তিন স্থল বন্দর উন্নয়নে ৫৯৩ কোটি টাকার অনুদান

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 08:39:13

দেশের তিনটি স্থল বন্দরের উন্নয়নে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৫৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে সরকার। বন্দরগুলো হলো- শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থল বন্দর। মূলত বন্দরের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। যদিও সংস্থাটি প্রথমে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় সরকার এ ঋণ নিয়ে সংস্থাটিকে অনুদান হিসেবে এ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সচিব আব্দুল রউফ তালুকদার এ বিষয়ে একটি সারমর্ম সই করেন। আর অনুদানের বিষয়ে মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি চুক্তি (সাবসিডিয়ারি গ্রান্ড এগ্রিমেন্ট) সই করেছে।

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১’ র্শীষক এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকার অনুদান দিচ্ছে ৫৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাকি ১০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য প্রতিবেশী দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং  ভারত ও  বাংলাদেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণ।

এরই মধ্যে সরকার বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (আইডা) সাথে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করেছে। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’ শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনা অনুযায়ী,  গত ৫ বছরে সংস্থাটির আয়-ব্যয়ের হিসাবে যথাক্রমে ১১ কোটি ৯৬ লাখ, ১০ কোটি ২৪ লাখ, ২৩ কোটি ১৪ লাখ, ২৭ কোটি ৮৪ লাখ, ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উদ্বৃত্ত দিয়েই কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানো হয়। এর বাইরেও সংস্থাটি অন্য একটি প্রকল্পের জন্য এডিবির কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে, যা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে নতুন করে ঋণ নিলে উদ্বৃত্ত দিয়ে তা পরিশোধ করা সম্ভব না। তাই স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রস্তাবিত ঋণকে অনুদান হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার, মিয়ানমারের ২৫৬ কিলোমিটার এবং উপকূলীয় এলাকায় ৫৮০ কিলোমিটার আন্তজার্তিক সীমারেখা রয়েছে। এসব সীমারেখার মধ্যে অনেকগুলো স্থল বন্দর রয়েছে। যেসব বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। তাই বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি একনেকে অনুমোদন পাওয়ায় গত বছর থেকে কাজ শুরু হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবস্থিত শেওলা কাস্টমস স্টেশনকে স্থল বন্দর করা হয়। বর্তমানে এখানে কোনো স্থায়ী স্থাপনা নেই। একটি সেমিপাকা ভবন রয়েছে, যা ইমিগ্রেশন অফিস হিসাবে ব্যবহার হয়। তাই এই স্থল বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। ভারত অংশে এ বন্ধরের নাম সুতারকান্দি স্থল বন্দর, যা আসামের করিমগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালে। এখানে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ওপেন ইয়ার্ড, ওয়ার হাউজ এবং অন্যান্য ভৌত কাঠামো স্থাপন করা হয়। কিছু অংশ বর্তমানে আমদানিকরা কার্গোর ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি অংশ পচনশীল দ্রব্যের কার্গোর ইয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু কার্গো ইয়ার্ডে অত্যাধিক চাপ থাকায় এটি  সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হলে এই স্থল বন্দর দিয়ে কলকাতার সাথে যোগাযোগ বাড়বে। সে কারণে এই স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।

এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের ৪০০ কিলোমিটার সীমারেখা রযেছে। ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সহজে বাণিজ্য প্রসার করতে রামগড় স্থল বন্দরটির অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। যা খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় অবস্থিত। ফলে চট্রগ্রাম বা সমগ্র দেশের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের আমদানি রপ্তানি বাড়বে। এতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে। তাছাড়া ত্রিপুরা থেকে বর্তমানে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে আরও ১০০ মেগাওয়াট আমদানি করা হবে। ফলে এ বন্দরের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। কারণ ভারত ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে এ বন্দর দিয়ে সেখানে যন্ত্রাংশ নিয়ে যেতে পারবে। এতে উভয় দেশই উপকৃত হবে।

এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম স্থল বন্দর বেনাপোল, যা যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় অবস্থিত। এডিবি’র অর্থায়নে রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় বেনাপোল ও বুড়িমারী স্থল বন্দর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন আছে। এই প্রকল্পের সীমানা দেয়ালসহ আধুনিক সিকিউরিটি এবং গেট নির্মাণ না থাকায় নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হচ্ছে। তাই এ প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সিসিটিভি ও গেইট পাস সিস্টেম স্থাপনাসহ নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণে সহায়তা দিতে বিশ্ব ব্যাংক এগিয়ে এসেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর