বাইক তাণ্ডবে মৃত্যুর মিছিল!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:40:21

শখের বা কাজের প্রয়োজনে মোটরসাইকেল (মোটরবাইক) চালানোর রেওয়াজ বদলে গেছে মনে হয়। মুষ্টিমেয় লোকই তা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইক ব্যবহার করা হচ্ছে কিশোর-তরুণদের বেপরোয়া উল্লাসে। ফলে বাইক তাণ্ডবে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর মিছিল।

ঈদের আগে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুজিত কুমার বলেছিলেন, জরুরি বিভাগে ঈদের আগেই প্রতিদিন প্রায় তিনশ’র মতো রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যেভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে এর প্রতিকার প্রয়োজন। ঈদের ৭২ ঘণ্টায় শুধুমাত্র বাইক দুর্ঘটনায় সারা দেশে মারা গেছেন ২২ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

বাইক দুর্ঘটনার সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখা গেছে।

১. চালক, আহত, নিহতরা কম বয়সী কিশোর বা তরুণ।

২. দুর্ঘটনাগুলো হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক, আহত ও নিহতরা আইন মান্য করে নির্ধারিত গতিসীমায় চলেননি। হেলমেট ব্যবহার করেননি।

৪. বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চালকের লাইসেন্স ছিল না।

৫. দুর্ঘটনা কবলিত বাইকের হয় গতি সীমা বেশি ছিল, নয় রং-সাইডে চালানো হচ্ছিল, কিংবা অধিক আরোহী ছিলেন।

এসব তথ্য থেকে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় স্পষ্ট হয়। তা হলো, বাইক চালানোর সময় আইন-কানুন তোয়াক্কা না করার ড্যাম-কেয়ার ভাব। একজন চালকের ও সহযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত মারাত্মক। এমন লাগামহীন মনোভাব সড়ক নিরাপত্তা নস্যাৎ করার একটি বড় কারণ। যদিও এনিয়ে বেপরোয়া বাইক চালকদের ভ্রূক্ষেপ নেই।

বরং এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে গ্রামে-গঞ্জে, মফস্বলে বাইক এখন 'স্ট্যাটাস সিম্বল' এবং 'পাওয়ার আইটেম' হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রী, এমপি তো বটেই, তস্য চেয়ারম্যান, মেম্বাররাও মিছিল, সমাবেশ, শো-ডাউনে মোটর বাইকের বহর নিয়ে চলেন, যাদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের তরুণ-যুবক।

ক্ষমতার আগে-পিছে থাকার সুবাদে বাইক মালিক ও চালকরা নিজেদেরও স্বাভাবিক ভাবে ক্ষমতাবান ভাবেন। পুলিশ, প্রশাসন, আইন-কানুন মান্য করার ব্যাপারেও তাদের মনোযোগ থাকে না। তাদের চরম বেপরোয়া মনোভাবের পেছনে ক্রিয়াশীল এহেন রাজনৈতিক কার্যকারণ অস্বীকার করা যায় না।

দুর্ঘটনা কবলিত একটি মোটরসাইকেল, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

অন্যদিকে, বাইক তাণ্ডব সড়ক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার পাশাপাশি সৃষ্টি করছে সামাজিক আতঙ্ক। প্রায়ই দেখা যায়, একাধিক বাইক হর্ন দিতে দিতে হাই স্পিডে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। কাউকে গ্রাহ্য না করে চরম বিপজ্জনক গতিতে বাইক চালনার চিত্র সর্বত্র দেখা যায়। এতে সদ্য উত্থিত তারুণ্যের জোস আর ক্ষমতার গরম দেখানোই যেন মুখ্য।

এ কথা মানতেই হয় যে সময়ের দাবি আর আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধির ফলে বাইক কালচার ব্যাপক হারে বাড়ছে। গ্রামে-গঞ্জে কিশোর-তরুণরা বাইকের অধিকারী হচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই সুযোগকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক কাজে না লাগিয়ে তাণ্ডব বা আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। চরম দুঃখজনক দুর্ঘটনাও ঘটছে এর ফলে।

শুধু ঈদের ছুটিতেই নয়, প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাইক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। চালক বা আরোহী ছাড়াও আহত-নিহত হচ্ছেন পথচারীরা। বিবেক, পরিবারের শাসন বা আইনের ভয়, কিছুই থামাতে পারছে না মোটর বাইক চালকদের অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, দিনে দিনে তাণ্ডব চালিয়ে আতঙ্কের নামান্তরে পরিণত হয়েছে বাইক নামক যন্ত্রটি। চালকদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন। এই অপরিণামদর্শীরা নিজেরাই মরছেন না, মারছেন অন্যদেরও।

সড়কে বাইকের নৈরাজ্যের শেষ কোথায়? কে এদের লাগাম টেনে থামাবে?

এ সম্পর্কিত আরও খবর