বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য আজও কাঁদায়

, যুক্তিতর্ক

এনামুল কবির | 2023-09-01 17:43:54

আগস্ট মানে শোক, বিশেষ করে বাঙালিদের জন্য। কেননা এই মাস সর্বাধিক শক্তিমান বাঙালিকে কেড়ে নিয়ে আমাদের নি:স্ব করেছে- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত। মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, রামকৃষ্ণ পরম হংসদেব, ক্ষুদিরাম বসু, হুমায়ুন কবির, নিহাররঞ্জন রায়, হরিনাথ দে, কবি সিকানদার আবু জাফর, কবি শামসুর রাহমান, আবু জাফর শামসুদ্দীন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (বীরশ্রেষ্ঠ) এমন অসংখ্য গুণী বাঙালিকে হারিয়েছি আমরা এই মাসে। আজ যখন লিখতে বসছি তখনও বাতাসে চলছে শোকের মাতম। পদ্মায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে দুই-তিন কিংবা চার শতাধিক লোকের সলিল সমাধি। এই মৃত্যুর মিছিলের শুমারি আমার উদ্দেশ্য নয়। আগস্ট কিভাবে শোক হয়ে মিশে গেছে আমার সুদূর শৈশবে সেটাই আলোচ্য। বহু বছর পর হৃদয়ের ঢাকনা খুলে পলেস্তরা পড়া স্মৃতির পর্দা সরাতেই ভেসে ওঠে শৈশবে দেখা একটি মুখ-যাঁর দুর্নিবার আকর্ষণ আমার স্মৃতিতে আজও অমলিন। তিনি আর কেউ নন-বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৮ সাল, আমি প্রাইমারী পাস করে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি, দুরন্ত কৈশোরকাল। খেলাধুলা, গান-বাজনা নিয়ে মেতে থাকি। এর মধ্যে বাঁশি এবং মাউথ অর্গান বাজানোতে আমার বেশ দক্ষতা তৈরি হয়েছে, পাশপাশি সুনামও ছড়িয়েছে। আমার বড় দুলাভাই খবির উদ্দিন খান চৌধুরী ঢাকার বাসিন্দা। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে আমার বৃত্তান্ত জানালেন। তিনি বাবাকে বললেন, ‘মানিক (আমার ডাকনাম) গ্রামের বাড়িতে থাকলে খেলাধুলা আর গান-বাজনা নিয়ে মেতে থাকবে, ওর পড়ালেখা হবে না; জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আমি ওকে ঢাকায় নিয়ে যাই, ভাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই, যাতে ওর ভবিষ্যত জীবনটা সুন্দর হয়। ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমার বাবা রাজি হলেন। দুলাভাই আমাকে নিয়ে এলেন ঢাকায়। শ্যামল-স্নিগ্ধ প্রিয় গ্রাম ছেড়ে চলে এলাম ইট-কাঠের শহরে। আসার সময় যে অ্যাডভেঞ্চারটা পোষণ করেছিলাম বুকের ভেতরে, মাত্র ক’দিনে তা উবে গেল। আমি আগে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি গ্রাম এতটা মিশে আছে আমার অস্তিত্বে। গাছের ডালে চড়ে গলা ছেড়ে গান করতে পারছি না, বাঁশি কিংবা মাউথ অর্গান বাজাতে পারছি না। সামনে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ নেই, সবুজ প্রান্তর নেই, বলতে গেলে আমার চেনা-জানা কিছুই নেই। শুধু খেলাধুলা আর গান-বাজনা করার অপরাধে আমাকে গ্রহণ করতে হলো শহুরে অভিবাসন। দুলাভাই তাঁর কথা রেখেই আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ওয়ারী গ্র্যাজুয়েট হাই স্কুলে। কিছু দিনের মধ্যে মানিয়ে নিলাম। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি বাঁশি ও মাউথ অর্গান বাজাতাম। আমার চাচা আশরাফুল হক ছিলেন আমার পছন্দের মানুষ। তিনি আমার সব কাজে উৎসাহিত করতেন। আমার বাঁশি বাজানো পছন্দ করতেন। তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাস করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

একদিন আশরাফ চাচা আমাকে বললেন, ‘মানিক তোকে আজ এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাব, যেখানে তুই কখনও যেতে পারবি না।’ বিকেল ৪টার দিকে নারিন্দার বাসা থেকে চাচার সঙ্গে বের হলাম। কোথায় যাচ্ছি জানি না। তিনি আমাকে নিয়ে গেণ্ডারিয়ার একটি বাড়িতে এলেন। বৈঠকখানা ঘরে ঢুকেই দেখি মেঝেতে বিরাট একটা সাদা কাপড়ের বিছানা পাতা। বেশ কয়েকজন লোক কথা বলছেন, কথা মানে রাজনৈতিক কথা। কেউ বালিশে হেলান দিয়ে, কেউ বালিশ কোলের ওপর রেখে আয়েশী ভঙ্গিতে বসেছেন। আমি তাঁদের কাউকে চিনি না, তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ লোক হবেন তা বুঝতে বাকি রইল না। চাচা আমাকে ঘরের এক কোনায় নিয়ে বললেন, ‘তুই এখানে বসে থাক।’ আমি বসে রইলাম।

আস্তে আস্তে প্রায় ২০-২৫ জন লোকে পুরো ঘরে ভরে গেল। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলল রাজনৈতিক আলোচনা। আমি সে আলোচনা বুঝি না, কথা বলারও কেউ নেই; তাই ঘুম পাচ্ছিল। চাচা দূর থেকে দেখলেন আমি ঘুমোচ্ছি। তিনি বেশ বিরক্ত হলেন, আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললেন, ‘চল তোকে বাসায় রেখে আসি।’ এমন সময় বালিশ নিয়ে বসে থাকা কেউ একজন উচ্চৈ:স্বরে খুব ভরাট কণ্ঠে চাচাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আশরাফ এ ছেমড়া কেডারে।’ চাচা বললেন, ‘আমার মিয়া ভাই’র ছেলে ‘মানিক’। চাচা আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। তিনি আমার মাথায় হাল্কা করে একটি টোকা মেরে বললেন, ‘তোর মাথার চুলগুলো তো সুন্দর।’ বাসায় ফেরার পথে চাচা আমাকে বললেন, ‘তুই জানিস এঁরা কে, এঁদের কথা না শুনে ঘুমোচ্ছিস?’ আমি বললাম, ‘চাচা এঁরা কারা? তিনি বলেন, ‘তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান। এঁদের নাম শুনেছি কিন্তু দেখা পাব ভাবিনি। এই প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনা সামনি দেখলাম এবং সান্নিধ্য পেলাম। কিন্তু তখন বুঝতে পারি নাই, এই শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির দূত হবে। আমার মনের মধ্যে এমন একটা অনুভূতি জাগল যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলাম না। এই প্রথম এত বড় বড় নেতার খুব কাছাকাছি থেকে দেখলাম। তখন থেকেই মনে মনে চিন্তা করতে থাকলাম, কাল সকালে কীভাবে স্কুলের বন্ধুদের বিশ্বাস করাব আমার এই অসম্ভব গল্পের কথা।

প্রথমবার বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলাম ১৯৫৮ সালে, দ্বিতীয়বার যখন বঙ্গবন্ধুকে সামনা সামনি দেখলাম এবং তাঁর সান্নিধ্য পেলাম, সেটা ছিল ১৯৭০ সাল। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সাল। এই বারো বছরে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বাঁশি বাজানো ছেড়ে গিটার শিখলাম। তারপর গিটার শিক্ষকও হয়ে গেলাম। ১৯৬৮ সালে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী একেএম সামসুজ্জোহার স্ত্রী নাগিনা ভাবি আমার কাছে গিটার শেখা শুরু করলেন। সপ্তায় দুই দিন যেতাম ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে, তাঁর চাচার বাসায়। সেই থেকে আমি জোহা ভাই ও ভাবির স্নেহের পাত্র হয়ে গেলাম। জোহা ভাইয়ের দুই ছেলে-শামীম ওসমান ও নাসিম ওসমান। তাদের মায়ের শিক্ষক হিসেবে আমাকে খুব ভয় করত। এখন তারা অনেক বড়।

১৯৭০-এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয় লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এ নির্বাচনের পরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা কয়েকজন ডেলিগেটকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু নৌবিহারে যাবেন। জোহা ভাই আমাকে বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানীদের বাংলা গান শোনাতে হবে, যেমন- পল্লীগীতি, লালন গীতি, ভাওয়াইয়া এবং রবীন্দ্র ও নজরুল গীতি। জোহা ভাই শিল্পীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিলেন আমাকে। আমি আমার বন্ধু সর্দার আলাউদ্দিন, ওস্তাদ নিতাই রায় ও তবলা বাদক রঞ্জিত রায়কে নির্বাচন করলাম। যথাসময়ে আমরা পাগলাঘাট থেকে ‘মেরী এন্ডারসন’ নৌযানে উঠলাম। ১০-১৫ মিনিট পরে গানের আসর শুরু হলো। সর্দার আলাউদ্দিন পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া ও লালন গীতি শোনালেন। ওস্তাদ নিতাই রায় সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি গান করলেন, সঙ্গে রবীন্দ্র এবং নজরুল সঙ্গীত করলেন, তা প্রায় একঘণ্টা ধরে। তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে গানের আসর উপভোগ করছিলেন। সবার শেষে আমার গিটার বাজানোর পালা। আমি প্রথমে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মন রে আমার’ পরে ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ বাজিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু গানের সময় মাঝে মাঝে নিজের হাঁটুতে টোকা (তাল) দিচ্ছিলেন। আমার বাজনা শেষ হলে অতিথিদের নিয়ে শিল্পীদের নিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন ‘তু্ই তো আমার পছন্দের গান বাজাইছিস, তোর নাম কি?’ আমি বললাম, আমার ডাকনাম মানিক। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোর বাড়ি কোহানে?’ আমি বললাম, জেলা যশোর, থানা কালিয়া, গ্রাম ডুমুরিয়া। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন, ডুমুরিয়ার তুই কার ছাওয়াল?’ বললাম, বাবার নাম শেখ সারোয়ার। সঙ্গে সঙ্গে আমার পিঠে স্নেহের থাপ্পড় মেরে বললেন, ‘তুই তো আমার মিয়া ভাইয়ের ছেলে, তোর বাবা গোপালগঞ্জে আমার এক ক্লাস ওপরে ছিলেন। ‘নৌবিহার শেষে আমরা যখন ঘাটে ফিরলাম, তখন বিকেল ৬টা। জাহাজ থেকে নেমে, বঙ্গবন্ধুকে সালাম জানালাম। তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘চালায় যা-আরও ভাল করিস।’ ভাল আমি করেছি বঙ্গবন্ধু, কিন্তু তোমাকে দেখাতে পারলাম না বা আর শোনাতে পারলাম না। তোমার সামনে গিটার বাজানো এবং তোমার আশীর্বাদ, আজ আমার স্মৃতিতে কতটা বেদনাদায়ক তা কি করে বোঝাব?

পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যদের হাতে সপরিবারে নিহত হলে তুমি। পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল তোমারই বুকের কাছে লালিত নব্য মীর জাফরের দল। ৩২ ধানমন্ডি যেন মিশে গিয়েছিল পলাশীর প্রান্তরে। কার্যত আবারও সাগরে ভাসল বাঙালি। আজকে অবস্থানে পৌঁছতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেছি আমরা, তা সবার সবার জানা। ওই ঘৃণ্য চক্র তোমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল বাঙালির হৃদয় থেকে। আজ তারাই আঁস্তাকুড়ে চলে গেছে। তুমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের জাতির জনক।

আজ তুমি নেই, কিন্তু তোমার আশীর্বাদ আছে আমার গিটার বাদনের সঙ্গে। তাই আমার গিটারের সুরও মিশে আছে তোমার সঙ্গে, থাকবেও অনাদিকাল। পিপলস ভয়েস নামে তোমার ১১০টি কণ্ঠভাষণের সিডি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রত্যেকটি ভাষণের পূর্বে আমার গিটারের সুর সংযোজিত হয়েছে, যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অনুভব। এ নিয়েও আমার বেশ দুঃখবোধ আছে কিন্তু তা আমার তৃপ্তিকে ম্লান করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা আমার গিটারের সুর তোমার সঙ্গে আছে।

কষ্টের প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন বিষয়টা একটু খোলাসা করি। প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ একদিন আমাকে টেলিফোন করে বললেন, ‘কবির ভাই, বঙ্গবন্ধুর ১১০টি কণ্ঠভাষণের সিডি প্রকাশের অপেক্ষায়। আপনার বাজানো গিটারে ‘মুক্তিযুদ্ধের গান’ থেকে গিটারের সুরগুলো প্রত্যেকটি ভাষণের পূর্বে সংযোজিত হবে। আমার পিএকে পাঠালাম, অনুগ্রহ করে গিটারের সিডিটা পাঠাবেন।’ আমি সানন্দে রাজি হই এবং গর্ব অনুভব করি। এ রকম একটি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আনন্দ বর্ণনাতীত, আর বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে আমার গিটার বাদন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে একজন শিল্পীর জীবনে।

পিপলস ভয়েস এর প্রকাশনা উৎসব হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে। মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সাহেব আমাকে একদিন সকালবেলা ফোন করে বললেন, ‘কবির ভাই, আজ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সিডি প্রকাশিত হবে, ভাবিকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে চলে আসবেন। আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে পারলাম না বলে মনে কিছু করবেন না। প্রকাশনীর অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হওয়ার পরে সিডির প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখি এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের নাম উল্লেখ আছে সিডির কভারে কিন্তু আমার নাম নেই। আমি মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ সাহেবের কাছে ব্যাখ্যা চাইলাম। তিনি বললেন, ‘ভুল হয়ে গেছে কবির ভাই, পরবর্তী সংস্করণে শুধরে নেয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। আমি জানি না, এমন একটি মহৎ কাজে যারা সম্পৃক্ত, তারা কি করে এতটা অনুদার হন? না কি ইচ্ছাকৃত একজন শিল্পীকে অবমূল্যায়ন করলেন? আমার ভাবতে অবাক লাগে এই সব মানুষ নিজেদের বঙ্গবন্ধুর অনুসারী দাবি করেন। যারা বঙ্গবন্ধুর উদারতার চুলকণাও পাননি। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আছি এটাই আমার পরম পাওয়া। একদিন আমি হারিয়ে যাব। কিন্তু ‘পিপলস ভয়েস’-এ প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ১১০টি কণ্ঠভাষণের সঙ্গে আমার গিটার বাদন থেকে যাবে অনন্তকাল। কেননা বাঙালি এবং বঙ্গবন্ধু অভিন্ন সত্তা। কখনও আলাদা করা যাবে না, তা সম্ভব হয়নি। এমন ঘটনা আরও ঘটেছে, সেটাও আমরাই সঙ্গে। সংসদ টেলিভিশনে আমার গিটারের সুর বাজে সারাদিন, কিন্তু একবারের জন্যও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়নি। কাকে দোষ দেব, নিজের ভাগ্যকে ছাড়া?

তৃতীয়বার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে যাওয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে শান্তিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এ বছর মার্চ মাসের ২৩ তারিখে। আমার স্ত্রী, অসুস্থ বড় বোন এবং আমেরিকা প্রবাসী ভাগ্নি ডা. শামীম আরা খান চৌধুরী মিতাকে নিয়ে নড়াইলের ডুমুরিয়া আমার গ্রামের বাড়ি যাই। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে তবেই বাড়িতে যাব।

বঙ্গবন্ধু আর ফিরে আসবেন না আমাদের মাঝে। কিন্তু বাঙালির চেতনায় থেকে যাবেন চিরকাল। আত্মার আত্মীয় হয়ে। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আছি, থাকব; তাতে কে আমাকে মূল্যায়ন করল আর কে করল না, তা দেখার অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধু তোমার সান্নিধ্য আমাকে ধন্য করেছে, আমি তৃপ্ত; আমি গর্বিত।

লেখক: গিটার শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, স্বরলিপিকার এবং সুরকার

এ সম্পর্কিত আরও খবর