করোনায় খোলা ও বন্ধের হালচাল!

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 00:59:38

করোনা পরিস্থিতিতে খোলা ও বন্ধ বিষয়ক বিষয়গুলো বেশ জমে উঠেছে। কখনো মার্কেট খুলছে তো আবার বন্ধ হচ্ছে। অফিসের ক্ষেত্রেও তেমন অবস্থা। পরিষ্কার ধারণা পাচ্ছে না মানুষ। বাড়ছে বিভ্রান্তি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতণ্ডা। মানুষ ব্যাখ্যা চাচ্ছে। সুবিস্তারে জানতে চাচ্ছে বিষয়গুলো। এগুলো অবশ্যই স্পষ্টভাবে বিবৃত ও ব্যাখ্যাত হওয়া প্রয়োজন।

একজন জানতে চেয়েছেন, গণপরিবহনের সংজ্ঞা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলে মানুষ কেমন করে অফিসে যাওয়া-আসা করবে, এমন প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে।

একটি মন্তব্য নজরে এলো, যা একজন সাংবাদিক নেতার। তিনি জানাচ্ছেন, 'ছুটি বাড়ছে না, গণপরিবহন বন্ধ। এটা ঠিক বুঝলাম না। আরও বুঝলাম না বয়স্করা অফিসে যাবেন না। কত বয়স হলে বয়স্ক? এটা কি ঠিক করা আছে? যদি গণপরিবহন বন্ধ থাকে তবে মানুষ অফিসে যাবে কীভাবে? প্রত্যেকের কি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে? না অফিস সবাইকে গাড়ি সরবরাহ করবে? কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনারা কেউ কি বুঝতে পারছেন? নাকি আমার মাথা আওলাইয়া গেছে?

করোনায় খোলা ও বন্ধের হালচাল এমনই যে সবার এলোমেলো অবস্থা। করোনা পরিস্থিতি যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে সবদিক ভেবে এবং সবাইকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।

এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন বিভ্রান্তকর ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। চট করে গার্মেন্টস খুলে দেয়া হলো। হাজার হাজার শ্রমিক বাসে, গাড়িতে, হেঁটে, গাদাগাদি করে ঢাকা এলেন। আবার বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় তারা ফিরে গেলেন। মাঝের দিনগুলোতে আসা-যাওয়ার ধাক্কাধাক্কিতে সামাজিক দূরত্ব ও সঙ্গরোধ চরমভাবে লঙ্ঘিত হলো। ফলে করোনার বিপদ বাড়লো ও তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেলো।

একই অবস্থা দেখা গেলো লকডাউনের সময়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জকে চিহ্নিত করা হলো অতি বিপজ্জনক 'রেড জোন' হিসেবে। কিন্তু সেসব এলাকার মানুষ, বিশেষত শ্রমিকরা অবলীলায় নিজ নিজ গ্রামে বাড়ি চলে গেলেন। কেউ তাদের আটকালো না। নামসর্বস্ব লকডাউন তাদের কিছুই করতে পারলো না।

করোনা বাংলাদেশে সামাজিক বিস্তার লাভের পেছনে এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত জনচলাচল বিশেষভাবে দায়ী। তারও আগে, প্রবাস থেকে আসা হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গরোধে নিতে না পারার ব্যর্থতাও করোনার সামাজিক বিস্তারের পেছনে কম দায়ী নয়।

এইসব ঘটনা থেকে সংশ্লিষ্টরা আদৌ কোনো শিক্ষা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতন হওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়ভাবে দেখাতে পারেননি। বরং ব্যবসায়ী সমিতির চাপে ঈদের আগে মার্কেট খুলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটালেন, যার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারের ঘরে চলে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার ও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এটা ঠিক যে, করোনার জন্য সবকিছু সারা জীবনের জন্য বন্ধ করে রাখা যায় না। বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং পূর্ণ সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজও চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তা বার বার পরীক্ষামূলক মনোভাবে একবার খুলে দিয়ে আবার বন্ধ করে করা যায় না। মানুষের জীবন ও মরণের মতো অত্যন্ত মারাত্মক, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে রেখে 'ট্রায়াল-এরর' পদ্ধতিতে কাজ করা যায় না। কাজ করতে হবে সবদিক বিবেচনা করে ও খতিয়ে দেখে।

ফলে অফিস, গণপরিবহন খোলা ও বন্ধ বিষয়ে সুস্পষ্টতা দরকার। পরবর্তীতে আসবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়। তা কেমন হবে, সেটা কর্তৃপক্ষকে আগেভাগে ভেবেই করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষের ক্ষয়ক্ষতিকে সীমিত রেখেই। তাদেরকে বিপদে বা বিভ্রান্তিতে ফেলে নয়।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও আছে ঘোরতর করোনা সংক্রমিত বিপদের কালে। এ বিপদ থেকে অবশ্যই আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এজন্য বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা অবিরাম কাজ করছে। ফলে সবার মধ্যে সমন্বয় করে এবং সকলের মতামত নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বিশেষত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষের পেশাগত কার্যক্রম ও সামাজিক চলাচলের নীতিমালা প্রণয়ন হওয়া দরকার। কোনোমতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না, যা বিপদ বাড়াতে পারে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত করে সামাজিক সংক্রমণ ত্বরান্বিত করতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর