বল্গাহীন আবহাওয়া, চৈত্রেও কুয়াশা!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:21:12

বাংলাদেশের আবহাওয়া এখন আর কোনও শৃঙ্খলা মানছে না। বল্গাহীন গতিতে চলছে আবহাওয়ার খেয়ালিপনা। এই ভরা চৈত্রে দিগন্তে মেলে দিচ্ছে কুয়াশার চাদর।

চৈত্রের উষ্ণতা মাখা এলোমেলো বাতাসের বদলে রাতে ও ভোরে শিশিরধৌত ভেজা ভাব চারপাশে। আঠালো ঠাণ্ডা লেপ্টে আছে চৈত্রের অনেকটা শরীরে। আগুন-লাগা পলাশে শিমূলে দাবদাহের চৈত্র এখনও অনুপস্থিত। বরং চৈত্রকে খর গ্রীষ্মের দোসর না ভেবে মনে হচ্ছে শীতের প্রতিবেশী!

কেন এমন হচ্ছে? আবহাওয়া তার নিজস্ব চরিত্র খুইয়ে ফেলছে? জলবায়ুতে ঘটছে তুমুল পালাবদল? আমাদের শৈশবে, কৈশোরে প্রতিটি ঋতুর যে স্পষ্ট উপস্থিতি ছিল, তা যেন নড়ে যাচ্ছে। কেউ টেরই পাচ্ছে না শরৎকাল। হেমন্ত হয়ে গেছে আরও নিভৃতচারী। কখন এসে কখন চলে যাচ্ছে, কেউ জানতেও পারছে না। প্রলম্বিত হয়েছে কোনও ঋতু, কোনটি হয়েছে ক্ষীণতর। দিনে দিনে বহু বৈচিত্র্যের ষড়ঋতু চিত্রিত বাংলাদেশ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের সীমিত ত্রিকালে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

অনেকেই 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং' বা 'বৈশ্বিক উষ্ণায়ন'-এর কথা বলবেন। বলবেন 'জলবায়ু পরিবর্তন' বা 'ক্লাইমেট চেঞ্জ'-এর কথা। কিন্তু পরিবর্তনগুলো যে এতো তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হয়ে আমাদের সামনে এসে ঘিরে ধরবে আমাদেরকেই, তা তো কল্পনার বাইরে ছিল!

লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে, আবহাওয়ায় চলছে চরম ভাবাপন্নতা। কখনও প্রচণ্ড গরম, আবার কখনও শীত। আবার এই চৈত্রেও কখনও কখনও কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রার উত্থানপতনে বাড়ছে নানারকম অসুখ-বিসুখ।

অথচ শীত ঋতু চলে যাওয়ার সময় একমাস পেরিয়ে গেছে। শুরু হয়েছে গরম। কিন্তু চৈত্রের প্রথম সপ্তাহেও সকালে কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে। এখন দিনের বেলায় বেশ গরম পড়ছে। মধ্যরাত পর্যন্ত গরম ভাব থাকে। ফলে মানুষজন ফ্যান চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

আবার মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হয় শীত। কিন্তু গভীর ঘুমের কারণে মানুষ টেরও পায় না। ফলে শিশু থেকে নানা বয়সের মানুষ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কারো সর্দি-কাশি হচ্ছে, কারো গলা বসে যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

শীত আসার আগে এবং শীত চলে যাবার পর ঋতু সন্ধিক্ষণে বা ‘সিজন চেঞ্জ’ হবার কালে সবসময়ই এ রকম তাপমাত্রার তারতম্যজনিত কারণে নানারকম অসুখের চিত্র দেখা যায়। এবারও তাই হচ্ছে। তবে সেটা অনেক বেশি।

বাংলাদেশের সর্বত্রই ঋতুর বদল টের পাচ্ছে মানুষ। বহুবর্ণা ঋতুকে বদলের মাতাল তোড়ে আদি ও অকৃত্রিম রূপে দেখা হচ্ছে না। প্রকৃতির এই দামাল গতির সামনে মনে হয় আমার জীবন থেকেই বসন্ত চলে যাচ্ছে। আবার এটাও সত্য যে, আমার উত্তর-প্রজন্মের জীবনে তখন বসন্ত আসছে। বসন্তের এই ওঠাপড়ার মধ্যেই বেঁচে থাকে ঋতু ও তার পালাবদল। এমন দারুণ পালাবদলে মনে পড়ছে কবির কথা:
'কী বলতে চেয়েছিল?
আঠাশ বছর আগে?
তার সেই কথা হয়তো জানতো বসন্তের শান্তি নিকেতন।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর