ব্রান্ডিং চালে বন্ধ হতে পারে খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর আড়ত

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

রকিব কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 14:35:49

 

কৃষকের উৎপাদিত ধান মিলের মালিকরা সংগ্রহ করতেন। সেই চাল বিভিন্ন আড়ত ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছায়। কিন্তু করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর চালের বাজারে প্রবেশ পাল্টে দিয়েছে বহুকাল ধরে চলে আসা সনাতন ব্যবসার পদ্ধতি।

অত্যন্ত ঝকঝকে, সিল্কি, পরিষ্কার চাল ব্রান্ডিং করছে প্রাণ, সিটিবাইজ, এসি, ব্যালকোর মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে চিনিগুড়া, সুগন্ধি চাল বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আর ক্রেতারা ঝুঁকছে এমন প্যাকেটিং চালের প্রতি।

চালের এমন বাজারজাত প্রক্রিয়া চালু থাকলেও একটা সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ের প্রাণকেন্দ্র খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলি চালের আড়ত। অবাধে কৃষি জমি বিনষ্ট, অপ্রয়োজনীয় বিলাস বহুল কোম্পানি, বসত-বাড়ি, সরকারের নীতি নির্ধারকদের দিক নিদের্শনা অভাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতনার অভাবকে দায়ী করেছেন তারা।

মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় বিভিন্ন চালের আড়তদার ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা যায়।

দেশের নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতীয় চাল বড় কার্গোতে, ট্রাকে করে এখানে আসে। এরপর খুচরা বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয় কক্সবাজার, হাটহাজারী, নাজিরহাটসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।

সারাদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আসা চাল গুদামে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে পাঁচশোর অধিক শ্রমিক ও আড়তদারদের কর্মস্থানের সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ কোটির অধিক টাকার লেনদেন হয় এখানে।

৪১ বছেরর বেশি সময় এই ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন পাহাড়তলী চাল বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আজমির স্টোরের মালিক আলহাজ্ব এস. এম. নিজাম উদ্দিন।

তার কাছে জানা যায় চালের  প্রথম দিনকার ও বর্তমান হালচাল।

তিনি জানান, তখনকার সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা ভালো ছিল না। টেলিফোন করে   মাল প্রেরণের কথা জানানো হতো। সেই মাল যমুনা, মেঘনা, দাউদকান্দী ফেরি হয়ে আসতে পাঁচদিনের বেশি সময় লাগত। বর্তমানে রাস্তাঘাট, মহাসড়কের কারণে দিনে দিনে চাল আসে।

অনেকটা আক্ষেপ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-ফেনী মহাসড়ক দিয়ে গেলে কোনো কৃষিজমি চোখে পড়ে না। নতুন নতুন কোম্পানি, ঘরবাড়ি করা হয়েছে। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চাষের জমি নষ্ট করে এত প্রতিষ্ঠান করা সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি।

দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও লোকবলের দিকে নজর দিতে গিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প- প্রতিষ্ঠান। এতে চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যেতে বসেছে।

এ প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিন বলেন, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশগুলোতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা হয়। কিন্তু এখানে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা, পরামর্শ ছাড়া পরিকল্পনা প্রণয়নের অভাবে মিল কারখানা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা করে কাজ করলে দেশের চাল আমদানি প্রয়োজন হতো না বলে জানান তিনি।

ক্রেতাদের অসচেতনার বিষয় জানতে চাইলে রহিম ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রহিম জানান, কৃষক থেকে সংগ্রহ করা চালটিকে সঠিকভাবে পানি দিয়ে পরিস্কার করা হয় করায় তা অধিক স্বাস্থ্যমত ও অনেকদিন ভালো থাকে। কিন্তু প্যাকেটিং চালে এ ধরেণের সুযোগ না থাকায় একটা সময় গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

এভাবে নিয়ন্ত্রণহীণ আর অবাধে চালের ব্র্যান্ডিং চলতে থাকলে খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর বিশাল চালের আড়ত বন্ধ হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর