ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেওয়ার দাবি ভারতেই

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

আলম শাইন | 2023-08-31 19:36:57

ফারাক্কা বাঁধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত। বাঁধটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে, আর শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। এটি দৈর্ঘ্যে ২২৪০ মিটার এবং গেটের সংখ্যা ১০৯টি। যার ফলে ভারত ইচ্ছেমতো গঙ্গার পানি যেমনি আটকে রাখতে পারে তেমনি ছেড়েও দিতে পারে। অর্থাৎ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে মর্জিমাফিক জলবণ্টন করার একচেটিয়া সুযোগ পেয়েছে ভারত।

৪৩ বছর আগে রাজনীতিবিদ মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে লং মার্চ পর্যন্ত হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। জনমত গিয়েছে ভারতের বিপক্ষে। ইস্যুটি দীর্ঘদিন চাপা থাকলেও পুনরায় ২০১৬ সালে আলোচনায় এসেছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দাবির প্রেক্ষিতে।

বাঁধটি যে বাংলাদেশ তথা বিহার প্রদেশের জন্যে একটি মরণ ফাঁদ, সেটি স্পষ্ট হয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। দেরিতে হলেও তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন ফারাক্কা বাঁধের কুফলের বিষয়টি। অযাচিতভাবে নদী শাসন যে সুফল বয়ে আনে না, তার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করে ফারাক্কা বাঁধটি স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়ার দাবি রেখেছিলেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গায় বিপুল পরিমাণ পলি জমেছে, যার ফলে বিহার প্রতিবছর বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমরাও একমত না হয়ে পারিনি। ফারাক্কা বাঁধের কারণে শুধু বিহার-ই নয়, বাংলাদেশও বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি বাংলাদেশের নদ-নদীতে প্রবাহিত না হওয়ায় নদীগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ছে এবং তারই প্রভাবে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চল মরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শুধু বিহারের মুখ্যমন্ত্রীই নন, ভারতের আমজনতার মুখে মুখেও কথাটি প্রচারিত হচ্ছে। হালে ভারতের নামকরা সংরক্ষণ অ্যাক্টিভিস্ট ও নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেত্রী মেধা পাটকর সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘একটা বাঁধের প্রভাব যদি খুব ধ্বংসাত্মক হয়, তাহলে সেটা ডিকমিশন করা প্রয়োজন। এরকম অসংখ্য নজির বিশ্বে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও শতাধিক ড্যাম ভেঙে দিয়ে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

যাই হোক, উক্ত বাঁধটির কুফল নিয়ে আমাদের আর বেশি কিছু বলার নেই। তবে যা বলার আছে সেটি হচ্ছে, ভারত যে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, সেটা ওই দেশটিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া।

দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের আন্তরিক সহযোগিতার কথা আমরা ভুলতে পারিনি আজও। যার ফলে দেশটির সঙ্গে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়েছে। সেই বন্ধন আজও অটুট। সেই বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে কখনো কৃপণতা করেনি দেশের মানুষ। আমরা চাই, কোনো একটি বিষয়ের জন্য একটি বন্ধু রাষ্ট্র সম্পর্কে যেন জনমনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি না হয়। ভারত যেন তা বুঝতে সক্ষম হয়। সেই বিষয়টি পর্যালোচনা করে ভারত সরকার যেন ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়।

দাবি রাখছি, ভারত সরকার বাঁধটি স্থায়ীভাবে সরিয়ে ফেলুক। তাতে বাংলার মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন পাবে ভারত। তাহলেই সার্থক হবে দু’দেশের বন্ধুত্বের বন্ধন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সহায়তাটার বিষয়টিও স্মরণে আসবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। সেই আবদার নিয়ে আমরা দাবি রাখছি, ছিটমহলের মতো যেন ফারাক্কা বাঁধেরও সমাধান করতে সক্ষম হন ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ভারতের নতুন সরকারের কাছে আমাদের এটিই দাবি থাকবে।

আলম শাইন: কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর