ইউরিয়া সার প্রকল্প বাস্তবায়নে সভরেন গ্যারান্টি চায় বিসিআইসি

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 23:01:03

দেশে উৎপাদন বাড়াতে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি ঋণের বিপরীতে সরকারের কাছে সভরেন গ্যারান্টি চেয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)।

সম্প্রতি বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান শাহ মো. আমিনুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর এই গ্যারান্টি চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ১০২৫ দশমিক ৮০ মিলিয়ান ডলারের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ক্রয় প্রস্তাব করেছে মেসার্স এমএইচআই জাপান, সিসি সেভেন এবং চায়না কনসোর্টিয়াম। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬৯৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ নেওয়া হবে। বাইয়ার ক্রেডিটের মাধ্যমে সাড়ে ৪ শতাংশ হার সুদে এ ঋণ নেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ফাইন্যান্সিং পদ্বতিতে ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার সভরেন গ্যারান্টি চেয়েছে বিসিআইসি। কিন্তু ২০১৭ সালের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এদিকে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রতি টন ইউরিয়া বিক্রি করতে হয় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু উৎপাদন খরচ পড়ে ২২ হাজার টাকা। আর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ইউরিয়া বিক্রি হয় ২৯ হাজার ৫০০ টাকায়। ফলে লোকসানে পণ্য বিক্রি করে বিসিআইসি ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সরকারি সংস্থা/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মোট ২২টি প্রকল্পের ঋণের বিপরীতে সরকার সভরেন গ্যারান্টি দিয়েছে। বর্তমানে এর আওতায় ঋণের পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার। সরকারের সভরেন গ্যারান্টির আওতায় ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ বিমান, বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প ইত্যাদি।

আরো জানা গেছে, প্রত্যেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণের ধরণ ভিন্ন। বিসিআইসি’র ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা আছে কিনা এবং এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো কেমন সেটা আগে দেখতে হবে। কারণ সরকারের কোনো সিঙ্গেল প্রজেক্টে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নেই। বিসিআইসি যদি ঋণ পরিশোধ না করতে পারে তবে সরকারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ভবিষ্যতে ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান রিস্ক প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং বিসিআইসি’র সার কারখানাগুলো ভর্তুকি দিয়ে ইউরিয়া সার উৎপাদন করলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠান কিভাবে ঋণ শোধ করবে সেটা দেখা প্রয়োজন। তা না হলে সরকারকেই এই ঋণ শোধ করতে হবে।

বিসিআইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (জেবিআইসি), এইচএসবিসি এবং ব্যাংক অফ টোকিও-মিৎসুবিসি ইউএফজে এই প্রকল্পে ৮৮৯.৭০ মিলিয়ান মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। এর মধ্যে জেবিআইসি ৫৩৩.৪২ মিলিয়ান, নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্স্যুরেন্স কভারেজে এইচএসবিসি ও বিটিএমইউ ৩৫৬.২৮ মিলিয়ান এবং বিশ্বব্যাংকের মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (মেগা) কাভারেজে এইচবিসি ও বিটিএমইউ ১৩৬.১০ মিলিয়ান মার্কিন ডলার ঋণ দেবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে ঋণ ইক্যুইটি রেশিও হবে ৬০:৪০। ঋণের সুদের হার সাড়ে ৪ শতাংশ এবং গ্রেস প্রিয়ড হবে ৪ বছর। অর্থাৎ সরকারকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর