এসএলআর সংরক্ষণ থেকে অব্যাহতি চায় প্রবাসী ব্যাংক

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 12:15:23

সহজে বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণের বিধান পরিপালন থেকে অব্যাহতি চায় তফসিলিভুক্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংক-কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৩৩ ধারা অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসএলআর সংরক্ষণের বিধান পরিপালন থেকে অব্যাহতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায়। এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত চেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

প্রসঙ্গত, আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা আমানতের ২০ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখার বিধান আছে। আর এই সম্পদকেই ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও এসএলআর সম্পদ বলা হয়। গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলিভুক্ত হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের মালিকানায় বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা ৫৮টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলদেশ ব্যাংকের ২০১৩ সালের এমপিডি সার্কুলার অনুযায়ী দেশের প্রচলিত তফসিলি ব্যাংককের জন্য সিআরআর’র অতিরিক্ত নগদ জমাসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সহজে বিনিয়োগ্য সম্পদের রক্ষণীয় মাত্রা দৈনিক ভিত্তিতে তাদের মোট তলবী ও মেয়াদী দায়ের ১৩ শতাংশের কম হবে না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্তি এবং ব্যাংকটির ওপর ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ প্রযোজ্য হওয়ায় প্রবাসী  ব্যাংক নির্ধারিত উল্লিখিত হারে এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটি ওই সম্পদ সংরক্ষণের বিধান থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হচ্ছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এসএলআর মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের একটি হাতিয়ার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএলআর হার হ্রাস/বৃদ্বির মাধ্যমে বাজারে মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়া এসএলআর সরকারি সিকিউরিটিজে সংরক্ষণ করা যায়। উক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এসএলআর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ইতোমধ্যে ১৯৮৭ সালে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে এসএলআর সংরক্ষণের বিধান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসীদের মধ্যে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে কাজ করে আসছে। বর্তমানে শুধু সরকারের সরবরাহ করা তহবিল থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যারা যান, তাদের ৯ শতাংশ হার সুদে ঋণ দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ৪০০ কোটি টাকার মূলধন রয়েছে। শাখা রয়েছে ৬৩টি। মোট ঋণ রয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি রয়েছে ৬ শতাংশের কম।

বাংলাদেশে ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থানের উদেশ্যে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি বেকার-যুবকদের সহায়তা, প্রবাসীরা দেশে আসার পর কর্মসংস্থানে সহায়তা এবং প্রবাসীদের সহায়তা কারতেই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে সহজে বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ সংরক্ষণের (এসএলআর) বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতির জন্য ব্যাংকটির আবেদন ইতিবাচক।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬৫টি দেশে এক কোটি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। তাদের সেবায় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে ৩০টি শ্রম উইং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ওই ব্যাংকের সহায়তায় সরকারিভাবে সৌদি আরবে প্রায় ৮ লাখ, মালয়েশিয়া ২ লাখ ৬৭ হাজার, ইরাকে ১০ হাজারসহ অনেক দেশে স্বল্প ব্যয়ে কর্মী পাঠানা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর