চুমু ছবিয়ালের চাকরি ও আমাদের লজ্জা

, যুক্তিতর্ক

ইকরাম কবীর | 2023-08-24 17:47:56

খানসেনাদের খান

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে প্রাক্তন ক্রিকেট খেলোয়াড় ও রাজনীতিবিদ ইমরান খানের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছে। ইমরান এখনো সরকার গঠন করার মত সঙ্গী খুঁজে পাননি, তবে তিনি বলেছেন, ১১ আগস্ট তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। সারা বিশ্ব এখন তাকে নিয়ে আলোচনায় ব্যাস্ত। তার বিজয়ে সবাই কি প্রতিক্রিয়া দেবেন বা দেখাবেন তাই নিয়ে চিন্তা করছেন। বাংলাদেশেও তাকে নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে, তবে এখানকার সরকার পাকিস্তানের সাথে এদেশের সম্পর্ক কেমন হতে পারে তা নিয়ে কিছু বলেন নি।

তাকে নিয়ে অনেক আলোচনার মাঝে প্রাধান্য পেয়েছে ‘তিনি কেমন করে ক্রিকেটার থেকে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন’, ‘কেমন করে খানসেনারা তাকে ক্ষমতায় আনলো’, ‘তার (প্রাক্তন) স্ত্রী’গণ কে কী বলেছেন’, ‘তিনি এতগুলো বিয়ে কবে-কবে করলেন’ ইত্যাদি। তিনি নিজেও অনেক কথা বলছেন, বিশেষ করে ভারতের সাথে তার সরকারের কেমন সম্পর্ক হতে পারে তা নিয়ে বিশেষ করে বলেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোনও করেছেন।

ইমরান খান বলেছেন, তিনি পাকিস্তানের প্রতিবেশিদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে সচেষ্ট হবেন। তবে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলেন নি। হয়তো বাংলাদেশ বিশ্বের রাজনীতির আকাশে তেমন গুরুত্বপূর্ণ দেশ নয়। তবে পাকিস্তানের মনে রাখা প্রয়োজন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে তাদের অত্যাচারের ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়। যদিও বাংলাদেশকে তিনি পছন্দ করেন না, তবুও ২০১১ সালের ২৩শে মার্চ সাংবাদিক হামিদ মীরের টক-শোতে বলেছিলেন যে পাকিস্তান সরকারের বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। তিনি আসলেই তা মনে করেন কিনা সে বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানি না, তবে তিনি বলেছিলেন। অন্য আরেক সময় তিনি অবশ্য বাংলাদেশে যে তারা গণহত্যা করেছিলেন তা অস্বীকার করেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যা নিয়ে সেখানকার নতুন প্রধানমন্ত্রী যাই ভাবুন না কেন, এই-ই হচ্ছে মোক্ষম সময় ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তাকে আবার মনে করিয়ে দেয়ার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ তিনি পাকিস্তানের খানসেনাদের এই  খানের সাথে যখনই যোগাযোগ করেন, তিনি যেন তাকে আবারও ক্ষমা চাইতে বলেন। দেখাই যাক না এবার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি করেন।

লজ্জা পেতে ভুলে গেছি

উচিৎ ছিল লজ্জা পাওয়ার, কারণ বিষয়টি অসীম লজ্জার। আইন ভঙ্গ করে বাস চালকরা ছাত্র-ছাত্রীদের মেরে ফেলবেন, আর সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীকে তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি হেসেই কুটি-কুটি হবেন। তার চেহারায় কোনো দুঃখের চিহ্নওছিল না। অবজ্ঞার ভাব ছিল। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়েছেন। বলেছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে সেদিনই বাস দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছেন কিন্তু সেখানে এসব নিয়ে কেউ কথা বলছে না। ওহ্! তাই আমরাও কথা বলবো না!

তিনি অবশ্য বলেছেন দোষী ব্যক্তিরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। তিনি বলেছেন যে তারা শাস্তি পাবে।  তবে মন্ত্রী মহোদয়, আমরা জানি আপনি কিছু করবেন না ওদের। যারা ছেলে-মেয়েদের গাড়ি চাপা দিয়ে মেরেছে, তারা কোনো না কোনোভাবে ছাড়া পেয়ে যাবে।

আমাদের মনে আছে, ২০১১ সালে এই মন্ত্রীই বলেছিলেন, যে-ই গরু এবং ছাগলের পার্থক্য বুঝতে পারে, এদেশে তারা গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও পেতে পারে! তাহলে আপনারা কি করছেন?  লজ্জা পাওয়া উচিৎ না আমাদের?

গাফফার চৌধুরীর আশি শতাংশ

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো...খ্যাত লেখক, বিশ্লেষক ও গবেষক আব্দুল গাফফার চৌধুরী সম্প্রতি বলেছেন যে বর্তমান সংসদের আশি ভাগ সদস্যই, তার ভাষায়, কাজের নন। তিনি বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও অনুরোধ করেছেন যে এদেরকে আর মনোনয়ন না দিয়ে নতুনদের দিকে দৃষ্টি দিতে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ধারণা অনেকদিন ধরেই আছে যে আমাদের নেতারা আমাদের স্বার্থরক্ষা করতে পারছেন না, তবে আমরা সবসময় মুখ বুজে থাকি। কিন্তু আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মত মানুষেরা যখন এ কথা বলেন, তখন বোধহয় ব্যাপারটি সত্যিই চিন্তার। আশা করবো, আওয়ামী লীগের হাই-কমাণ্ড যেন বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবেন।

চুমু ছবিয়ালের চাকরি আর নেই

‘পূর্ব-পশ্চিম’-এর পোর্টাল থেকে ছবিয়াল জীবন আহমেদের চাকরি চলে গেছে। জীবনই সেই ছবিয়াল যিনি ক’দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে এক যুগলের ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। সে কারণে তাকে মারধোরও করা হয়েছিল। এবার তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেয়া হলো। চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেয়ার সময় তাকে বলা হয়েছে যে তিনি আর ঐ খবরের পোর্টালে কাজ করার জন্য উপযুক্ত নন। তিনি এমন ছবি ফেইসবুকে দিয়ে সবাইকে অসম্মান করেছেন।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এ দেশের সবাই কি তাদের স্ত্রীদের বা ভালবাসার মানুষদের চুমু খাওয়া থামিয়ে দিয়েছেন?

প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াটাও বেশ আলোড়ন তুলেছে সমাজে। হতেই পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে ধর্ষণের  বিরোধিতা কি আমরা করেছি? আমরা ক’জন এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলছি? ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করছি? হাতেগোনা কয়েকজন আছেন যারা এর প্রতিকার চাইছেন, বিচার চাইছেন। মাত্র একটি চুমু নিয়ে কোলাহলের পাশাপাশি ধর্ষণের বিরুদ্ধেও কি আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি না? 

লেখক গল্পকার ও কলামিস্ট

এ সম্পর্কিত আরও খবর