দেয়নি।

ভোটাররা কেন্দ্রে না আসার অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথম কথা হলো, নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আতিকুল ইসলামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদ রাজনীতিকি হিসেবে যতটা না পরিচিত, তারচেয়ে বেশি পরিচিত সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে। বিপুল ভোটে না হলেও বিশাল ব্যবধানে আতিকুল ইসলামের জয় নিশ্চিত। ফলাফল এতটা নিশ্চিত হলে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন কেন। তারচেয়ে বড় কথা হলো, এটি উপ-নির্বাচন, যিনি মেয়র হবেন, তিনি বছর দেড়েক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এখন তো মনে হচ্ছে, আতিকুল ইসলাম নিজেও চক্ষুলজ্জার কারণে ভোট দিতে গেছেন। না গেলেও খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলে যে ৩৬টি ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে কিন্তু ভোটাররা কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

কারা নির্বাচনে আসবে না আসবে সেটা নির্বাচন কমিশন বা আতিকুল ইসলামের দায় নয়। আনিসুল হক মারা যাওয়ার রুটিন মেনে কমিশনকে একটি উপ-নির্বাচনের আয়োজন করতেই হতো। আর আতিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন ভোটাররা না এলে তারা কী করবেন। তবে চাইলে কি নির্বাচনের নামে এই প্রহসনটি এড়ানো যেতো? গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা যেভাবে ওলটপালট করা হয়েছে, তাতে চাইলে এ নির্বাচনটিও এড়িয়ে আতিকুল ইসলামকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা যেতো। আতিকুল ইসলামের যে চারজন নামকাওয়াস্তে প্রতিদ্বন্দ্বী, চাইলে কথা বলে তাদের নিবৃত করা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর যে সমালোচনা হয়েছে, তাতে মনে হয় সেই ঝুকিতে আর যেতে চায়নি সরকার। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে আতিকুল ইসলামকে যতটা সমালোচনা সইতে হতো, এখন সইতে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। লোকজন বিনা কারণেই তাকে ভোট ডাকাত বলছে। ডাকাতি করার মত পরিস্থিতিও আসলে ছিল না।

শুরু করেছিলাম জাতীয় ভোটার দিবসের কথা দিয়ে। ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের চিত্র দেখে ভোটার হওয়ার যোগ্য কোনো তরুণ যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে প্রশ্ন করেন, ভোটার না হয় হবো। কিন্তু ভোট দেয়ার সুযোগ পাবো তো? কী জবাব দেবেন কে এম নুরুল হুদা। ভোটাররা কেন্দ্রে না আসার দায় অবশ্যই নির্বাচন বর্জন করা রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না, সে দায় কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেই নিতে হবে।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর