গত আট মাসে সড়কে দৃশ্যমান কী হয়েছে!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মাজেদুল নয়ন | 2023-08-13 14:16:26

শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয় বাসের চাপায়। ঘাতক বাসের নাম ছিল ‘জাবালে নূর’। গেলো বছরের জুলাইয়ের শেষ দিন থেকে শহর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। টানা এক সপ্তাহ সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে একগাদা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন তারা।

আবারো গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সড়ক রক্তাক্ত হয়েছে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের লাশে। জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর ছাত্রকে পিষে দিয়ে গিয়েছে ঘাতক ‘সুপ্রভাত’ বাস। ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। একটি সূচিতে ফেলে দেওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধ হবে, শহরের নেতৃত্বস্থানীয় কেউ গিয়ে প্রতিশ্রুতি দেবেন, ওই বাসের নিবন্ধন বাতিল করা হবে, একটি ফুটওভার ব্রিজ করা হবে; আরো অনেক অনেক। এরপর মাস ঘুরতেই আবার পুনরাবৃত্তি হবে।

এই শহরে যারা প্রতিদিন সড়কে যাতায়াত করেন, তারা কি কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করতে পারবেন? গত ৮ মাসে? হ্যা, আছে। একটি বিষয় কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, মোটরসাইকেলের পেছনের যাত্রীদের মাথার হেলমেট। পথে-ঘাটে ভীষণভাবে মানা হচ্ছে বিষয়টি। কেউ যদি মানুষের সচেতনতার কথা বলেন, তার সঙ্গে একমত হওয়া যায় না। কারণ রাজধানীতেই এই বিষয়টি কঠোরভাবে মানা হচ্ছে আর তার কারণ আইনের কঠোর প্রয়োগ। এখন মোটরসাইকেল চালকরা নিজেরাই দু’টি হেলমেট রেখে দেন।

শহরের পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেক পোস্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট না থাকা মানুষ থাকলেও ভয়ে নামিয়ে দেন বাইকাররা। কেউই চান না, একটি মামলা খেয়ে ভোগান্তি পোহাতে! এখানে ট্রাফিক সপ্তাহ বা চেকপোস্ট মানেই মোটরসাইকেলের হেলমেট আর কাগজপত্র যাচাই করা। মাঝে মাঝে সিএনজি আর পিকআপকেও চোখে পড়ে এই নিরাপত্তার চাদরে ধরা পড়তে।

একবার মালয়েশিয়ার একটি প্রথম সারির দৈনিকের প্রথম পাতায় একটি রিপোর্ট পড়েছিলাম। শহরের একটি ব্যস্ত সড়কে জেব্রা ক্রসিং পার হওয়ার জন্য ফুটপাথটি উপযুক্ত নয়। সে নিয়ে কী হৈ-চৈ! তবে ঢাকায় এটা আশা করার অধিকার আমাদের নেই। তবে শুধু গাড়ির ফিটনেস নয়, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে বা রাস্তার মাঝপথে বাস থামানোর অপরাধে পুলিশ মামলা না করুক, অন্তত ডেকে চা-পানি খাইয়ে হলেও জিজ্ঞাসা করবেন! এটুকু তো আমরা চাইতেই পারি!

যারা আমরা প্রতিনিয়ত এই শহরে চলাচল করি, নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়া দৃশ্য হচ্ছে- বাসগুলোর সড়কে এলোপাতাড়ি চলাচল। এই শহরে হাতিরঝিল আর গুলশান ছাড়া কোথাও স্টপেজে বাস থামে, এমনটা দেখা যাবে না। সড়কের যেখানে ইচ্ছে সেখানে বাস দাঁড়িয়ে যায়। বাসগুলোর পাঁচ ভাগেরও নেই দিক নির্দেশক বাতি। ফলে পথচারী থেকে শুরু করে সামনের ও পেছনের অন্য চালকদেরও বোঝার উপায় নেই, বাসটি কোনদিকে যাবে!

নগরের রামপুরা, কাকরাইল, পল্টন মোড়, উত্তরার জসিমউদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট; সবখানেই এই একই চিত্র দেখা যাবে। সবখানেই দেখা যাবে সিগন্যাল ছাড়ার পর ট্রাফিক হয়তো লাঠি নাড়িয়ে বাস চালকদের তাড়া দিচ্ছেন। তবে তাদের এই বিষয়ে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। ধীর লয়ে বাসের শরীরকে বাঁকিয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করান তারা। এটা কিন্তু এমন না যে তারা বাসের ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে থাকেন! বরং বাসের গতি হাঁটি হাঁটি পা পা ফরমেটে নিয়ে আসেন। এ কারণে সিগন্যাল ছুটলেও সড়কে দীর্ঘ জানজট লেগেই থাকে।

সড়কের মাঝখানে কেন মন্থর হয়ে যাত্রী ওঠানামা করে বাসগুলো। উত্তর যে কারোরই জানা, পেছনের বাস যেন সামনে যেতে না পারে এবং তার সময়ের যেন অপচয় না হয়। কারণ আরো দশ হাত দূরে আরেকজনকেও তো উঠাতে হবে।

আর কি কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে? এই শহরে অনেক আগে থেকেই মানুষ ফার্মগেট এবং জসিমউদ্দিন সড়কের দু’টি ওভারব্রিজ মেনে চলেন, আরগুলো নয়। কারণ এই দু’টিতে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার উপায় নেই। আর ওভারব্রিজের ধারণা থেকেই তো এখন দুনিয়া সরে আসছে। বরং টানেল এবং জেব্রা ক্রসিংকেই গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নত দুনিয়া। সেখানে আমরা দুর্ঘটনা হওয়ার পরই একটি করে ওভারব্রিজ নির্মাণ করে যাচ্ছি।

গেলো আগস্টে শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়েছিল। এরপর আবার ঘরে ফিরে গেছে। এবার আবারো আট দফা দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। তবে আদৌ কি কোনো পরিবর্তন হবে সড়কে? যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ না হয়!

মাজেদুল নয়ন: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর