মহামারী থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যবসা বান্ধব বাজেট দিচ্ছে সরকার

বাজেট, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 19:38:03

করোনা মহামারীতে সারাবিশ্বের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। আগামী সংকট মোকাবিলায় তাই এবার ব্যবসাবান্ধব একটি জনমুখী বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩ টায় জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এবার বাজেটের রাজস্ব আহরণের বড় অংশ বৈদেশিক অনুদান নির্ভর। এবার সর্বোচ্চ ৯০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান থেকে সংস্থান করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

নতুন (২০২১-২০২২) অর্থবছরের বাজেট কেমন হবে কোন খাত থেকে রাজস্ব আসবে এসব পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) এবং ডেপুটি সার্জেন্ট-এট আর্মস (সাবেক) বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এম সাদরুল আহমেদ খান বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

কেমন হবে ২০২১-২০২১ অর্থবছরের বাজেট:

করোনাকালে ব্যবসা-বান্ধব বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। মহামারী করোনা যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে কর এবং ভ্যাট ছাড়ের বিশাল বাজেট আসছে। বাজেটে কর এর বোঝা না বাড়ায় স্বস্তি পাবেন ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ। তাছাড়া কর দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা যে সমস্যায় পড়েন সেগুলো সমাধানে আসছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি হয়রানিমুক্তভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে যে ব্যক্তির যত বেশি সম্পদ তাকে তত বেশি কর দিতে হবে। তাই আসন্ন বাজেটে সম্পদশালীদের সার্চ চার্জ অর্থাৎ সম্পদের কর পুনঃনির্ধারণ করা হবে। দাম বাড়বে বিলাসী পণ্যের দাম কমবে ভোগ্যপণ্য পণ্যের।

বাজেটের অর্থসংস্থান:

বাজেটে অর্থসংস্থানের জোর দেয়া হচ্ছে রাজস্ব আহরণ, বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদান। এবারের সর্বোচ্চ ৯০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান থেকে বাজেটে অর্থসংস্থানের করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া কর আদায়ে সক্ষম ব্যক্তিদের কর নেট এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। অর্থনীতি সচল রাখতে এবারও ‘কর’ ছাড় দিয়ে ব্যবসা বান্ধব বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার।

শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল রেখে উৎপাদন এবং রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগ কারীদের নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে। নতুন করে কোন খাতে ভ্যাট বা করারোপ করা হচ্ছে না। করোনার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে চাপের মুখে রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় চাপ যাই আসুক না কেন সেটি মোকাবিলা করার জন্যই এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। মহামারী করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে এটাই আমাদের বিশ্বাস বলেন এম সাদরুল আহমেদ খান।

দাম বাড়বে কমবে যেসব পণ্যের:

ব্যবসা-বাণিজ্যকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে নতুন বাজেট। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক কমবে। বাড়বে গাড়ির মতো বিলাসী পণ্যের দাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল পণ্যের দাম কমবে, তবে বাড়বে সিগারেট, বিড়ি, জর্দাসহ সকল তামাকপণ্যের দাম। তাছাড়া দামি কসমেটিকস পণ্যের আমদানিতে শুল্ক বাড়লেও কমবে নিত্যপণ্যে আমাদানি শুল্ক যেমন চাল, ডাল, পিঁয়াজ ইত্যাদি আমদানিতে শুল্ক কমবে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ভূমিকা রাখতে পারলে তারাও কর এবং ভ্যাট মুক্তির সুবিধা পাবেন।

আমদানি পর্যায়ে অ্যাডভান্স ট্যাক্স অর্থাৎ এটি কমানোর চিন্তা করছে সরকার। বর্তমানে কাঁচামাল আমদানিতে ৪ শতাংশ এটি দিতে হয় অর্থাৎ অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিতে হয়। এটি ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার চিন্তা করা হচ্ছে, যার ফলে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ ও ক্যাশ ফ্লো দুটোই বাড়বে।

বাজেটে আরো যা থাকছে:

আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই বাড়াতে কর্পোরেট কর ২ দশমিক ৫  শতাংশ কমাতে চায় সরকার। এই সুবিধা পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্তবিহীন উভয় কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে ব্যাংক-বীমা নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, টেলিফোন কোম্পানি এবং তামাকজাত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর্পোরেট ট্যাক্সের হার অপরিবর্তিত থাকবে। ব্যক্তি ক্ষেত্রে করনেটের  আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে কর বিহীন আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। তবে আয়কর দাখিল রিটার্ন বাড়ানোর ক্ষেত্র অব্যাহত থাকবে। সকল টিআইএনধারীদের আয়কর রিটার্ন এর আওতায় আনতে চায় সরকার।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ:

এবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হতে পারে। শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার জন্য রয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। হয়তো কাল টাকা সাদা করার সুযোগ থাকতে পারে শেয়ার মার্কেটে। ব্যবসায়ীদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল অর্থাৎ চলতি পুঁজি বাড়ানোর জন্য উৎসে কর কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভ্যাটমুক্ত সীমা ৫০ লক্ষ টাকা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে কর সংগ্রহ ও বাড়ানোর জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ওপর জোর দেবে সরকার। আগামী অর্থবছর থেকে অনলাইনে ভ্যাট প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হবে। ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে। ভ্যাট এর আওতা বাড়াতে ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস এর আওতা আরো বাড়ানো হবে।

সার্চচার্জে নতুন পরিকল্পনা:

সম্পদশালীদের সারচার্জ অর্থাৎ সম্পদের ট্যাক্স ন্যূনতম সার্চচার্জ বাতিল করে নতুন স্লাব গঠন করা হবে। ক্ষুদ্র মাঝারি ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বার্ষিক লেনদেনে থাকছে বিশেষ ছাড়। ব্যক্তি পর্যায়ে কর সীমায় বর্তমানে নিজ সম্পদের পরিমান তিন কোটি টাকা হলে সার্চ চার্জ  দিতে হয় না। তবে ৩-৫  কোটি টাকা  পর্যন্ত হলে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ৩ হাজার ট্যাক্স দিতে হয়। এছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোরতা আসছে। বছরে ১০০ কোটি টাকা  লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠান জন্য ব্যাংকিং ডাটা এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট,ভ্যাট রিটার্ন ডাটা এনালাইসিস করার জন্য  করার জন্য বিজনেস  ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার প্রচলন করা হচ্ছে। যেটা পরবর্তীতে অডিটের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর