চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর জন্য কাঁচা পাট কিনতে আবর্তক তহবিল হিসেবে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। সম্প্রতি সংস্থাটির পক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রদীপ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ অর্থ চাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, এক বছর আগে বিজেএমসিকে স্বাবলম্বী করতে, মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মজুরি ও বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং মিলগুলোতে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি বজায় রাখতে বিজেএমসিকে এক হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, কাঁচা পাটের অভাবে দেশের সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আংশকা করছেন বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান। তার মতে, মিল বন্ধ হওয়ার আশংকায় শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি তিনিও পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণায়ে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় এই অর্থ চেয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে পাটের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু অতীতে বড় বড় ঋণ নেওয়ায় চলতি মৌসুমে মিলগুলোর পক্ষে পাট কেনা সম্ভব হবে না। আর মৌসুমে পাট কিনতে না পারলে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বিজেএমসি’র কাছ পাটকলগুলোর মোট ৪৯৫ কোটি টাকা বকেয়া আছে। তাই এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে নতুন কাঁচা পাট কেনাও সম্ভব না।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মিলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাট মজুদ করা হয় না। ফলে অলস মজুরি পরিশোধ করতেই বরাদ্দ শেষ হয়ে যায়। তাই মৌসুমের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পাট কিনতে ও মিলের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে ১০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।
এদিকে, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিজেএমসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্ষন্ত রাষ্ট্রায়ত্ব মিলগুলোতে কাঁচা পাটের মজুদ আছে ৯৪ হাজার ৪৪১ কুইন্টাল। এই পরিমাণ কাঁচা পাট দিয়ে মিলগুলো সর্বোচ্চ ১৫ দিন চালু রাখা যাবে। মান ও গ্রেড ভেদে পাট মজুদ না থাকায় ইতোমধ্যেই কয়েকটি মিলের উৎপাদন কমে গেছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মিলগুলোর দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ৮৭১.২৪ মে.টন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে মিলগুলোর দৈনিক গড় উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৪৭.৭২ মে.টন।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া মজুরিসহ বিজেএমসি’র বর্তমান দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ব ২৬টি পাটকল বিজেএমসি’র অধীনে পরিচালিত হয়। যার মধ্যে ঢাকায় ৭টি, চট্টগ্রামে ১০টি এবং খুলনায় ৯টি। এগুলোর মধ্যে একটি নন জুট মিল ছাড়া বাকিগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এসব পাটকলে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৬৫ জন।