২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (সোমবার) যুক্তরাষ্ট্রে লেবার ডের সাধারণ ছুটি। আর ফ্লোরিডায় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইমারজেন্সি ছুটি। কারণ এখানে শক্তিশালী হারিকেন 'ডোরিয়ান' আঘাত হানতে বসেছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ধারণা করেছিল, এটা সরাসরি ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় (অরল্যান্ডো এবং জ্যাকসনবেলে উপকূলে) ব্যাপক শক্তি নিয়ে (ক্যাটাগরি পাঁচ, গতিবেগ প্রায় ২৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) আঘাত হানতে পারে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আটলান্টিকে উৎপত্তি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড়টি এরই মধ্যে গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন করেছে। গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা একটু কমে গেছে বলা যায়।
এখন ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ ক্যারোলিনার দিকে কিছুটা টার্ন নিয়েছে। তবে মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) হারিকেন 'ডোরিয়ানে'র প্রভাব এখানে পরিলক্ষিত হবে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে রোববার হারিকেনটি ফ্লোরিডার দূরবর্তী বাহামা দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনেছে। তখন হারিকেনটি ছিল ক্যাটাগরি চার মাত্রার (গতিবেগ প্রায় ২০০ কি.মি./ঘণ্টা) এবং খুব শক্তিশালী। বাহামাতে প্রায় ১৫ হাজার ঘড়বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং পাচঁজন মারা যাওয়ার খরব পাওয়া গেছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সোমবার সকাল ১১টার দিকে হারিকেন ‘ডোরিয়ানে’র গতিবেগ একেবারে কমে গিয়ে (গতিবেগ প্রায় ২ কি.মি./ঘণ্টা) আস্তে আস্তে আগাচ্ছিল। তবে যে কোনো সময় এটা আবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। মোবাইল ফোনে বার বার হারিকেন ‘ডোরিয়ান’ সম্পর্কে সতর্কীকরণ বার্তা আসছিল। তাই এখানে প্রতিটি মূহুর্ত কাটছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিনে এখন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল, আর বাতাস বইছিল জোড়ে জোড়ে। এই অন্ধকার, আবার এই আলো। ফ্লোরিডার প্রায় সর্বত্র এখন রেড এলার্ট চলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে। সাধারণ দোকান থেকে শুরু করে সব কিছু প্রায় বন্ধ। শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, ব্যাংক, মিউজিয়াম, স্কুল, কলেজ, অফিস সবকিছু বন্ধ। বিমানের লোকাল ফ্লাইটগুলোতে চলছে রেড এলার্ট। শুধু আবহাওয়া অফিসগুলো খোলা এবং ব্যাপক প্রস্ততি চলছে এখানে। স্থানীয় প্রশাসন এখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে।
গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) থেকেই মানুষ উপকুলীয় এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। চার-পাঁচ দিনের জন্য সবাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে সবজি, খাবার পানি, ওষুধপত্র, শুকনো খাবার (রুটি/ক্রেকার্স) আগাম কিনে রেখেছে।
মানুষ তাদের থাকার ঘরগুলো বাঁচাবার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। মোটা প্লাস্টিক বা পাতলা কাঠ দিয়ে জানালাগুলো সেটে দিয়েছে। দরজার সামনে বালুর বস্তা দিয়ে প্রোটেকশন দিয়েছে। অফিসগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হারিকেনের প্রভাবে ব্যাপক বন্যা হবে। যে কারণে সবার আগাম প্রস্তুতি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফ্লোরিডায় প্রায় প্রতি বছরই এই ধরনের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনে থাকে। ফ্লোরিডা যেন এক ঘূর্ণিঝড় রাজ্য। তাই এখানকার লোকজন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের প্রস্তুতি ও প্রশাসনের তৎপরতা সত্যি চোখে পড়ার মতো। শক্তিশালী ও বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গেও এরা সুন্দর মানিয়ে চলছে।
ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া: বিজ্ঞানী ও গবেষক, এনাসটাশিয়া মসকিটো কন্ট্রোল, সেন্ট অগাস্টিন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী অধ্যাপক (ডেপুটেশন), পবিপ্রবি, বাংলাদেশ।