টিভি রিপোর্ট বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে প্রাণের এমডি’র আবদার

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-18 06:44:55

কোম্পানির বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের ধারাবাহিক রিপোর্ট বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ে আবদার জানিয়েছেন প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইলিয়াছ মৃধা। গত সপ্তাহে অর্থ ও বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ আবদার করেন। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে যমুনা টেলিভিশন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রাণ গ্রুপকে নিয়ে ধারাবাহিক মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করছে। এমনকি নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে টিভি চ্যানেলটি দিনের পর দিন একই সংবাদ বারবার প্রচার করছে। ফলে ভোক্তাদের মাঝে প্রাণের পণ্য সর্ম্পকে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাই দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প রক্ষার্থে অনতিবিলম্বে যমুনা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার বন্ধ করার  আহ্বান জানাচ্ছি।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রাণ গ্রুপ পণ্য উৎপাদনে গুণগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা ও কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত করতে প্রাণ গ্রুপ দেশের সকল সনদের পাশাপাশি বিআরসি এবং আইএসও’সহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সনদ অর্জন করেছে। কিন্তু এই রিপোর্টের ফলে বর্হিবিশ্বে প্রাণ গ্রুপের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা মনে করছি। প্রাণ গ্রুপ অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেশে মানসম্পন্ন খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। প্রাণ পণ্য এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের ১৪১টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি বাণিজ্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার প্রাণ গ্রুপকে টানা ১৪ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান করেছে।

সূত্রে জানা গেছে, যমুনা টিভির ওইসব রিপোর্টে প্রাণ গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়ম উঠে এসেছে। গত ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের রংপুর মেটাল ইউনিটির দু’টা ইউনিট থেকে ৪০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেয় প্রাণ গ্রুপ। পরে তারা এ বিষয়ে আপিল করে। এছাড়াও, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুসের মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি প্রাণ। যদিও ওই রিপোর্ট নিয়ে বিএসটিআই ও বুয়েট’র মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তারপরও প্রাণের খাদ্যপণ্যের মান খুব বেশি উন্নত হয়নি। বিভিন্ন সময় ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে প্রাণ পণ্যের  ভেজাল নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর যমুনা টিভিতে প্রাণের নিম্নমানের পণ্য নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ শুরু হয়। ওইসব রিপোর্টে জুস বা আচার তৈরির প্রকৃত চিত্র দেখা গেছে। মূলত বিজ্ঞাপনে তাজা আমের ভোল তুলে যে জুস বা আচার বিক্রি করা  হয়, তা আসলে সারি সারি ড্রামে, রাসায়নিক মিশিয়ে খোলা আকাশের নিচে তৈরি হয়। এসব আম দু’বছর পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে। এই আম দিয়ে বানানো হয় সুস্বাদু জুস।

ভিডিওতে দেখা গেছে, একই কারখানায় ড্রাম থেকে পাইপ দিয়ে জলপাইয়ের আচারে সরাসরি তেল মেশানো হয়। এছাড়াও প্রাণের হলুদে উচ্চমাত্রায় সীসার প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্তৃপক্ষ। আর খাবারে ফুড অ্যান্ড মাউথ ডিজিস ভাইরাস ও পোকামাকড় থাকায় কানাডা থেকে কনটেইনার ভর্তি পণ্য ফেরত পাঠানো হয়। প্রাণের খাবারে ইঁদুরের বিষ্ঠা খুঁজে পায় ইতালির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রাণের বিভিন্ন কারখানা যে পরিবেশ দূষণ করে সেটাও যমুনা টিভির রিপোর্টে তুলে ধরা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর