চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আয় বেড়েছে আড়াই গুণ

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 22:34:06


আওয়ামী লীগের দশ বছর: ১৭ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা


দেশের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এককভাবে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। জাতীয় বাজেট প্রনয়ণের সময় এবং মোট রাজস্ব লক্ষ পুরণেও চট্টগ্রাম কাস্টমসের দিকে বিশেষ নজর থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। বিগত ১০ বছরে সেই কাস্টম হাউসে রাজস্ব আয় বেড়েছে আড়াই গুণ; যা নজিরবিহীন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেয়ার সময় ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেই রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। শতাংশ হিসেবে এটি দাঁড়ায় প্রায় আড়াইগুণ। প্রতি বছর বাজেটে পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের শুল্কহার ব্যাপকভাবে কমানোর পরও অর্জন হলো।

মুলত দেশের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় দেশে পণ্য আমদানি বেড়েছে অনেকগুণ। এই কারণে শুল্কহার কমানোর পরও রাজস্ব আয় না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে।

চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু মনে করেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে রাজস্ব আয় যে কি পরিমান বাড়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তার বড় প্রমাণ। মাত্র ১০ বছরে আড়াইগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও রেকর্ড পরিমাণ পণ্য উঠানামা হয়েছে।

তিনি মনে করছেন, সরকারের ধারাবাহিকতায় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখছে, দৃশ্যমান হচ্ছে। এরফলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে, অর্থনীতির গতি বাড়ছে। শিল্পায়নে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট এখন নেই এতে বিনিয়োগ বাড়ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আয় আরও বেশিহারে বাড়বে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ড সারাদেশ থেকে মোট ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এককভাবে দিয়েছে ৪২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব; যা মোট রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশের বেশি। ২০০৯ সাল থেকে প্রতি অর্থবছর ২০ থেকে ২২ শতাংশ হারে রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা দিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ফলে জাতীয় বাজেট প্রনয়ণের সময় চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের ওপর বিশেষ নজর দেয়া হয়। কারণ এই কাস্টমসের ওপর রাজস্ব বোর্ডের নির্ভরশীলতা বেশি। নির্ভরশীলতা বেশি থাকায় প্রতিবছর প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি রাজস্ব লক্ষমাত্রা চাপানো হয়। এই কারণে কখনো কখনো আগের বছর থেকে রাজস্ব আয় বেশি হলেও লক্ষমাত্রা পুরণ করতে পারে না।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান বলছেন, ‘সার্কভূক্ত দেশ সাফটার আওতায় পণ্য আমদানিতে শুল্ককর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশে নির্ধারন করা হয়েছে, এরফলে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আর চাল আমদানিতে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে গতবছর, এতে অন্তত আটশত কোটি টাকার শুল্ক আয় থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। এরকম আরো অনেকগুলো শুল্কহার কমানোর ফলে রাজস্ব লক্ষমাত্রা পুরণ সম্ভব হয় না। এসব রাজস্ব যোগ হলে প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ হতো।’

তিনি বলছেন, শুল্ক লক্ষমাত্রা পুরণ আমাদের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়, সেবার মাধ্যমে দ্র–ত পণ্য ছাড় করাই মুল লক্ষ। সেটা আমরা যথেস্ট ভালোভাবেই করতে পেরেছি। এরপরও বিগত বছরের চেয়ে এবার প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে ১৬ শতাংশ। বন্দরের প্রবৃদ্ধিও ১২ শতাংশ। সুতরাং আমরাও আদর্শ প্রবৃদ্ধিতে অবস্থান করছি।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদে প্রতিবছর রাজস্ব আয় বেড়েছিল দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ সাল থেকে সেই রাজস্ব আয় প্রতিবছর বাড়ছে চার থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। আয় বেড়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা; যা রেকর্ড।  

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির ওপর। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি অতীতের রেকর্ডকে ছাড়িয়েছে। বিদ্যমান জেটি এবং সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামায় বিশাল অগ্রগতি হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কন্টেইনার উঠানামায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোয়া ১২ শতাংশ আর সাধারণ পণ্য উঠানামায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোয়া ১৬ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে এই প্রবৃদ্ধি। জার্মানীর হামবুর্গ পোর্ট কনসালটেন্সি (এইচপিসি) প্রণীত মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১৮ সালে কন্টেইনার উঠানামা হবে প্রায় ২৪ লাখ একক; ২০১৯ সালে হবে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার একক এবং ২০২০ সালে হবে ২৯ লাখ একক কন্টেইনার। আড়াই বছর পরের সেই পূর্বাভাস বা লক্ষমাত্রা এখনই পুরণ করলো চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য উঠানামা এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের চিত্র দেখে যেকেউ দেশের এই অগ্রগতির চিত্র সম্পর্কে ধারনা করতে পারবেন। শিল্প-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ায় ধারাবাহিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য খুবই দরকার এই স্থিতিশীলতা। এটি নিশ্চিত হলে বাংলাদেশ দ্রুত অন্য উচ্চতায় পৌঁছবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। রাজস্ব আয় এখনকার চেয়ে অনেকগুণ বেশি বাড়বে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর