ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯০ মামলা তুলে নিতে কর্মীদের চাপ!

বিবিধ, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:08:25

কর্মীদের লভ্যাংশের অর্থ লোপাটের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯০টি মামলা করেছে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা। আর সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ধরণের মানসিক ও পেশাগত চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের ওপর।

মামলা দায়ের করা কর্মীদের মধ্যে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন এমন কর্মীর সংখ্যা ৭৬ ও পুরাতন কর্মীর সংখ্যা ১৪।

গ্রামীণ টেলিকম থেকে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল ১০ বছরে গ্রামীণ টেলিকমের নীট মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৪১৭ টাকা। শ্রম আইন অনুযায়ী এই মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা পাওয়ার কথা প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন কর্মীর। কিন্তু এই টাকা মালিকপক্ষ নিজেদের পকেটে পুরেছে। আর গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান যেহেতু ড. মহাম্মদ ইউনূস তাই মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আইন অনুযায়ী নিজেদের পাওনার জন্য আইনের দারস্থ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন মালিকপক্ষ। অথচ আইন অনুযায়ী যেসব সুযোগ-সুবিধা কোম্পানীর পক্ষ থেকে কর্মীদের দেওয়ার কথা সবই স্থগিত করেছে গ্রামীণ টেলিকম। গত সাড়ে তিন বছরে এক টাকাও ইনক্রিমেন্ট হয়নি শ্রমিকদের। যেসব কর্মীরা মামলা করেছেন তাদের পদোন্নতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ থেকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা হচ্ছে যে, মামলা তুলে নিলেই দেওয়া হবে পদোন্নতি, বাড়ানো হবে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা।

শুধু তাই নয়, যেহেতু স্থায়ী পদের শ্রমিকদেরই মামলা করার অধিকার আছে লভ্যাংশের দাবিতে; তাই গ্রামীণ টেলিকমে গত এক বছরে স্থায়ী পদে কোনো লোক নিয়োগ দেয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই কর্মী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইন অনুযায়ী স্থায়ী পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের যেহেতু ৯০টি মামলা চলমান আছে। তাই স্থায়ী পদের জন্য তারা টেলেন্ট সেন্ট্রিক নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। আর পুরো কাজের চাপ আমাদের দিচ্ছে। আমাদের সব সময় মানসিক চাপের ওপর রাখা হয় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরাইবা কেনো আমাদের প্রাপ্য অংশ ছেড়ে দেবো? ড. মহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তিনি কি করে আমাদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করছেন তাতে আমরা অবাক হচ্ছি।

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার গ্রামীণ টেলিকমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

তবে গ্রামীণ টেলিকম কর্মীদের সঙ্গে বেআইনি আচরণ করছেন বলে জানান শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ জাফরুল হাসান শরীফ। তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি ১ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে নীট মুনাফার ৫ শতাংশ পাবেন কর্মীরা। কিন্তু তারা তা দেয়নি, এটি আইনি লঙ্ঘন করা। অন্যদিকে শ্রম আইন অনুযায়ী কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্থায়ী পদের জন্য থার্ড পার্টি থেকে কর্মী নিয়োগ দিতে পারে না। গ্রামীণ টেলিকম টেলেন্ট সেন্ট্রিক নামক থার্ড পার্টির কাছ থেকে স্থায়ী পদে যে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে এতে যে কেউ চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর