উদয়ের পথে শুনি কার বাণী

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড.মাহফুজ পারভেজ অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:16:19

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মধ্যরাতের অন্ধকারে আলোর দীপশিখায় উজ্জ্বল বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি ছুঁয়ে এসেছে এ দিবস। জাতির ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে যে বুদ্ধিজীবীগণ, তাদের মহান আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন উত্তোলন করে এসেছে এ দিবস।

বুদ্ধিজীবী দিবসের মহান লগ্নে ঘোষিত হচ্ছে সেই সাহসী উচ্চারণ, যে উচ্চারণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা। তাদের জীবন, কর্ম ও আত্মত্যাগের স্মরণে উচ্চারিত হয় সুমহান ধ্বনি: 'উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান,ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।'

এ দিনে সমগ্র জাতি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। যারা ছিলেন জাতির বিবেক ও সম্পদ। তারা ছিলেন আলোর পথের যাত্রী। অকুতোভয়ে জাতিকে সঠিক পথের দিশা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন তারা। জাতির সাহসী-মেধাবী সন্তান হিসাবে বুদ্ধিজীবীগণ মুক্তি ও অধিকারের কথা বলেছিলেন বাঙালি জাতির স্বাধিকারের প্রতিটি পর্যায়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন ও সংগ্রামে।

বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ দেশ, জাতি ও মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন বার বার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে বুদ্ধি ও চিন্তার মাধ্যমে শরিক হয়েছিলেন তারা। জাতিকে দিয়েছিলেন সঠিক প্রণোদনা।

বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, শিল্পী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। তারা স্ব স্ব পেশা থেকে দেশের স্বাধীনতা আর মানুষের মুক্তির জয়গান গেয়েছিলেন। দখলদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম মুখর ও ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন জনতাকে। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের সামনের কাতারের ভ্যান গার্ড ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ।

যে কারণে দখলদার পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রোশ ছিল বুদ্ধিজীবীদের প্রতি। কারণ বুদ্ধিজীবীরাই বাঙালি জাতিকে অধিকার সচেতন করেছিলেন এবং মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করেছিলেন।

তাই বাঙালি জাতিকে আক্রমণের পাশাপাশি আক্রান্ত করা হয় বুদ্ধিজীবীদের। বিশেষ করে পরাজয়ের পূর্বক্ষণে হানাদার ও দোসররা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে শহীদ করে জাতিকে মেধা শূন্য করার কুমতলবে।

কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলেও তাদের চেতনাকে নিঃশেষ করা সম্ভব হয়নি। তারা এখনো মুক্তি, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকারের প্রজ্বলিত শিখা হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। জাতিকে শোনাচ্ছেন সাহসের বাণী ও বরাভয়।

একটি দেশে শুদ্ধ, সাহসী ও নির্লোভ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় বিরাট এক সম্পদ। তারা বিপদে ও সঙ্কটে পথ দেখান। সাহসের স্পর্শ দেন। বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ পাকিস্তানের দুঃশাসন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেমনই পথ দেখিয়েছিলেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও অধিকার-সচেতন করেছিলেন। মুক্তি ও স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এজন্যই ঘাতকের আঘাতে তাদেরকে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে।

সাহসী বুদ্ধিজীবীগণ জীবন দিয়ে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদেরকে স্মরণ করবে চিরকাল। তাদের কাছ থেকে সাহস ও সংগ্রামের চেতনা লাভ করবে বাঙালি জাতির প্রতিটি সদস্য।

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষ সমবেত হবে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে। জনতা শপথ নেবে তাদের প্রদর্শিত পথে চলার। সাহসের বীজমন্ত্র হয়ে বুদ্ধিজীবীরা জীবনের মতো মরণেও আশাজাগানিয়া চেতনা প্রবাহ হয়ে থাকবেন আমাদের কাছে।

আজো শোষণ, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার, হানাহানিতে মানবিকতার পতন হলে বুদ্ধিজীবীদের আদর্শে রুখে দাঁড়াতে হবে। নারী, শিশু, সংখ্যালঘু, অবহেলিত মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, কুসংস্কারের যাবতীয় অন্ধকারকে চিরদিনের জন্য বিদায় করতে হবে।

যে সুখী, সমৃদ্ধ, সাম্য, মৈত্রীর দেশের স্বপ্ন শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ দেখেছিলেন, তাকে পূর্ণতা দিতে সবাইকে কাজ করতে হবে। যে মহৎ আদর্শের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন, তাকে সফল করতেই হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীপ্ত সমৃদ্ধ ও শোষণহীন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখে বুদ্ধিজীবীগণ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তেমন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তাদের রক্ত ঋণ শোধ করতে হবে।

পাশাপাশি একালের বুদ্ধিজীবীদেরও সাহসের সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আদর্শের পথে চলতে হবে। মানুষের মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণকে নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। সকল প্রকার অনাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। মানুষের সাম্য, শান্তি, মুক্তি ও স্বাধীনতাকে হননকারী সব অপশক্তিকে নির্মূল করতে হবে।

১৯৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ যে আদর্শিক প্রেরণা প্রজ্বলিত করেছেন, সে আলোয় পথ চলে আনতে হবে শান্তি ও সমৃদ্ধির আলোকিত ভোর। নিশ্চিত করতে হবে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা। তাহলেই জাতির সাহসী-বিবেক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর