অবৈধভাবে শিশু খাদ্য আমদানি বন্ধের অনুরোধ নেসলের

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 13:47:57

দেশে অনিরাপদ শিশু খাদ্য আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে নেসলে, বাংলাদেশ লিমিটেড। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি, চোরাই পথে শিশু খাদ্য ও ফার্স্টফুড আমদানি হওয়ায় সরকার ও কোম্পানি উভয়ই বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বরাবর এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন নেসলে, ঢাকা অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দীপাল আবেউইক্রেমা। ওই চিঠিতে অনিরাপদ শিশু খাদ্য আমদানি বন্ধেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নেসলের এক গবেষণায় দেখা গেছে- অবৈধ পথে আমদানি করা শিশু খাদ্য ও ফার্স্টফুডের জন্য বাংলাদেশের বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ মোট ১৪টি দেশ থেকে বাংলাদেশের বাজারে অবৈধভাবে শিশু খাদ্য আসছে। দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, ফিলিপাইন, দুবাই, সিরিয়া, নেদারল্যান্ড, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ড।

নেসলে-বাংলাদেশের এমডির  অভিযোগ, বিভিন্ন দেশের জন্য তৈরি নেসলেরই পণ্য চোরাইপথে বাংলাদেশ আসছে। যেমন: দুবাই, নেদারল্যান্ডস, সিরিয়ার জন্য তৈরি শিশুখাদ্য নিড; ফিলিপাইন, দুবাই, সিঙ্গাপুরের জন্য তৈরি ল্যাকটোজেন; ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, থাইল্যান্ড, হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার, সুইজারল্যান্ড  এবং পাকিস্তানের জন্য তৈরি নেসক্যাফে, কফিমেট, কনফিক ও কোকো ক্রানচি অবৈধভাবে বাংলাদেশের বাজারে আনা হচ্ছে। প্রতিবছর এসব দেশ থেকে বাংলাদেশের বাজারে এক হাজার ৫৪১ টন শিশু খাদ্য ও অন্যান্য ফার্স্টফুড অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। যার বার্ষিক বাজার মূল্য ১৫৫ কোটি টাকা।

নেসলের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওইসব দেশ থেকে তারিখ বিহীন বিষাক্ত পণ্যগুলোই মূলত অবৈধপথে বাংলাদেশে আনা হয়। ফলে এসব পণ্য একদিকে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সরকারও বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। আর যেসব বিদেশী কোম্পানি সরাসরি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে বৈধভাবে ব্যবসা করছে সেগুলোও এক ধরনের অসাম্য প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হচ্ছে।

চিঠিতে এসব খাদ্য পণ্য আমদানি বন্ধে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে নেসলে, বাংলাদেশ। কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে বিষাক্ত শিশু খাদ্য আমদানি রোধ করতে সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে পারে। যে কমিটি দেশে বিএসটিআই, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, নিরাপদ খাদ্য, মানি লন্ডারিং আইন এবং আমদানি নীতি আদেশের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করবে। দেশের কোনো বন্দর দিয়ে যাতে অবৈধভাবে এসব শিশু পণ্য আমদানি না হয় সে ব্যবস্থাও করবে ওই কমিটি। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী চালালে এসব পণ্য আনা বন্ধ হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশে নেসলের নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। যেগুলোর মধ্যে- নিড, ম্যাগি, নেসক্যাফে, সিরিলাক, ল্যাক্টোজেন এবং এন্ডএএন্ড উল্লেখযোগ্য। কোম্পানিটি প্রতিবছর এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ছয়টি শিশু খাদ্যসহ অন্যান্য ফার্স্টফুড উৎপাদন করে। ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ৪৮০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর