একজন ব্যবসায়ীর বিদায়ে একজন গণমাধ্যমকর্মীর শোকগাঁথা

, যুক্তিতর্ক

প্রভাষ আমিন | 2023-08-29 05:20:45

১ জুলাই এলেই আমার লতিফুর রহমানের কথা মনে হয়। চার বছর আগে ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন লতিফুর রহমানের নাতি উজ্জ্বল তরুণ ফারাজ আইয়াজ হোসেনও। কোনো শোকার্ত মানুষ দেখলে আমার হৃদয় আর্দ্র হয়ে যায়। আমি খালি ভাবি, এই শোক আমি সইতে পারতাম তো?

১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল গুলশানের বাসায় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে। মেয়ের শোক সামলে উঠেছিলেন লতিফুর রহমান, চালিয়েছিলেন দীর্ঘ আইনি লড়াই। কিন্তু নাতির শোক সামলাতে পারেননি। ফায়াজের মৃত্যু তাকে বড় ধাক্কা দিয়েছিল। ২০২০ সালের ১ জুলাই শারীরিক মৃত্যু হলেও লতিফুর রহমান আসলে মারা গিয়েছিলেন চার বছর আগে একই দিনে। ফারাজের মৃত্যুর পর তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন, সবকিছু থেকে আড়াল করে নেন নিজেকে। আগের দিন হলে হয়তো বৈরাগী হয়ে জঙ্গলে বা পাহাড়ে চলে যেতেন। কিন্তু তিনি সব ছেড়ে-ছুড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। গ্রাম মানে একেবারেই গ্রাম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায়। বলছিলাম, ১ জুলাই এলেই আমার লতিফুর রহমানের কথা মনে হয়। ভাবি মেয়েকে হারানোর পর নাতি হারানোর ব্যথা নিয়ে কীভাবে বেঁচে আছেন তিনি। এবারও মনে পড়েছে। কিন্তু, ১ জুলাই দুপুরে অফিস থেকে ফোন করে যখন লতিফুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ কনফার্ম করে দিতে বললো, আমি চমকে গেলাম। এমন কাকতালীয় ঘটনাও ঘটে বুঝি!

লতিফুর রহমান অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার লোক কাজ করে। কিন্তু এটা তার সাফল্যের মাপকাঠি নয়। ১০ হাজার বা তার বেশি লোককে চাকরি দিয়েছেন, এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন বাংলাদেশে। কিন্তু লতিফুর রহমান খুব বেশি নেই। ব্যবসায়ী মহলে আমার খুব বেশি জানাশোনা নেই। কিন্তু যতটুকু জানি, ব্যবসায়ী মহলে লতিফুর রহমান সত্যি ব্যতিক্রমী। ব্যবসায়ী বললেই ঋণখেলাপী, আরেকজনকে ল্যাং মেরে সামনে এগিয়ে যাওয়া, লোক ঠকানো, শ্রমিক-কর্মচারি ঠকানো, ঔদ্ধত্য, অহংকার, বিদেশি পাসপোর্ট, টাকা পাচার— এমন নানা ছবি ভাসে চোখে। কিন্তু লতিফুর রহমানের নাম শুনলেই নৈতিকতা, সততা, বিনয় আর দেশেপ্রেমের ভিন্নতর এক ছবি সবার মধ্যে ভালো লাগার এক পরশ বুলিয়ে দেয়। কাউকে না ঠকিয়েও যে শীর্ষে ওঠা যায়, লতিফুর রহমান তার প্রমাণ। এগুলো নিছক মুখের কথা নয়। নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি পান বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নোবেল বলে খ্যাত।

গত কয়েকদিনে তার সততা, বিনয়, সৌজন্য নিয়ে অনেক রকমের গল্প শুনেছি, পড়েছি। আমি জানি সবগুলো সত্য। তার অফিসের পিয়নও তাকে আগে সালাম দিতে পারেনি। তার বিনয় প্রায় গল্পের মতো অবিশ্বাস্য। তিনি কথা বলতেন মৃদুস্বরে। তবে একজন বিনয়ী ও সফল ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে একজন সাংবাদিকের বিশাল কলাম লেখার দরকার নেই। আমার শোক, বেদনা আসলে একজন সফল ব্যবসায়ীর জন্যও নয়। আমি বিশ্বাস করি, ১ জুলাই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্যও গভীর এক শোকের দিন। লতিফুর রহমান দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের মালিক ছিলেন। মালিকের মৃত্যুতে তার কর্মচারীরা শোকার্ত হতেই পারে। কিন্তু দুই দশক আগে প্রথম আলো ছেড়ে আসার পরও তার মৃত্যু আমাকে শোকার্ত করেছে। লতিফুর রহমানের মৃত্যু শুধু তার প্রতিষ্ঠানের জন্য শোকের নয়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্যও শোকের। কারণ লতিফুর রহমানের মতো মালিক আকাঙ্ক্ষা করা যায়, স্বপ্নে দেখা যায়, বাস্তবে পাওয়া যায়ই না প্রায়। লতিফুর রহমানের চেয়েও বিনয়ী এবং সফল ব্যবসায়ী হয়তো খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু তার মতো গণমাধ্যম-উদ্যোক্তা আর কখনো পাবে না বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই এই বিবেচনায় লতিফুর রহমান একজন উদাহরণ।

আগেই বলেছি, গত কয়েকদিনে লতিফুর রহমানকে নিয়ে অনেক লেখা দেখেছি, সবগুলো পড়িনি। নিজের লেখা প্রভাবিত হতে পারে, এই শঙ্কায়। তবে উৎপল শুভ্রের লেখাটি পড়ে ফেলেছিলাম, তার গদ্যের লোভে। পড়েই পড়েছি বিপদে। প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া আমার লেখাটি আবার নতুন করে লিখতে হলো। নইলে সবাই ভাবতো আমি উৎপল শুভ্রের লেখা নকল করেছি। যদিও উৎপল শুভ্রের লেখা নকল করা যায় না, অননুকরণীয়। তবে ভাবনাটা মিলে গেছে। তাই চেষ্টা করেছি আলাদা রাখতে। তিনিও আসলে গণমাধ্যমের জন্য লতিফুর রহমান কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই বলতে চেয়েছিলেন। আর সাংবাদিক ড. হারুন অর রশিদ ফেসবুকে অল্পকথায় বলে দিয়েছেন সবটুকু, ‘আমাদের সংবাদপত্রের বহু মালিক নিজের পত্রিকাটি প্রথম আলোর মতো হোক, সেটা চান। কিন্তু নিজেরা লতিফুর রহমান হতে চান না।’ এরচেয়ে বড় সত্য আসলে কিছু নেই।

কবি আবু হাসান শাহরিয়ার একবার লিখেছিলেন, ‘আগে বড়লোকেরা সম্পদ পাহাড়ার জন্য কুকুর পুষতো, এখন গণমাধ্যম পোষে।’ এটা ঠিক। বাংলাদেশে এখন প্রায় সবগুলো বড় শিল্প গ্রুপেরই এক বা একাধিক গণমাধ্যম আছে। তারা সেই গণমাধ্যম বানায় নিজেদের স্বার্থে; নিজেদের সম্পদের সুরক্ষা দিতে। অনেক পত্রিকার নিউজ দেখলেই বোঝা যায়, পেছনে মালিকের কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িত। প্রথম আলোর নানা নিউজের পেছনেও নানা অ্যাজেন্ডা থাকে। তবে তার সঙ্গে লতিফুর রহমানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি নিজে কিছুদিন প্রথম আলোর চিফ রিপোর্টার ছিলাম। ভেতর থেকেও দেখেছি, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আসা ছাড়া প্রথম আলোর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। মালিকের এই ‘সম্পর্ক না থাকা’টাই একটি স্বাধীন পত্রিকা বা গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম আলোর সাফল্যের জন্য মতিউর রহমান এবং তার যোগ্য টিমের অবদান যতটা, লতিফুর রহমানের অবদান তারচেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মতিউর রহমান এবং তার এই টিম তো আগেও একসঙ্গে ছিলেন। সেখানে তো তারা সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করতে পারেননি।

মতিউর রহমান যখন প্রথম আলো করার উদ্যোগ নেন, তখন লতিফুর রহমান খালি গুণে-মানে এক নম্বর পত্রিকা বানানোর চাহিদা দিয়েছিলেন। নিজের সততা, নৈতিকতা আর মানবতার প্রতিফলন ঘটাতে চেয়েছিলেন। মতিউর রহমানরা যা চেয়েছেন, লতিফুর রহমান দিয়েছেন তারচেয়ে বেশি। খরচের কথা বিবেচনা করে প্রথম আলোর টিম ভেবেছিল শুরুতে তিন দিন রঙিন এবং তিন দিন ফিচার পাতাসহ পত্রিকা করার। এটাই ছিল তাদের প্রস্তাব। লতিফুর রহমান পুরো প্রস্তাব উল্টে দিয়ে বলেছিলেন সাত দিনই রঙিন এবং সাত দিনই ফিচার পাতা করতে। প্রথম আলো টিম যা চাইতে সাহস করেনি, লতিফুর রহমান দিয়েছিলেন তারচেয়েও বেশি। এই সাহস আর নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার ডানায় ভর করেই প্রথম আলো উড়তে পেরেছিল সম্ভাবনার সীমাহীন আকাশে।

লতিফুর রহমানের মৃত্যু কেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য শোকের তা বোঝাতে আমি বরং উৎপল শুভ্রের লেখা ধার করি, ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে ঠিকই অমর হয়ে থাকবেন লতিফুর রহমান। প্রথম আলো কেন প্রথম আলো হতে পেরেছিল, সেটি সাংবাদিকতার ছাত্রদের একটা গবেষণার বিষয় তো হতেই পারে। নির্মোহভাবে সত্যিই যদি কেউ তা করেন, অবধারিতভাবেই তাতে বড় একটা অধ্যায় বরাদ্দ থাকবে লতিফুর রহমানের জন্য। যেখানে “যা করেছেন”— এর সমান বা তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে লেখা থাকবে “যা করেননি”। আদর্শ গণমাধ্যম মালিক হতে হলে কখনো কখনো করার চেয়েও ওই না-করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো হস্তক্ষেপ না করা। পেশাদারদের ওপর আস্থা রেখে তাদের কাজ তাদের করতে দেওয়া।’

প্রথম আলোর সাফল্যের জন্য সম্পাদক মতিউর রহমানের অতি সক্রিয়তা আর মালিক লতিফুর রহমানের অতি নিষ্ক্রিয়তার রসায়নটাই আসল। কার অবদান বেশি? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্যও আমি আবারও উৎপল শুভ্রের কাছেই হাত পাতবো, ‘বাংলাদেশে মতিউর রহমানের মতো আরেকজন সম্পাদক পাওয়ার সম্ভাবনা ৫-১০ পার্সেন্ট থাকলেও থাকতে পারে, তবে লতিফুর রহমানের মতো আরেকজন সংবাদপত্র মালিক পাওয়ার সম্ভাবনা জিরো পার্সেন্ট।’

অন্য সবাই যখন ব্যবহার করার জন্যই গণমাধ্যম গড়েন, লতিফুর রহমান তখন নিজেকে যথাসম্ভব আড়ালে রেখেছেন। বরং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের জন্য তাকে অনেক বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।

লতিফুর রহমান জানতেন, একটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়তে হলে তার মানবসম্পদের ওপর জোর দিতে হবে, কর্মীদের নিশ্চিত জীবন দিতে হবে। মতিউর রহমানের নেতৃত্বে একটা দক্ষ টিম তিনি পেয়েছিলেন। সেই টিমের কর্মীদের জীবনে নিশ্চয়তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্যও তার চেষ্টা ছিল অভাবনীয়। আমরা সাংবাদিকরা লড়াই করি ওয়েজবোর্ডের জন্য। আর লতিফুর রহমান দিতেন তার চেয়েও বেশি। দুই দশক আগে পত্রিকার সাংবাদিকদের পদবি অনুযায়ী গাড়ি ও মোটরসাইকেল দেওয়ার বিষয়টি বৈপ্লবিক বললেও কম বলা হবে।

প্রথম আলোর চিফ রিপোর্টার থাকার সুবাদে পদাধিকার বলে প্রথম লটে আমিও একটি মারুতি ৮০০ সিসি গাড়ি পেয়েছিলাম। মিরপুর থেকে বাসে এসে তখনকার শেরাটন থেকে গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। সেটা যে কতটা অকল্পনীয় এখন অনেককে তা বোঝানো যাবে না। অনেকে ভয় দেখাচ্ছিলেন, গাড়ি তো দিচ্ছে, দেখবা লোন কেটে নেবে বেতনের অর্ধেক। আর তেল-মেইনটেইনেন্সের পেছনে যাবে বাকি অর্ধেক। খাবা কী? সত্যি প্রথমে ভাবনাটা এমনই ছিল, গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া। কিন্তু লতিফুর রহমানের পরামর্শে, গাড়ি তো বটেই, সঙ্গে জ্বালানি, ড্রাইভার, মেইনটেনেন্স এমনকি ট্যাক্সও অফিস দিতো। যাতে গাড়ি কারো বোঝা না হয়। আর টানা ছয় বছর কাজ করলে গাড়িটি সেই কর্মীর নিজের হয়ে যেতো এবং তাকে আরেকটি নতুন গাড়ি দেওয়া হতো। এই দুই দশক পরেও সাংবাদিকদের স্বাচ্ছন্দ্য আর জীবনমানের কথা লতিফুর রহমানের মতো করে আর কে ভাবতে পেরেছে?

লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর ফেসবুকে অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। সবাই তার প্রশংসাই করেছেন। ব্যতিক্রম সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি স্ট্যাটাসে দুটি অভিযোগ উত্থাপন করেন, ‘উনার একটি প্রতিষ্ঠানে আমার এক সহোদর চাকরি করতো। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় চাকরির পর, খালি হাতে তাকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে, এমনকি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও দেওয়া হয়নি। উনার প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোতে এক তৃতীয়াংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটাও নিশ্চয়ই উনার জীবিত থাকাকালীন সিদ্ধান্ত। যাদের চাকরি যাবে, তারাও কি তার প্রতিষ্ঠানে ১৫ লাখ টাকা বেতনভোগী ‘সাংবাদিক’ এর মতো সমান শোক অনুভব করবেন?’ মাসুদ কামালের অভিযোগ সত্যি। আমি টেলিফোনেও তার সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আমি নিশ্চিত হয়েছি, তার ভাইয়ের চাকরি যাওয়ার এবং পাওনা টাকা না দেয়ার ঘটনা গত চার বছরের মধ্যে। আর প্রথম আলোতে ছাঁটাই বা ছাঁটাইয়ের আশঙ্কাও সাম্প্রতিক প্রবণতা।

আমি তাকে বলেছি, ফারাজ মারা যাওয়ার পর লতিফুর রহমান আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। কাগজে-কলমে থাকলেও তিনি আসলে ট্রান্সকম বা প্রথম আলোর সঙ্গে আর ছিলেন না। তাই এই সময়ের কোনো

সিদ্ধান্তের নৈতিক দায় তাকে দেওয়াটা অন্যায় হবে। তবে আমার ভয়টা এখানেই। লতিফুর রহমান এমনভাবে প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছিলেন, যাতে তিনি না থাকলেও প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে। ট্রান্সকম এবং প্রথম আলোর সাফল্য নিশ্চয়ই আরও অনেকদিন থাকবে। তবে লতিফুর রহমান তার প্রতিষ্ঠানে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নৈতিকতা আর মানবিকতার যে মিশেল দিতে পেরেছিলেন, তা আর বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। লতিফুর রহমান বেচেঁ থাকতেই তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আটকে রাখা হয়। তাহলে সামনের দিনগুলোতে কী হবে? অতি পেশাদার হতে গিয়ে কি তারা মানবিকতাটুকু খুইয়ে ফেলছেন। যে প্রথম আলো এক সময় নিশ্চয়তার অপর নাম ছিল, সেখানেই এখন অনিশ্চয়তার কালো মেঘ! আমি নিশ্চিত লতিফুর রহমান সক্রিয় থাকলে তার কোনো প্রতিষ্ঠানই এভাবে ‘পেশাদার’ হয়ে উঠতে পারতো না। প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক জিয়া ইসলামের দুর্ঘটনার পর তাকে বাঁচাতে প্রতিষ্ঠান কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। লতিফুর রহমানবিহীন ট্রান্সকম বা প্রথম আলো কী এতটা মানবিক থাকবে? আমি সবসময় পেশাদারিত্বের সঙ্গে নৈতিকতা আর মানবিকতার মিশেল চাই।

এ কারণেই লতিফুর রহমানের মৃত্যু আমাকে শোকার্ত করেছে। গণমাধ্যমে যে সংকট ঘনিয়ে আসছে, তা মোকাবিলা করতে যখন লতিফুর রহমানের মতো আরও অনেক সাহসী উদ্যোক্তা দরকার, তখনই তার প্রয়াণ আমাদের আক্ষেপ বাড়াবে আরও।

অর্থের বিবেচনা বাদ দিলেও লতিফুর রহমানের সঙ্গে আমার নিজের তুলনা চলে না। তিনি হিমালয়, আমি স্তুপ; তিনি মহাসাগর, আমি ডোবা। তবুও তার সঙ্গে আমার আমার দুটি বিষয়ে মিল আছে। আমাদের দুজনের বাড়িই কুমিল্লায়, সেই আঞ্চলিকতাটুকু না হয় বাদই দিলাম। লতিফুর রহমান আর আমি জন্মেছিলাম একই দিনে, ২৮ আগস্ট; তবে তিনি ২৪ বছর আগে। তিনি শেষ জীবনটা গ্রামে কাটিয়েছেন; পারবো কি না জানি না, আমিও তেমন স্বপ্ন দেখি। আরেকটা মিল খুব করে চাই— তার মতো আমিও ঘুম থেকে চিরঘুমে চলে যেতে চাই। আহা! লতিফুর রহমানের মতো পূণ্যবানরাই বুঝি এমন মৃত্যু পান!

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

এ সম্পর্কিত আরও খবর