মেগা প্রকল্পে নিজস্ব সম্পদ ও জনবলের ব্যবহার জরুরি

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 13:23:30

মেগা প্রকল্পে নিজস্ব সম্পদ ও জনবলের ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে অপরেশন ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ লোকের ঘাটতি থেকেই যাবে। লোকাল এজেন্ট না হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো স্থানীয় ঠিকাদারদের পার্টনার হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা জরুরি।

পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে বিদেশিদের ডিউটি ফ্রি দেওয়ার মতো দেশীয় ঠিকাদারদের সুরক্ষা দিতে হবে। না হলে তারা ৩৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে প্রতিযোগিতায় ঠিকতে পারবে না। প্রয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে তাদের ‍ডিউটি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

শনিবার ( ১৪ নভেম্বর) বিকেলে এনার্জি এন্ড পাওয়ার আযোজিত “অবকাঠামো উন্নয়নে নিজস্ব সম্পদের ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা এমন অভিমত দিয়েছেন।

সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিকাশে পলিসি একটি বড় বাঁধা হয়ে আছে। দেশীয় স্বার্থকে প্রটেক্ট করতে পারে এমন পলিসি করতে হবে। বিদেশি ঠিকাদারদের জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয় আর্টিমেটলি এগুলো কোনা কাজ হয় না, বাস্তবায়নকারি সংস্থাও খুব একটা গুরুত্ব দেন না। বিদেশি ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে জেভি করতে পারলে স্কিল ম্যানপাওয়ার বাড়বে।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফায়েজুল আমীন বলেন, রামপাল প্রকল্পে ভারতীয় একটি ব্যাংক ফাইন্যান্স করছে। তাদের অর্থায়নের শর্ত দিয়েছে পঁচাত্তর শতাংশ ভারত থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে ২৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি নিতে পারবে। এসব শর্ত যদি আমরা না মানি তাহলে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন জটিল হতো। ভবিষ্যতে নেগোসিয়েশন স্কিল বাড়িয়ে আমরা কিভাবে বেশি সুবিধা আদায় করতে পারি সেদিকে নজর দিতে হবে।

ম্যাক্স গ্রপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারে আমাদেক বলা হচ্ছে ১৫ শতাংশ বেনিফিট দিচ্ছে। ৬০ শতাংশ মালামাল আমদানিতে ৩৫ শতাংশ ডিউটি দিচ্ছি সেটি বিবেচনায় আনা হয় না। আর বিদেশি ঠিকাদার হলে তারা ডিউটি ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে। সরকার এখানে বঞ্চিত হলো, এখানেইতো আমরা পিছিয়ে গেলাম। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য ডিউটি নিলেও ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জিওবি ফান্ডের প্রকল্প পুরোপুরি দেশীয় কোম্পানির জন্য নিশ্চিত করা জরুরি। অবশ্যই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে হবে। সরকার গ্রিন এনার্জির মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন করতে পারে। যেখান থেকে বেসরকারি কোম্পানিরা সহজে ঋণ নিতে পারেন।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রবিউল আলম, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের পলিসির সঙ্গে আমাদের কোনো সামঞ্জস্য নেই। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ফরমুলা ফলো করে। পিডিবির টেন্ডারিং সিস্টেম রয়েছে আন্তর্জাতিক সিঙ্গেল খাম হলে প্রাইস কোর্ড করবেন। ডিউটি পেইড কোর্ড করি। আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে আসতে হবে। ডাবল খামে আরেক নিয়ম। বাংলাদেশ আমাদের পরবাসী করে রেখেছে। ইউনিফর্ম নীতিমালা জরুরি। আবার দেশীয় ঠিকাদার কাজ নিয়ে মালামাল আমদানি করলে জিরো ডিউটি। আর দেশিয় পণ্য নিলে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। কিভাবে দেশীয় উদ্যোক্তা উঠে আসবে। লোকাল ফান্ডে ছোটো টেন্ডারও ইন্টারন্যাশনাল করে পিডিবি। বিশ্বের কোথাও নেই। পদ্মা সেতুসহ বিদেশি ঠিকাদারদের কাজ বিলম্ব হলে ব্যয় বাড়ে। আমাদের শাস্তি হয়।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দীপন গ্রুপের পরিচালক (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) জিএসএম শামসুজ্জোহা নাসিম বলেন, স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার যতো বাড়াতে পারি উন্নয়ন ততটা স্থায়ী হয়। আমদানিতব্য সম্পদের প্রতিস্থাপন করে, ফরেন কারেন্সি সাশ্রয় হয় এতে ভবিষ্যতে আরও নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, দেশজ জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

আমাদের সিমেন্ট আছে, অদক্ষ এবং আধাদক্ষ লেবার আছে। ৪ হাজারের মতো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ১০০টি বিদেশে কাজ করতেও সক্ষম। রামপাল এবং পায়রাতে দেখছি বিদেশি সাবঠিকাদার নেওয়া হচ্ছে। ইপিসি ঠিকাদার কেনো নেওয়া হচ্ছে। যে অংশগুলো না হলেই নয়, অথবা ব্যালান্স করার জন্য উপ-ঠিকাদার গ্রহণ করেছে। স্বচ্ছ বিডিং হয় নি।

রামপালে ইপিসি ঠিকাদার ভারত হেভি ইলেট্রি্ক্যাল কলকাতায় টেন্ডার করে। সেখানে বাংলাদেশিদের জন্য হাস্যকর শর্ত দেওয়া হয়। ই টেন্ডার অংশ নিতে হলে স্বাক্ষর কিনতে হয, এর জন্য ৩ মাস প্রয়োজন, বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঠিকাদারকে কলকাতায় জমা দিতে হচ্ছে। জমা দিতে গেলে দেখা গেছে পিছিয়ে গেছে। ওদের দরপত্রে অদ্ভুত সব শর্তযুক্ত থাকে যাতে বাংলাদেশিরা অংশ নিতে না পারে। টেন্ডার সিকিউরিটি ২০ লাখ টাকা পে-অর্ডার করতে হবে। এই টাকা কিভাবে নেবেন আপনি। এ-৩ ভিসায় অদক্ষ লোক আনা হয়।

এনার্জি এন্ড পাওয়ারের কনসালটেন্ট এডিটর প্রকৌশলী খন্দকার সালেক সূফী বলেন, সমঝোতা স্টেজে দেশের উদ্যোক্তাদের স্বার্থ চুড়ান্ত করা যেতো। বিশেষ করে অদক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিতে হলে। পলিসি অমান্য করা প্রবনতা রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে যেসব প্রকল্প হয়, এগুলো শতভাগ দেশীয় কোম্পানির জন্য নিশ্চিত করা উচিত। দেশীয় কোম্পানিকে সুযোগ দেওয়া না হলে অপরেশন সঠিকভাবে সম্ভব না।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, সন্দেহ নেই সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনেক সক্ষমতা অর্জণ করেছে। লোকাল এজেন্টের কারণে লোকাল পার্টনার বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পার্টনারশীপ আইন প্রয়োজন, এটি করতেই হবে। এ-৩ ভিসায় অদক্ষ শ্রমিক আসে, আগামী দিনে নিজস্ব পণ্য ও শ্রমের বিষয়ে বেঁধে দেওয়া জরুরি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর