ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার!

, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 15:47:54

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর-২০২০) ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের এই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮২২ কোটি ডলার। তবে বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়লেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আগের অর্থবছরের তুলনায় চাপ অনেকটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমদানি-রফতানির ভারসাম্যের ওপর বাণিজ্য ঘাটতি নির্ভর করে। মহামারির কারণে গত ছয় মাসে আমদানি-রফতানি তেমন গতি ছিল না। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও নিম্নমুখী থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কম হয়েছে। এটা বর্তমান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক। তবে বিশ্ববাজার এখনও স্বাভাভিক হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে রফতানি বাড়ানো চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ, নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। অনেক শিল্প কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। কিছু বন্ধও হয়ে গেছে। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি অনেক কমে গেছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে দুই হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ ৫৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

উল্লেখিত সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তার আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৪৪ শতাংশ কম আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কম থাকায় আমদানিজনিত চাহিদাও কম ছিল। তাই আমদানি ব্যয় তেমন বাড়েনি। তবে দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে। প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। করোনাকালীন সময়ে মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। অন্যদিকে আমদানি-রফতানি কম হওয়ায় বিমার খরচও কমে গেছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে তা ছিল ১৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপর। গত অর্থছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৫৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

দেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশকেই নিট এফডিআই বলা হয়। এই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ কমে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

মহামারির মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা যখন নাজুক তখনও দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বাড়ছে।

চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চলতি হিসাবে ৪৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১৬৭ কোটি ডলার। এদিকে সা‌র্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬১৫ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আলোচ্য সময়ে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৯৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।

শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) প্রবাহের গতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিনেয়োগ ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ বছর একই সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি চলে গেছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর