ফাঁকি দিয়া আনলু চিলমারী

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

নাহিদ হাসান | 2023-08-30 21:35:32

১.

যে ডাকাত নারীর অসম্মান করে সে ডাকাতের আয়ু শেষ হয় বলে কথা চালু আছে এই এলাকায়। সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ সে, তার সহডাকাতরাও তাকে আস্ত রাখে না। যে এলাকায় নারীর অসম্মান হয় সে এলাকায় আল্লাহর গজব পড়ে। অথচ এই এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা সত্য হলে কী আজাব পড়বে এই আশঙ্কায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষ।

ওই দিন স্কুলছাত্রীটিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান আজিবর রহমান। তার ফাঁকা বাড়ির একটি ঘরে নিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছে মেয়েটির পরিবার।

রাজীবপুর থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর গত বুধবার রাত ৯টার দিকে কথা হয় নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত ও তার পরিবারের সবাই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। আমরা যাতে থানায় যেতে না পারি সে জন্য গ্রামে পাহারা বসিয়েছে। পাঁচ দিনের মাথায় পালিয়ে থানায় এসেছি। থানায় অভিযোগ দিছি, এ খবর পাইলে তারা যে কী করে আল্লাহই জানে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ধর্ষকের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে অপরাধ করলে তার বিচার করতে চাইছি। এর পরও শুনছি থানায় অভিযোগ দিছে। অভিযোগ দিয়া দেখি আমাদের কী করতে পারে।’

রাজীবপুরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত শনিবার, ২০ এপ্রিল সকালে ঘটনাটি ঘটে রাজীবপুরের দুর্গম শংকর মাধবপুর চরে।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর অভিযুক্ত আজিবর রহমান ও তার বাবা ইসমাইল হোসেন নির্যাতিত পরিবারটির ওপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেন, যাতে পুলিশের কাছে যেতে না পারে। একই সঙ্গে সালিস বৈঠকে অভিযুক্তকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে, এমন আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করে অভিযুক্তের পরিবার। ঘটনার পাঁচ দিনেও কোনো বিচার না পেয়ে নির্যাতিত পরিবারটি অভিযুক্তের পরিবারের কড়া পাহারা এড়িয়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজীবপুর থানায় গিয়ে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করে।

এ ব্যাপারে রাজীবপুর থানার ওসি পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে মামলা নেওয়া হবে।’ এদিকে সাংবাদিকের ভাষ্য মতে, ডাক্তার জানিয়েছে-ধর্ষণের নমুনা আপাতত পাওয়া যায়নি।

এদিকে স্বজনকে খুঁজতে টাঙ্গাইল থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে এসে এক গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এঘটনায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

২.

দেশের অন্যান্য জেলার মানুষরা কুড়িগ্রামের মানুষদের সরল এবং অতিথি পরায়ণতার কারণে বিশ্বাস করে থাকেন। কিন্তু ধর্ষক রঞ্জু মিয়া কুড়িগ্রামের মানুষের প্রতি সেই আস্থার জায়গাটি নষ্ট করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী বশির আহমেদ।

৫ মাস আগে রাজিয়া চিলমারী চলে আসলে রঞ্জু মিয়াই কিন্তু মিমাংসা করে মেয়েটিকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে একটা আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। হতে পারে সেটা তার অভিসন্ধি। যে বিশ্বাসের জায়গাটিকে কাজে লাগিয়ে তারা এই অমানবিক কাজটি করেছে। ফাঁকি দিয়া আনলু রে চিলমারী!

এটা এখন একটা গণধষর্ণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিষয় নয়। বিষয়টি পুরো জেলার মানুষের সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গাকে নড়বড়ে করে দেয়ার মতো একটা পরিস্থিতি। সে কারণে প্রকৃত সকল ধর্ষকদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনও ভাবেই যেন বিষয়টি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মুখোমুখি না হয়, সেদিক চ্যাতন থাকতে হবে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন গণকমিটির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জামিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, সংস্কৃতির কথকতার খন্দকার আরিফসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গণকমিটির তাজুল ইসলাম বলেন, এতদিন ধর্ষণ শহরে, পাহাড়ে ছিল। চরের মানুষের কাছে নারীর সম্মান সর্বোচ্চ, সেই চরে আজ এই ঘটনা-মানুষ যাবে কোথায়?

চিলমারী নদী ভাঙনের জন্য এখনও স্থানীয় মানুষেরা ৭১-এ এক বিহারী নারীকে গণধর্ষণের জন্য দায়ী করেন, ৭১-এ পাকিস্তানিদের পরাজয়ের জন্যও ধর্ষণকে দায়ী করে। তারা বলে, যদি পাকিস্তানিরা খালি ধর্ষণ না করিল হয়, তাইলে ওমাক হারে দেওয়া কঠিন আছিল। দুর্ধর্ষ পঁচু ডাকাত নিহতের জন্যও দায়ী করা হয় নারীর অপমানকে।

চিলমারীর মানুষ আতঙ্কিত, এবার কোন গজব নামি আসে ফির!

নাহিদ হাসান: সভাপতি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ণ গণকমিটি

এ সম্পর্কিত আরও খবর