করোনায় জাগ্রত তারুণ্য

, যুক্তিতর্ক

মুত্তাকিন হাসান | 2023-08-22 09:40:13

অন্যরা তোমাকে দিয়ে কী করাতে চায় তা নয়, বরং তুমি কী করতে চাও বা তুমি কী করতে পছন্দ করো সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েরা নিজের স্বকীয়তা প্রায় হারিয়ে ফেলছে। বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজন যা বলছে, তার ওপর বাধ্য হয়েই গুরুত্বটা বেশি দিচ্ছে, যার ফলে প্রত্যেকেই নিজের পছন্দকে ভুলে আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলছে। বর্তমানে তরুণরা নিজের চেয়ে পরিবারকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। বাবা-মা বা আত্মীয় বলেছে আমাকে ডাক্তার হতে, তাই আমাকে পড়ালেখা বেটে খেতে হলেও আমার ডাক্তারই হতে হবে। কেন? নিজের পছন্দ মতো কিছু করেও সেরাটা উপহার দেয়া যায়।

এখনকার যুগে বেশিরভাগ তরুণদের নিজের বলতে কিছু থাকছে না, থাকছে না নিজের কোনো গল্প। তাদের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। মানতে একটু কষ্ট হলেও এটাই সত্যি যে অন্য কারো চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি করছে তারা নিজেরাই। হয়তো সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু কিছুতেই উন্নতি আসছে না তাদের জীবনে। কিংবা সব আছে, অথচ মনে নেই শান্তি। পরগাছা মনোভাবাপন্ন হওয়ায় নিজের ভেতরের অদম্য শক্তিটা নেতিয়ে যাচ্ছে, ঠিক পাখির রাজা ঈগলের মুরগির মতো বেঁচে থাকা।

একটি ছেলে পাহাড়ের পথ বেয়ে আসার সময় একটি ঈগল পাখির ডিম পায়। সে ডিমটি এনে মুরগির খামারের সাথে ডিমটি রেখে দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে ডিম থেকে ঈগলের বাচ্চা বেরিয়ে আসে এবং মুরগির বাচ্চাদের সাথে বড় হতে থাকে। ঈগলটি বড় হতে হতে মুরগি যেভাবে জীবনযাপন করে ঠিক তেমনটাই করে। সে এখানে সেখানে খাবার বা কীটপতঙ্গ খুঁজতে থাকে। উড়তে গিয়েও উড়তে পারে না। আরও বেশ কিছুদিন পর ঈগলটা বয়স্ক হয়ে পড়ে। একদিন সে আকাশে মেঘের মাঝে তার মতো কিছু একটা দেখতে পেলো, যা খুব ক্ষিপ্র গতিতে উড়ে বেড়াচ্ছে। ওটা কি অবাক হয়ে ঈগলটি জিজ্ঞাসা করলো। এক মুরগী উত্তর দিলো- ওটা ঈগল। পুরো আকাশ জুড়ে তাদের রাজত্ব, তারা আকাশের রাজা। আমরা শুধুমাত্র মাটিতে থাকি। আমারাতো মুরগি। ওদের কথা ভেবো না। আমরা ওদের মতো বিশাল আকাশে উড়তে পারবো না। সেই ঈগলটি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মুরগির মতোই জীবন যাপন করেছিলো কারণ সে ধরেই নিয়েছিলো তার জীবন আর মুরগির জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

শুধুমাত্র আশেপাশের মানুষগুলোর কথায় অনেক সময় আমাদের ইচ্ছার ডানাগুলো ভেঙ্গে যায়। তরুণরা আর এগোতে পারে না। বিশ্বাস করতে পারে না যে তাদের ঈগলের মতো ডানা আছে, যা দিয়ে তারা অনেকদূর যেতে পারে। তোমাকে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যা করতে তোমার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। তাই মনের মধ্যে আপসোস রেখে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য সাধন হয় না।


তবে করোনাকালে তরুণদের কিছু পদক্ষেপ চোখে পরার মতো। করোনা আতংকের খবরে আমরা যখন নাকাল তখন কিছু কিছু খবরের পাতা, সোশ্যাল মিডিয়া আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কিছু তরুণদের উদ্যোগ দেখে মন ভরে যায়। অনেকে যখন ভয় আর আতংকে ঘরে আবদ্ধ সময় কাটাচ্ছে তরুণরা তখন তাদের স্বাভাবিক বৃত্তের বাইরে এসে অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের জীবনের তোয়াক্কা না করে অপরের জীবন বাঁচাতে করোনার সাথে লড়াই করছে। অথচ করোনাকালে তাদের অনেকেই নিজেদের চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত।

করোনা তরুণ প্রজন্মকে অনেকটাই নিষ্ঠাবান, নীতিবান হতে প্রেরণা যুগিয়েছে। জাগ্রত করেছে তাদের মানবতাকে। শুধু তাই নয়, তরুণরা সহজলভ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনে, শিক্ষায় ও দক্ষতায় নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে। এর সুস্পষ্ট প্রমাণ- চাকরি বা সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে তরুণদের অহরহ সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ডিসকাশন।


তারা তাদের কাজের দ্বারা তাদের ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করেছে। করোনা জাগিয়ে তুলেছে তরুণদের মরে যাওয়া মানবিকতা। মানুষকে সহায়তার পথে নেমেছে এক ঝাঁক তরুণ। তারা কোনো সেলিব্রেটি বা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, একেবারেই সাধারণ মানুষ হিসেবে নেমেছে। তরুণদের চিন্তা চেতনা মুক্ত ও মানবিকতার স্পর্শ থাকলে নিশ্চয় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

বর্তমান সমাজের অডিয়েন্সরা নতুনের পূজারী। পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্রও এখন ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খুলে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। এতে দোষের কিছু নেই, তবে আসক্তটা দোষের। নিজের মধ্যে সমস্যা না পুষে প্রতিদিন একটা নতুন কিছু খুঁজুন। কে আপনাকে কী ভাবছে তা বড় কথা নয়, আপনি কী ভাবছেন বা আপনার ভাবনাটা কীভাবে ভাবছেন তাই মুখ্য বিষয়।কেউ যদি আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবে তাতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশ এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে যখন তরুণদের সংখ্যা অনেক বেশি। করোনা পরবর্তী দেশের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা নীতিমালা গ্রহণে অবশ্যই তারুণদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। তরুণদের মাঝে চেতনা যোগানো যেমন সরকারের কর্তব্য তেমনি সমাজের অগ্রজদেরও অনেক কর্তব্য রয়েছে। করোনার প্রভাবে তরুণরা যে ইতিবাচক মনোভাব বুকে ধারণ করেছে কোনভাবেই তাতে দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। কারণ আগামী প্রজন্মই বাংলার ইতিহাস ও গৌরবকে বুকে ধারণ করে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাবে। ওদের সজিব সতেজ মননেই লালিত হবে আগামীর বাংলাদেশ।

মুত্তাকিন হাসান: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ পেশাজীবী

এ সম্পর্কিত আরও খবর