আওয়ামী লীগ: ৭০ বছরের সাফল্য

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:12:21

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক দখলদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন সর্বপ্রথম উচ্চকিত হয় অবিভক্ত বাংলায়। উপমহাদেশের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্মস্থানও বাংলা।

প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় কংগ্রেস তৈরি হয় বাংলায় (কলকাতায় ১৮৮৫ সালে)। মুসলমানদের সংগঠন মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে ঢাকায় এবং মুক্তিকামী বাঙালির সংগঠন আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে ঢাকায়।

উপমহাদেশ তথা বাংলার অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি, চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য পার্টি বাংলার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এসব পার্টি মূল নেতার মৃত্যুর পর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ইউনিক উদাহরণ হলো আওয়ামী লীগ, যা কয়েক প্রজন্ম পরেও আরও বিকশিত ও শক্তিশালী হয়েছে। মুক্তিকামী মানুষের সংগঠন রূপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের প্রাজ্ঞতা ও সাংগঠনিক বিস্তৃতিতে আরও বলিষ্ঠ অবস্থান লাভ করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতায় ও রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সাফল্যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে তো বটেই, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে উজ্জ্বল দল। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এমন অর্জন দৃষ্টান্তমূলক।

একটি রাজনৈতিক দলকে টিকে থাকার জন্য কয়েকটি শর্ত পালন করতে হয়। শর্তগুলো মতাদর্শিক, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক পর্যায়ের। এই তিন ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারলেই কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন টিকে থাকতে পারে।

৭০ বছরের আওয়ামী লীগকে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দলটি তিনটি শর্তই সঠিক ও যথাযথভাবে পালন করে চলেছে। এজন্য দলের বিস্তৃতি ও বিকাশ অব্যাহত রয়েছে।

প্রথমেই মতাদর্শের প্রতি নজর দেওয়া যেতে পারে। জন্মলগ্নে মানুষের মুক্তির যে মতাদর্শ আওয়ামী লীগ ধারণ করেছিল, ৭০ বছরেও তা থেকে দলটি বিচ্যুত হয়নি। বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতাদর্শের আলোকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। একাত্তরের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ তথা উদার ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মতাদর্শকে আওয়ামী লীগ কেবল ধারণই করেনি, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক কাঠামোতে আরও বিকশিত ও শক্তিশালী করেছে।

নেতৃত্বের দিক থেকে আওয়ামী লীগ স্থবিরতা ও অযোগ্যতাকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া নেতৃত্বের উত্তরাধিকার হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবপ্রজন্মের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে আওয়ামী লীগে। এমনকি, আগামী দিনের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বহু নেতা তৈরি হচ্ছেন আওয়ামী লীগে। ফলে দলকে এগিয়ে নিতে সক্ষম নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের বিকাশের অন্যতম শক্তি হিসেবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাজ করছে।

সংগঠনের দিক থেকে আওয়ামী লীগের সাফল্য ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, গঞ্জ, পাড়া, মহল্লায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। সাংগঠনিক দৃঢ়তা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। সংগঠনের শত শত শাখায় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও লক্ষ-কোটি সমর্থক আওয়ামী লীগের বিকাশ ও সবলতার সবচেয়ে বড় ভিত্তি।

একটি রাজনৈতিক দল যখন মতাদর্শ, নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দিক থেকে স্বচ্ছ, সবল ও সঠিক থাকে, তখন সেই সংগঠনের গতিশীল বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। জনগণ আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসায় সেই দলের প্রতি সমর্থন জানায়।

অতীতের গৌরবময় অভিজ্ঞতা থেকে দল তখন সমৃদ্ধ বর্তমান ছুঁয়ে ভবিষ্যতের স্বর্ণালী সোপানে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্র ও সমাজে সেই রাজনৈতিক দল অপরিহার্য রূপে বিবেচিত হয়।

৭০ বছরে মুক্তিকামী মানুষের সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই সাফল্যই স্বকীয় কর্মতৎপরতায় অর্জন করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর