বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:43:42

১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১। বীর বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। সর্বাত্মক বিজয়ের এ দিনে সারা দেশ প্রকম্পিত হয় জয় বাংলা, বাংলার জয় স্লোগানে। আর হানাদার-কুখ্যাত পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীকে চরমভাবে পরাজিত করে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

হাজার বছরের ইতিহাসের পথচলায় মহত্তম অর্জনে দীপ্ত স্বাধীনতা ও বিজয়ের লাল অক্ষরে চিহ্নিত দিন ১৬ ডিসেম্বর। বাংলার, বাঙালির বিজয় তিলক অঙ্কিত দিনে সমগ্র জাতি উদ্বেলিত বীরত্বের স্মৃতিতে। রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে মুক্তির রক্তলাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনার প্রদীপ্ত সাহসে বলীয়ান সমগ্র জাতি।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তি পাগল বাঙালির সর্বাত্মক আক্রমণে পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার-হায়েনার দল। অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। সফল হয় বাঙালির নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

বিজয়ের উল্লাসে বিশ্বের বুকে সগৌরবে জন্ম নেয় স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আসে বিজয়ী, মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি হয় শৃঙ্খলমুক্ত।

পৃথিবীর ইতিহাসে ত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাঙালি জাতি এনেছে মহান বিজয়। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে লাখো শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলার পবিত্র মাটির সবুজ শরীরে রক্তের আলপনা এঁকে এসেছে মহান বিজয়; বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা।

বাঙালি জাতি আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে স্বাধীনতার রক্তাক্ত বেদিমূলে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের। অভিবাদন জানাচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। স্মরণ করছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে এবং জাতীয় চার নেতাকে।

স্বাধীনতা এক পলাশ রাঙানো দিন হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের এই ডিসেম্বরে সঞ্চারিত হয়েছে বাঙালি জাতিসত্তার মর্মমূলে। বিজয়ের উষ্ণ চেতনা আশার আলোক শিখা হয়ে জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অনির্বাণ দিশা জাগাচ্ছে জনপদের ঘরে ঘরে। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐকবদ্ধ করেছে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও স্বাধীনতার আলোক মশালের প্রভা ও দীপ্তিতে।

স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত বিজয়ের চেতনায় বাংলাদেশের বিজয়ী বাঙালি জাতি দুর্বার পদভারে এগিয়ে চলেছে অন্ধকার ভেদ করে আলোর দিকে। চলেছে পশ্চাৎপদতা ডিঙিয়ে উন্নয়নের সোপানে। বাঙালির এই বিজয় রথ কোনো অপশক্তিই দমিয়ে রাখতে পারবে না।

গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উদার মানবিকতা ও আত্মপ্রত্যয় প্রতিষ্ঠার পথে ১৬ ডিসেম্বর জাতির বিজয় কেতন উড্ডয়নের দিন। বিজয়ী বাঙালি জাতি ২০২১ সালে স্বাধীনতার স্বর্ণোজ্জ্বল ৫০ বছর পূর্তিকে উদযাপনের জন্য উদ্বেলিত পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের এই পদযাত্রার অংশীদার হয়ে ১৬ ডিসেম্বরে প্রতিটি বীর বাঙালি ঘোষণা করছে বাংলার জয়ধ্বনি। ১৬ ডিসেম্বর অমর, অপরাজেয়, বিজয়ী বাংলাদেশের গৌরবধ্বনি ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করছে সমগ্র বিশ্বে।

১৬ ডিসেম্বরের বিজয় বাংলাদেশকে দিয়েছে বিজয়ীর মর্যাদা ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগ। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাঙালির স্বাধীন বিকাশকে অবারিত করেছে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস। বাংলাদেশকে করেছে মহীয়ান। লাল-সবুজ মহান পতাকাকে করেছে সমুন্নত।

১৬ ডিসেম্বরের বিজয়চিহ্ন ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বাঙালি এগিয়ে চলবে। বিশ্বের বুকে অর্জন করবে শ্রেষ্ঠ আসন। জয় বাংলা, বাংলার জয় ধ্বনিতে মুখরিত হবে সারা দেশ, সমগ্র বিশ্ব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর