রাষ্ট্র মেরামতকারীদের আন্দোলন ও আমাদের জন্য বার্তা

, যুক্তিতর্ক

মো. জাকির হোসেন | 2023-08-25 16:18:20

জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, কোটি মানুষের প্রাণের দাবি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

সড়কে ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্য-অরাজকতা, পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা, যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, তাদের নির্মমতা-নৃশংসতাও পুলিশসহ সড়ক পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা, অবহেলা, অদক্ষতা ও দূর্নীতির কারণে জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে অনেক আগেই। বিশেষ করে নিকট অতীতের কিছু ঘটনা যেমন, পরিবহন শ্রমিকদের দ্বারা শিক্ষার্থী রুপাকে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পরিবহণ শ্রমিকদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা, দুই বাসের চাপায় ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মারাত্মক আহত তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের করুণ মৃত্যু, হানিফ পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপার মিলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েলের মুখ থেঁতলে জীবিত অবস্থায় নদীতে ফেলে হত্যা এসব ঘটনায় পূঞ্জিভুত শোক আর ক্ষোভ ক্রোধে রূপ নিয়ে ফুঁসছিলো সাধারণ মানুষ। আর এরই মাঝে ঘটলো দুই বাসের প্রতিযোগিতায় রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী মীম ও রাজীবের নির্মম হত্যাকাণ্ড।

এটি সড়ক দূর্ঘটনা নয়, সড়ক পরিবহনে চলা অরাজকতার নগ্ন প্রকাশ। হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে নৌ-মন্ত্রীর বিকট হাসি আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো আন্দোলনকে শতগুণ উসকে দেয়।প্রধানমন্ত্রীর তিরস্কারে অবশেষে নৌ-মন্ত্রী নিহত শিক্ষার্থী মীম এর বাসায় গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আন্দোলন স্তিমিত না হয়ে বেগবান হতেই থাকে। শিক্ষার্থীরা চমৎকার সৃজনশীল শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়। কিছু কিছু শ্লোগান তো আমাকে রীতিমতো মুগ্ধ করেছে। যেমন, ‘রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে/ রাস্তা বন্ধ, হেঁটে চলুন’ কিংবা ‘যদি তুমি ভয় পাও/ তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও/ তবে তুমি বাংলাদেশ’। একটা প্ল্যাকার্ডে লেখা দেখলাম, পারলে মাথায় গুলি কর, তাহলে মেধা মারা যাবে/ কিন্তু বুকে গুলি করিস না, এখানে বঙ্গবন্ধু ঘুমায়/ বঙ্গবন্ধু জেগে ওঠলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে’।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আইন মেনে, লেইন মেনে গাড়ি চললে কী হয়? রাস্তায় ইমার্জেন্সি লেইন চালু করে তাদের বুদ্ধিদীপ্ততার পাশাপাশি প্রমাণ করে দিয়েছে সড়কের দায়িত্বে থাকা বড়রা ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ। তাদের আন্দোলন আমাদের সামনে প্রকাশ করেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বাহিনী সড়কের আইন মেনে চলছে না। আইন লংঘন করে অবৈধ পথে আসা মন্ত্রী ও ভিআইপির গাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা সাফ জানিযে দিয়েছেন আইন সবার জন্য সমান।

আমাদের দরিদ্র রাষ্ট্রে ভিআইপির সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে, তাদের জন্য প্রটোকল দেয়া, তাদের চলাচলের সময় সাধারণ নাগরিকদের চলাচল বন্ধ করে দেয়া, তাদের জন্য অবৈধভাবে উল্টো রাস্তা ব্যবহার করায় সড়ক ব্যবস্থাপনা থমকে পড়ে। আমরা বুঝতে পারি না, সরকারি চাকুরিজীবিরা যাদেরকে বলা হয় পাবলিক সারভেন্ট তারা কী করে ভিআইপি হয়? যাদের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা হয় সে সাধারণ মানুষদের রাস্তায় আটকে ভোগান্তিতে ফেলে তারা নিজেদের চলাচল অবাধ ও নির্বিঘ্ন করতে আইন করে? পরে অবশ্য অনুধাবন করেছি সবাই কেন ভিআইপি হতে চায়। ভিআইপি হলে আইন তার জন্য শিথিল হয়, বিশেষ সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়, আইন লংঘন করেও দায়মুক্তি মেলে। আর সড়কের আইন লংঘন তো তাদের জন্য মামুলি ব্যাপার।

বাংলাদেশের মতো গরীব রাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারী-কাম ভিআইপিদের যত ফুটানি, অনেক উন্নত রাষ্ট্রে মন্ত্রীদেরও বিশেষ প্রটোকল বা সড়ক ব্যাবহারের বিশেষ সুবিধা নেই। আর আমাদের দেশে কেবল মন্ত্রী নয়, সরকারি কর্মচারী-কাম ভিআইপিদের জন্যও পুলিশের আলাদা গাড়িসহ প্রটোকল আর সড়কে বিশেষ সুবিধা নিতে শব্দ করে বাঁশি বাজানো এবং আইন লংঘন করে উল্টো পথ ব্যবহার নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন জানিয়ে দিয়েছে যত খুশি ভিআইপি ট্যাগ লাগান, আইন মেনে সাধারণের সাথে সড়কে চলতে হবে। সাবাশ নতুন প্রজন্ম। স্বাধীন দেশে একজন প্রভু আরেকজন প্রজা হতে পারে না। আন্দোলনকারীরা লাইসেন্স চেক করে জাতির সামনে তুলে ধরেছে অসংখ্য সরকারি বেসরকারি গাড়ির ফিটনেস নেই, ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই। কী লজ্জার কথা! সড়কে সরকারি দায়িত্বপালন করে তারা আসলে কী করছে?

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বরাবরের মতোই ষড়যন্ত্রীরা ঢুকে পড়েছে। ভিডিওতে এদের অনেকের চেহারা ও বক্তব্য আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অশ্লীল করে তুলছে। ষড়যন্ত্রীরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে ৮০০ গাড়ি ভাংচুর ও পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ ১২টি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। নাবালকের আন্দোলন সবালক শ্লোগানে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। কোমলমতি আন্দোলনকারীদের হাতে যৌনতায় ভরপুর অশ্লীল প্ল্যাকার্ড তুলে দেয়া হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পরিস্থিতি যত বৈরী আর প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষা হয় সত্য ও সুন্দর, অশ্লীল হতে পারে না। তদুপরি রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব যারা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে তারা অশ্লীল হতেই পারে না। এটি ষড়যন্ত্রীদের কাজ।ষড়যন্ত্রীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যায় এমন প্ল্যাকার্ডও ধরিয়ে দিয়েছে ওদের হাতে। আবার অনেক জায়গায় পুলিশকে মারধরও করা হয়েছে।কিছু জায়গায় পুলিশ ছাত্রলীগ সরকারের নিষেধ উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীদেরও পিটিয়েছে। এসব কী রাষ্ট্র মেরামতের অংশ? বিচারপতির গাড়িতে মার্কার দিয়ে লিখা ‘বিচারপতি নিজেই চোর’ কোনভাবেই আন্দোলনের অংশ হতে পারে কী? প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারসহ পরিকল্পিতভাবে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আন্দোলনকে উসকে দেয়ার অপচেষ্টা করছে কিছু ভূঁইফোড় সংবাদ মাধ্যম। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ এর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে ও ৪ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে এ গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে এবং সেখানে উপস্থিত কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। আন্দোলনে কু-চক্রীদের অনুপ্রবেশের সুস্পষ্ট প্রমাণ এটি।

আন্দোলনকারীদের সাথে এসে একাত্নতা প্রকাশ না করায় রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে অবমাননাকর ও বিদ্রুপাত্নক পোস্টও দেয়া হচ্ছে। জাফর ইকবালের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রতি কাদের এত ক্ষোভ তা কী ব্যাখ্যা করে বুঝানোর দরকার পড়ে? মীম ও রাজীবের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানোয় হতাশ একটি গোষ্ঠী তাদের সম্পর্কে আক্রমনাত্নক ভাষায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।এটিও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ষড়যন্ত্রী অনুপ্রবেশের ইঙ্গিত দেয়। ম্যাসেঞ্জারে সংবাদ পাঠানো হচ্ছে আন্দোলনকারীদের জমায়েতের পাশে যেনো প্রচুর ইট ও লাঠি থাকে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কারা অনিরাপদ ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে? কী তাদের উদ্দেশ্য? আন্দোলন উসকে দিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়া হচ্ছে বলে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে? কেন, কী উদ্দেশ্যে এ মিথ্যা গুজব?

শিক্ষার্থীদের তেজোদীপ্ত আন্দোলন দেখে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ছাত্রীদের আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর স্নেহমাখা সমাধানের কথা মনে পড়লো। ১৯৭৪ সালের ঘটনা। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের বেতন একবার মওকুফ ঘোষণা করে সরকার পরবর্তিতে মওকুফের ঘোষণা প্রত্যাহার করে।ফলে ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীরা সরকারের এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানায়। লালমাটিয়া গার্লস স্কুলের ছাত্রী নাজমা(বর্তমানে টরন্টো প্রবাসী) ও পারভীন(বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) এর নেতৃত্বে ছাত্রীদের একটি মিছিল গণভবনে আসলে বঙ্গবন্ধু কেবল তাদের দাবী মেনেই নেন নি, বরং প্রচন্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়া ছাত্রীদের দেখে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে বলেন, ওদের মিষ্টি দাও, পানি দাও, আমার মেয়েরা এত কষ্ট করে আমার কাছে এসেছে, ওদের দাবী তো আমাকে মানতেই হবে। দাবিমানা ও মিষ্টি বিতরণ করেই বঙ্গবন্ধু ক্ষান্ত হননি।যেহেতু দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছিলো তাই তিনি ছোটো ছোটো মেয়েদের কথা চিন্তা করে তোফায়েল আহমেদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রীদের গাড়িতে করে যেন বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তিনিও এমন একটি স্নেহময়ী সমাধান করবেন সে অপেক্ষাতেই ছিলাম। অবশেষেমাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আন্দোলনের যৌক্তিকতার কথা বলেছেন।দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন। ঘাতক বাসটির মালিক, চালক ও হেলপারকে গ্রেফফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপের নির্দেশনা দিয়েছেন তা হলো- রমিজউদ্দিন কলেজকে পাঁচটি বাস বরাদ্দ, কলেজ সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণের ব্যবস্থা, দেশের প্রত্যেকটি স্কুলসংলগ্ন রাস্তায় স্পীড ব্রেকার নির্মাণ, স্কুলের পাশে বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ, নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র হস্তান্তর, সড়ক দূর্ঘটনায় দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা ও দ্রুত মামলা শেষ করার বিধান রেখে আইন সংশোধন, জাবালে নূরের রোড পারমিট বাতিল, আগামী ২৪ ঘণ্টা মধ্যে ফিটনেসবিহীন সকল পরিবহনের রোড পারমিট বাতিল ও লাইসেন্সবিহীন ভুয়া ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ।

প্রধানমন্ত্রী চাইলেই আগামীকাল বা পরশু মীম ও রাজীবের হত্যাকারীদের বিচার করে ফাঁসি দিতে পারবেন না। একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

দূর্ঘটনা রোধে এ মূহুর্তে সরকার যা করতে পারেন তা হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস চেক করে লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ফিটনেসের ক্ষেত্রে সকল অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া ও পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য ও অরাজকতার জন্য দায়ী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা।

কোথাও আগুন লাগলে সবসময়ই কিছু লোক চেষ্টা করে সেই আগুনে আলু পুড়িয়ে খেতে। শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন তাদের আন্দোলনের সুযোগে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে। আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। ছাত্রদের উচিৎ এখন ক্লাসে ফিরে যাওয়া।শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিৎ তাদের বোঝানো।

সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের সড়ক পরিবহনের সাথে যুক্ত কিছু পুলিশের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত লাইসেন্সবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়িচালক ও গাড়ি চললেও এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাদের ব্যর্থতা মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘতর করছে। চালকরা যাতে ট্রাফিক আইন মেনে লেন ধরে গাড়ি চালাতে বাধ্য হয় তা নিশ্চিত করতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এটি যে সম্ভব তা আমাদের শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরে করে দেখিয়েছেন। তাহলে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ কেন পারছে না? এর পেছনে নানা কারণ থাকলেও মূল কারণ হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগে তাদের নৈতিক সাহস ও মনোবলের অভাব।

আন্দোলনের সময় একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী একটি প্ল্যাকার্ড বহন করছিলো তাতে লেখা ছিলো, ‘পুলিশ আংকেল, আপনার চা-সিগারেটের টাকা আমি আমার টিফিনের টাকা দিয়ে দিচ্ছি, তাও আপনি এসব গাড়ি চালাতে দিয়েন না’।

এর পরও কী আমাদের বোধোদয় হবে না? সড়কে মৃত্যুর মচ্ছব রোধ করতে রাষ্ট্র মেরামতকারীদের দেখিয়ে দেয়া পথ অনুসরণ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্ব শক্তি নিয়োগ করবো না?

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: zhossain@justice.com

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর