করোনাকালে কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তিত খামারিরা

, অর্থনীতি

শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2023-08-30 10:31:33

করোনা মহামারি আর চলমান লকডাউনের স্থবিরতায় আসন্ন কোরবানির পশুর বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে চিন্তিত খামারিরা। সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সম্পর্কে।

কৃষির পাশাপাশি পশু পালন বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতির একটি অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। কিশোরগঞ্জের শহরতলী ও আশেপাশের গ্রামগুলোতে বেশ কিছু পরিবার পশু পালনের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত, বিভিন্ন ডেয়ারি কোম্পানিকে গো দুগ্ধ সরবরাহ করা গ্রামীণ মানুষের নিয়মিত আয়-রোজগারের একটি প্রধান অবলম্বন। তদুপরি, ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে গরু, ছাগল সরবরাহের জন্যেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ছোট ছোট পশু খামার।

এমনই এক খামারি চান্দু মিয়া কথা প্রসঙ্গে জানান, 'নিয়মিত ব্যবসার বাইরে কোরবানিকে সামনে রেখে পশু লালন-পালন করেন অনেকেই। ঈদের আগেভাগে ঢাকা, চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যাপারীগণ এসে এসব খামার থেকে দেশীয় জাতের গরু, ছাগল কিনে নিয়ে যান। শহরের অনেকেও এসে আগাম টাকা দিয়ে পশু ক্রয় করেন। করোনার বৃদ্ধি আর লকডাউনের কারণে পশু বিপণন ও বিক্রয় নিয়ে চিন্তায় আছি।'

কোরবানির জন্য গ্রাম থেকে শহরে গরু সরবরাহের বিষয়টিও যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য ও অনুকুল নয়

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বড় খামারি ছাড়াও গ্রমের অধিকাংশ দিনমজুর ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ দু-একটি ছাগল বা গরু কিনে নিজে কম খেয়ে হলেও বাজার থেকে খইল, ভূষি এনে পশুদের খাইয়ে সারা বছর লালন পালন করেন কোরবানির হাটে আকর্ষণীয় দামে বিক্রি করে দু পয়সা মুনাফা লাভের আশায়। আর এ উপার্জন দিয়েই তারা সারা বছর সন্তানের পড়াশুনা ও পারিবারিক খরচ চালান। তারাও পড়েছেন বিপাকে।

কারণ, কোরবানির পশু কিনতে প্রতি বছর ঢাকা সহ অন্যান্য শহর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ঈদের ১৫/২০ দিন আগেই স্থানীয় পাইকারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং গরু কেনার বায়না প্রদান করেন। লকডাউন বর্ধিতকরণের কারণে এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া কোরবানির জন্য গ্রাম থেকে শহরে গরু সরবরাহের বিষয়টিও যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য ও অনুকুল নয়।

যদিও সরকার 'কেটল সার্ভিস' নামে ঢাকায় গরু সরবরাহের জন্য ৬ টি ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে প্রতি গরুর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এসব ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ঢাকা তেজগাঁও থামবে। তবে অনেক খামারি এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন না। দরিদ্র ও প্রান্তিক পশু মালিক এ সুবিধার সুফল কতটুকু পাবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে মানুষের মনে। তদুপরি, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের কোরবানি করার আর্থিক সক্ষমতা কতটু্কু রয়েছে, তাও বিবেচ্য বিষয়।

কিশোরগঞ্জ সদরের অষ্টবর্গ গ্রামের প্রান্তিক পশুমালিক মাফিজ উদ্দিনের খামারে এসে জানা যায়, তিনি তার পশুটি নিয়ে স্থানীয় সাদুল্লাচর বাজারে গিয়েছিলেন কিন্তু বাজার বসতে নিষেধাঞ্জা থাকায় তাকে গরুর দড়ি ধরে ফিরে আসতে হয়েছে।

অষ্টবর্গ গ্রামের আরেক ক্ষুদ্র খামারি মো. কাসেম তার চারটি গরু উপযুক্ত দামে বিক্রি হবে কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন একই গ্রামের বড় খামারি মো. আজিজুল মিয়া। তিনি প্রতিটি শশু লালন-পালন করতে যে খরচ হয়েছে, তার উপর সামান্য কিছু মুনাফা হলেই খুশি। তা না হলে পশুগুলোর খাতে লোকশান গুণতে হবে, নয়ত আরও এক বছর লালন-পালন করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

স্থানীয় নেতৃস্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ বার্তা২৪.কম'কে জানান, 'প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির বিশেষ হাট বসানোর আলোচনা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি উপযুক্ত দামে খামারিদের পশুর বিপণন ও বিক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর