বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়তে হবে

, যুক্তিতর্ক

অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ | 2023-08-26 00:21:21

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এ মাসের ১৬ তারিখ বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় বিজয়ের দিন। সমগ্র জাতি এ দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

বাঙালির ইতিহাসের সুদীর্ঘ ধারায় ১৯৭১ সাল মহত্তম। ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে বাঙালি লাভ করে সর্বাত্মক বিজয়, অর্জন করে নিজস্ব দেশ। পৃথিবীর বুকে লাল-সবুজের রক্তের স্মৃতিতে উড্ডীন হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সমুন্নত পতাকা।

ডিসেম্বর এলে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্মৃতিকাতর হই। কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। চোখে ভাসে রণাঙ্গনের নানা স্মৃতি। আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধের স্মৃতিতে আপ্লুত হই ডিসেম্বর মাস এলেই। মনে পড়ে বহু ঘটনা।

আমি তখন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের নেতা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তীতে (১৯৭২) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দেশের ইতিহাসের সর্বপ্রথম ভিপি।

পরে, ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করি। শিক্ষক সমিতি ও নানা ফোরামে শিক্ষক সমাজের সমর্থন ও ভোটে নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করি এবং একাত্তরের চেতনায় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠায় লড়াই অব্যাহত রাখি। বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে উচ্চশিক্ষা বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি।

লেখক অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ; বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং  চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)

২০১৯ সালের বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও  'মুজিব বর্ষ' সমাগত। সমগ্র জাতি এজন্য উদ্বেলিত এবং সকলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়তে সংকল্পবদ্ধ।

আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির, বাংলাদেশের যে সর্বাত্মক বিজয় সম্পন্ন হয়েছিল, তা ঐতিহাসিক। যে বিজয়ের মধ্যে শুধু যুদ্ধ-বিজয়ই ছিল না, ছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক বিজয়। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ও বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাসে এমন বিজয় অভূতপূর্ব।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী হলেও জাতি হিসেবে বাঙালি হাজার বছরের প্রাচীন। জনপদ হিসেবেও বাংলা বা বাংলাদেশের রয়েছে সমৃদ্ধ সভ্যতা, উন্নত সংস্কৃতি ও গৌরবময় ইতিহাস।

হাজার বছরের পথ-পরিক্রমায় বাংলা ভূখণ্ডে ও বাঙালি জাতির জীবনে বহু ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক দিক থেকে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। বিদেশি আক্রমণ এসেছে। বাঙালিকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা ও অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে।

বিশেষত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়। জিয়া ও এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনে জাতি নিষ্পেষিত হয়। অবশেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশে অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটে। বিশ্বের সবাই শেখ হাসিনার শাসনের ভূয়সী প্রশংসা করছে এবং তাঁকে বিশ্বের অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের  সোনার বাংলা গড়ার।

১৯৭১ সালে অর্জিত বিজয় বিজয় অচীরেই স্পর্শ করবে সুবর্ণ জয়ন্তীর ৫০ বছরের মাইল ফলক। স্বাধীনতার চেতনা হবে আরও উজ্জীবিত। বাংলাদেশের স্বাধীন পথচলা হবে আরও দৃঢ়, আরও শানিত, আরও গতিশীল।

একবিংশ শতকের পৃথিবীর দিকে তাকালে বহু নবীন, প্রবীণ দেশের পাশাপাশি অনেক স্বাধীনতাকামী মানুষের অসংখ্য লড়াইয়ের চিত্র ভেসে আসে।  এমনই একটি সঙ্কুল ও সংঘাতময় পৃথিবীতে বাংলাদেশ উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে স্বাধীনতার সংগ্রামের গৌরবে, শান্তির সৌরভে, বহুমত ও পথের মিলিত সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থানের গণতান্ত্রিক কলরবে।

যেহেতু বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে  যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা এবং প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক অধিকার, সেহেতু বাংলাদেশ ও বাঙালির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাধীনতার স্পৃহা ও গণতন্ত্রের চৈতন্য, যা বাংলাদেশকে নিত্য সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে এবং বাঙালি জাতিকে করছে মহীয়ান। বাংলাদেশের এই নবযাত্রার সুদক্ষ নেতৃত্ব দিচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে  বাংলাদেশ তাই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ও বিশ্বের প্রেক্ষাপটে লাভ করেছে বিশিষ্টতা। বাংলাদেশ নানা প্রতিকূলতার পরেও গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক জীবনের মতাদর্শ করেছে। নারী অধিকার অর্জনের পথে বিশেষ অগ্রগতি সাধন করেছে, শিক্ষা ও আয় বৃদ্ধিতে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তমূলক অর্জন হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও হানাহানিকে নির্মূল করা। মানব, অস্ত্র ও মাদক পাচার ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া এবং বিশ্বশান্তি ও কল্যাণের পক্ষে আপোষহীন থাকার কৃতিত্ব, যা বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।   

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে যে বিজয় এসেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মোহন স্পর্শে ও সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, বাঙালি সেই বিজয়ের রথকে অবিরাম এগিয়ে নিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে। সব ধরনের কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা, কুপমণ্ডুকতা, অনাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অবস্থান করছে আলোকস্তম্ভের মতো আর বাঙালি পরিণত হয়েছে আলোকিত জাতিতে।

ডিসেম্বরের বিজয়ের এই দিন বাঙালির জীবনে তাই শপথে শাণিত হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার আরও দৃঢ়তর করার দিন হলো ডিসেম্বরের বিজয়লগ্ন। বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় বিঘোষিত হয় এই দিনে। সকল প্রকার অন্ধকার ও পশ্চাদপসরণকে গুড়িয়ে দিয়ে সামনের দিকে চলার অমোঘ উচ্চারণে জাতির সম্মিলনের দিন ডিসেম্বর।

বাঙালির, বাংলাদেশের বিজয়-খচিত ১৬ ডিসেম্বর দেশ ও জাতির জীবনকে আরও ঋদ্ধ ও পূর্ণ করবে। বাঙালি ও বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আরও বেগবান করবে। সমগ্র জাতি এই প্রত্যাশাই করে।

অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং  চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর