‘চীনারা টোপ দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে’

, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 16:13:11

চীনারা প্রথমে কম দর দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে, এক বছর পর দর দ্বিগুণ, তিনগুণ করে নিচ্ছে। এভাবে স্মল টোপ দিয়ে খেলতে দেওয়া যাবে না, মেজর রিভিশনের সুযোগ কমাতে হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে তেমন দেখা যাচ্ছে না বেশি হচ্ছে চীনা প্রজেক্টে। এখানে সরকারকে সাবধান হতে হবে।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত “সরকারের ভ্রান্ত পলিসির কারণে পিছিয়ে দেশীয় নির্মাণ শিল্প” শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে। সেমিনার সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা চাই না, পলিসির কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা সাফার করুক। শেষ পর‌্যন্ত টাকাটা জনগণের, আমরা ইমোশনের বশবর্তী হয়ে কিছু করতে চাই না। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে উচ্চমূলে কিছু খাতির পেতাম। সেগুলো থেকে এখন বঞ্চিত হবো। সোকল দাতা সংস্থার কিছু বিধি নিষেধ থাকে, অন্যদের থেকে কম সুদে দেওয়া হচ্ছে বলে। শর্ত থাকে কনসালটেন্ট নিয়োগ করতে হয়, পাঠিয়ে দিয়ে বসে থাকতে হয়। অনেক সময় ডিলে হয় তাদের অভ্যন্তরীণ কারণে। আমরা যদি অর্থনৈতিক, টেকনিক্যাল ও মানসিকভাবে শক্তি অর্জন করতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সব সময় উদার। নিয়ম নীতি ধারাবাহিক রিভিউ করা হচ্ছে, আপনাদের কাছ থেকে প্রস্তাবতা পেলে অবশ্যই দেখা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ের সাবেক মূখ্য সচিব, জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরামে বাংলাদেশের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, রুলস রেগুলেশনগুলোকে হালনাগাদ করা হয় নি সব সময়। স্থানীয়রা যেনো যথার্থ সুযোগ পায়। তাহলে তারা অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো করতে পারবে। একটি টাস্কফোর্স গঠন করে ট্যাক্সের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে পারলে ভালো হবে। কোথায় কোথায় পরিবর্তন দরকার।

তিনি বলেন, ধরে নিলাম বিদেশি কনসালটেন্টের বদ মতলব নেই। তবে তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে এমন কাজ করে। তাতে আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যারা গাইড করেন তাদের সচেতন থাকতে হবে। মেজর রিভিশন অনেকে চায়। প্রকল্পের কাজ শুরু করতে করতে দুই-তিন বছর পার হয়ে যায়। রেট সিডিউল অটোমেটেড সিস্টেম করা যায় কি না। তাহলে বখরা খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। মেজর রিভিউ করার প্রয়োজন পড়বে না।

এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এমএম মজিদ বলেন, দেশীয় ঠিকাদার কাজ করতে হলে, ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিদেশি ঠিকাদার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না, সেভাবে হিসেব করছে। সরকার নিজের পকেটের টাকা নিজেই দেবে, তবুও স্বচ্ছতার জন্য এটি করা প্রয়োজন। মূললক্ষ্য স্বনির্ভর হওয়া। আমি আমার স্বার্থ দেখবো কিনা সেটি ভাবার বিষয়। সময়টা উপযুক্ত হয়েছে, মে মাসে কেমন বাজেট চাই বলতে কোনো কাজে আসে না।

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, প্রত্যেকটি কাজেই অভ্যন্তরীণ পাটনার থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বড় আকারে করা না গেলেও যতটুকু পারা যায় নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে, অনুন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারবে সেই আশা এখন ক্ষীণ। নিজস্ব অর্থায়ন করতে না পারলে শৃঙ্খল মুক্ত হতে পারবো না। চীনারা প্রথমে কম দর দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে, এক বছর পরে দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ করে নিচ্ছে। এই স্মল টোপ দিয়ে খেলতে দেওয়া যাবে না। মেজর রিভিশনের সুযোগ কমাতে হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না বেশি হচ্ছে চীনা প্রজেক্টে। এখানে সাবধান হতে হবে।

এফবিসিআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর আখতার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন বলেন, লোকাল প্রিফারেন্স উঠিয়ে দেওয়ায় আমরা একটি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছি। প্যাকেজ সাইজ এতো বড় করা হচ্ছে। অনেকে অংশ নিতে পারছি না। আমরা ক্রমান্বরে মেইন ঠিকাদার থেকে সাব ঠিকাদার হচ্ছি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউথ বলেন. ট্যানেল করার মতো আমাদের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি নেই। রাষ্ট্রের নিজস্ব কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত।

বিএএসআই’র প্রেসিডেন্ট ও ডিকন লিমিটেডের এমডি এসএম খুরশীদুল আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে (তিস্তা ব্যারেজ) খুবই ক্রিটিক্যাল একটি কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পুরোপুরি নিজেদের যোগ্যতায়। কিন্তু আমরা এখন নিচের দিকে যাচ্ছি। যে কারণে এতোদিন পরে এসেও পদ্মা ব্রীজের কাজ করার মতো সক্ষমতা অর্জণ করতে পারিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর